শিক্ষকদের আন্দোলন-জরুরি ভিত্তিতে দাবি পূরণ হোক

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, শিক্ষা দিবস। অর্ধশত বছর আগে এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে সেনাশাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান গণবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।


সে সময়ে ছাত্রসমাজের সুস্পষ্ট দাবি ছিল_ গণমুখী, বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম। স্বাধীন বাংলাদেশে এসব দাবি আংশিক পূরণ হয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে এ লক্ষ্য বহুলাংশে অর্জিত হবে_ এমন প্রত্যাশা বেড়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই_ যুগোপযোগী, সর্বজনীন ও মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েমে শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রীদের উপযুক্ত শিক্ষাদানের প্রধান শর্ত অবশ্যই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ। এ জন্য আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে যথোপযুক্ত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান। অন্যথায় মেধাবীরা শিক্ষকতার পেশায় আসবে না। বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে সরকার নির্দিস্ট স্কেলে বেতন-ভাতা প্রদান করে। তবে শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকার যা দিচ্ছে তা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রারম্ভিক বেতনের পরিমাণ যেমন নামমাত্র, তেমনি নেই ইনক্রিমেন্ট সুবিধা। আশির দশকে মাসে একশ' টাকা বাড়ি ভাড়া নির্ধারিত হয়েছিল এবং এখনও সেটাই বহাল। শর্ত পূরণ হওয়ার পরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। চিকিৎসা ভাতা মাসে ১৫০ টাকা এবং দুটি উৎসব বোনাসের পরিমাণ এক মাসের মূল বেতনের অর্ধেক নির্ধারণকে শিক্ষকরা তাদের প্রতি চরম অবজ্ঞা হিসেবেই গণ্য করছেন। এ ধরনের আরও কিছু ইস্যুতে শিক্ষকদের ক্ষোভ অনেক দিনের এবং সম্প্রতি তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি জোটের ডাকা টানা এক সপ্তাহের ধর্মঘটে। শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন কমবেশি অভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। আগামীতে শিক্ষকরা অবিরাম ধর্মঘটসহ বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবেন_ এমন ঘোষণা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার কেন নীরব_ সে প্রশ্ন সঙ্গত। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজের রেটিং ভালো এবং শিক্ষামন্ত্রী দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন_ এটা সর্বমহলে স্বীকৃত। এ অবস্থায় লাখ লাখ শিক্ষকের মধ্যে কেন এত হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করবে_ সেটা বোধগম্য নয়। আমরা আশা করব, সরকার শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। আর পানি ঘোলা হওয়ার আগেই তাদের সঙ্গে সমঝোতায় উপনীত হবে। শিক্ষামন্ত্রী কয়েক দিনের মধ্যেই শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। এ বৈঠক ফলপ্রসূ হবে_ এটাই প্রত্যাশা। সামনে রয়েছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা। এটা জানা যে, শিক্ষকদের আন্দোলনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের দাবি মানতে হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি অপরিহার্য। বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াতে হলে অর্থের বিকল্প কিছু উৎসও ভাবতে হবে। বেসরকারি স্কুল-কলেজ পরিচালনার জন্য ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনাও জরুরি। অনেক প্রতিষ্ঠানেই অভিযোগ যে, শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করার পরিবর্তে কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের একটি অংশ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারের অনেক ভালো পদক্ষেপ থেকেও তাদের কারণে যথাযথ সুফল মিলছে না। স্কুল-কলেজ পরিচালনায় প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ও যোগ্য ব্যক্তিরা আসুন_ এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.