আয়কর মেলা

১৫ সেপ্টেম্বর আয়কর দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৬-২২ সেপ্টেম্বর ১৮টি বিভাগীয় ও জেলা সদরে আয়কর মেলার আয়োজন করেছে। জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেশের মানুষকে আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে করদাতার সংখ্যা ও করের পরিমাণ বৃদ্ধি করাই এই মেলার উদ্দেশ্য।


মেলায় করদাতাগণ সরাসরি যে সকল সুবিধা পাবেন তা হলো ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন জমা, আয়কর রিটার্নের ফরম পূরণে আয়কর কর্মকর্তাদের সহায়তা পাওয়া, নতুন করদাতাদের তাৎক্ষণিকভাবে টি.আই.এন সার্টিফিকেট প্রদান, রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট করদাতার করের পরিমাণ নিরূপণ, মহিলা করদাতা, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য পৃথক কাউন্টারের ব্যবস্থা, করদাতাদের আয়কর রিটার্ন ফরম সরবরাহ, ফরম পূরণের নির্দেশিকা, আয়কর সম্পর্র্কে নানা ধরনের তথ্য সরবরাহ ইত্যাদি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গৃহীত এই কার্যক্রম ২০০৮ সাল থেকে চলে আসছে এবং তা বেশ সুফল দিচ্ছে। এভাবে মেলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা ও প্রণোদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তার ফলে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে রাজস্ব আহরণ। বিগত কয়েক বছরে টার্গেটের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় তার প্রমাণ। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা সরকার অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। একটি রাষ্ট্রের সুশাসন যে সকল বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, পর্যাপ্ত আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং চাহিদা অনুযায়ী অর্থের যোগান নিশ্চিত হওয়া তার মধ্যে অন্যতম বলা যায় মুখ্য। দেশের আর্থিক ভিত মজবুত করার ক্ষেত্রে আয়করের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিল্প, বাণিজ্য ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যে অর্থ সামগ্রিক জাতীয় আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। এ ক্ষেত্রে আয়করের পরিধি বিস্তৃততর করতে পারলে তা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
আয়কর দিবস পালন ও বিস্তৃততর পরিসরে আয়কর মেলার আয়োজন যেন শুধু প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। আয়কর প্রদানের জন্য ব্যবহৃত ফরম আরও সহজ ও স্বল্পায়তন করা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া আয়কর নিরূপণ, তদারকি ও পরিশোধের ক্ষেত্রে একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায় মাঝে মধ্যেই। এ জন্য সহজ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে আয়কর ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। আয়কর মেলা এবং তৎপরবর্তী সময়ে ব্যাপকতর জনসম্পৃক্তির মাধ্যমে করদাতাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া যেমন জরুরী তেমনি অসৎ কর্মকর্তা-কমচারীদের অনৈতিক উপায়ে কর ফাঁকিবাজদের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তোলার পথও বন্ধ করতে হবে। আয়কর নীতিমালায় এসব সামগ্রিক দিক সুস্পষ্টভাবে সন্নিবেশিত করে সৎ ও জবাবদিহিতাপূর্ণ ‘আয়কর-সংস্কৃতি’ গড়ে তোলা গেলে আয়কর থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে এবং এর ফলে জাতীয় অর্থনীতির চাকাও অধিকতর সচল হবে বলে আশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.