পবিত্র কোরআনের আলো-কোরআনের আয়াত রদ হয় সত্য বিকাশের জন্য

১০৩. ওয়ালাও আন্নাহুম আ-মানু- ওয়াত্তাক্বাও লামাছু-বাতুম মিন ই'নদিল্লা-হি খাইরুন; লাও কা-নু- ইয়া'লামু-ন।
১০৪. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযি-না আ-মানু- লা-তাক্বু-লু- রা-ই'না ওয়াক্বু-লুনযুরনা- ওয়াছমাউ'-; ওয়া লিলকা-ফিরি-না আ'যা-বুন আলীম।


১০৫. মা-ইয়াওয়াদ্দুল্লাযি-না কাফারু- মিন আহলিলকিতা-বি ওয়ালাল মুশরিকি-না আঁইয়্যুনায্যালা আ'লাইকুম মিন খাইরিম মির রাবি্বকুম; ওয়াল্লা-হু ইয়াখতাচ্ছু বিরাহ্মাতিহি- মাইয়্যাঁশা-উ; ওয়াল্লা-হু যুল ফাদ্বলিল আযীম।
১০৬. মা- নানছাখ মিন আ-ইয়াতিন আও নুনছি-হা না'তি বিখাইরিম মিনহা আও মিছলিহা-; আলাম তা'লাম আন্নাল্লা-হা আ'লা- কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর।
(সুরা বাকারা : আয়াত ১০৩-১০৬)

অনুবাদ
১০৩. তারা যদি ইমান আনত এবং দায়িত্বনিষ্ঠ হতো, তাহলে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম পুরস্কার পেত; যদি তারা এটা অনুধাবন করতে পারত!
১০৪. হে ইমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা নবীর উদ্দেশ্যে বলো না 'রায়েনা' বা আপনি আমাদের কথা শুনুন, বরং (তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য) বলো, 'উনযুরনা' বা আমাদের প্রতি লক্ষ করুন। তোমরা সর্বদা তাঁর কথা শুনবে, যারা তাঁর কথা অমান্য করে তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
১০৫. আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের বা সত্য অস্বীকারকারী তারা পছন্দ করে না যে আপনার কাছে আপনার প্রভুর কাছ থেকে উত্তম কিছু নাজিল হোক; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যাঁকে চান তাকেই তাঁর অনুগ্রহে বেছে নেন, আল্লাহ অত্যন্ত অনুগ্রহশীল।
১০৬. আমি যখন কোনো আয়াত বাতিল করে দিই অথবা ভুলিয়ে দিতে চাই তখন এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বা এর মতোই কোনো আয়াত এনে প্রতিস্থাপিত করি, আপনি কি জানেন না, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।

ব্যাখ্যা
১০৩ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতগুলোর ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানে বিভ্রান্তদের দুর্ভাগ্যের জন্য আক্ষেপ করা হয়েছে। ১০৪ নম্বর আয়াতে একটা নতুন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। এই আয়াতটির শানেনুজুল হিসেবে মা'আরেফুল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.)-এর কোনো কথা বুঝতে না পারলে মুসলমানরা বলতেন 'রায়েনা'। এর অর্থ আমাদের প্রতি মেহেরবানি করুন বা আমাদের কথা শুনুন। কিন্তু এই শব্দটি ইহুদিদের ভাষায় 'আহমক' অর্থে ব্যবহৃত হতো। সুযোগ পেয়ে তারা অবজ্ঞার উদ্দেশ্যে এ শব্দটি বলত। এই আয়াতে 'রায়েনা' শব্দের স্থলে 'উনযুরনা' বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে 'আমাদের কথা শুনুন' বলার চেয়ে 'আমাদের প্রতি লক্ষ করুন' বলা অধিকতর সমীহসূচক। ১০৫ নম্বর আয়াতে আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্য থেকে কাফেররা যে অজুহাত দেখাত যে নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর কেন নবুয়ত ও কোরআন নাজিল হলো, তাঁর চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি তো ছিল; এর জবাব দেওয়া হয়েছে। ১০৬ নম্বর আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রায়োগিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : 'ইহুদিরা মুসলমানদের বলত, তোমাদের কোরআনের কোনো কোনো আয়াত রহিত হয়ে যায়। যদি তা আল্লাহর কালামই হয়ে থাকে, তবে কেন রহিত হবে? এর জবাবে আয়াতটি নাজিল হয়। এখানে কোরআনের উৎকৃষ্টতা এবং জীবনঘনিষ্ঠতা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। কোরআন আল্লাহর অবিনশ্বর গ্রন্থ। তবে তা নাজিল হয়েছে মানুষের জীবনের জন্য। জীবন গতিশীল এবং বিকাশমুখী। তাই আল্লাহ তায়ালা কোরআনের কোনো কোনো আয়াত রহিত করে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অথবা এর চেয়েও অগ্রসর নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.