হজ ফ্লাইটে হ-য-ব-র-ল-সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগেই বাধা এসেছে নির্বিঘ্ন যাত্রায়। গত বুধবার বিমানের ভাড়া করা একটি উড়োজাহাজ যাত্রীদের ফেলে রেখে ওমানের রাজধানী মাসকট থেকে হঠাৎ ভেগে যাওয়ার পর সমস্যা আরো তীব্র হয়। হজযাত্রী পরিবহনে বিশৃঙ্খল অবস্থা হতে পারে- এমন আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল।


সবারই জানা ছিল বিমান কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং উড়োজাহাজের স্বল্পতার বিষয়টিও। সে কারণেই হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যাত্রী পরিবহনে থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করে দেওয়ার। কিন্তু সরকার সেদিকে কান দেয়নি। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দাবি অনুযায়ী থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করে দিলে হয়তো সমস্যাটি এতটা প্রকট আকার ধারণ করত না। এবার হজ গমনেচ্ছু এক লাখ ১২ হাজার ৫৭০ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র তিন হাজার ব্যালটি যাত্রী। বাকি এক লাখ ৯ হাজার ৫৭০ জনই যাচ্ছে হাবের মাধ্যমে। কিন্তু যাত্রী পরিবহনে সরকারি ব্যবস্থাপনার আধিক্য হওয়ার কারণে এ মুহূর্তে হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিমান তাদের ক্ষমতার বাইরে দায়িত্ব গ্রহণ করে নিজেদের ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের হয়রানির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভাড়া করা উড়োজাহাজটি হঠাৎ চলে যাওয়ার কারণ হিসেবেও বিমান কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা এবং অব্যবস্থাপনার প্রমাণ দেয়। একই কারণে দেশে আসার অপেক্ষায় শত শত যাত্রীকেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। যাঁদের প্রায় সবাই বিমানের খরচে হোটেলে অবস্থান করছেন এখন। ফলে বিমানযাত্রী পরিবহনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি বিমানকে আর্থিক লোকসানও গুনতে হচ্ছে। এর আগে বিমানের বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে লোকসান কমিয়ে আনার জন্য।
অথচ নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারলে সহজেই লোকসান কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। তার পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, তা বিচার্য। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে বিমানের সুনাম এমনিতেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তারপর যাত্রীদের এই দুরবস্থা তৈরি হওয়ার পর বাকি সুনামটুকুও যাই যাই করছে। সেই দুর্নাম থেকে উত্তরণ এবং হজযাত্রী ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ হ্রাসের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে এটা নিশ্চিত। তাই সরকারকে কালবিলম্ব না করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনে থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বিমানে আরোহণের উদ্দেশ্যে যেসব বিমানবন্দরে যাত্রীরা কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করছেন তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং বিদেশগামীদের যাওয়ার পথ সুগম করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশ গমনেচ্ছু এবং দেশে ফেরার প্রত্যাশায় থাকা যাত্রীদের অধিকাংশই শ্রমিক। তাদের ছুটি সীমিত কিংবা চাকরিস্থলে যোগদানেরও সময় কম। তা ছাড়া অনেক যাত্রী আছেন, যাঁরা জরুরি চিকিৎসার জন্যও বিদেশে গিয়েছেন কিংবা বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাঁদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে বিমানকে দ্রুত পরিবহন সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম থেকেই হজযাত্রী পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে সৌদি আরবে আবাসন সুবিধায়ও সংকট তৈরি হবে, যা প্রকারান্তরে সরকারের ওপরই বর্তাবে। তাই স্পর্শকাতর এ বিষয়টি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.