রাজধানীতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা- চারদিকে অবস্থান নিচ্ছে জেএমবি

রাজধানীর চারদিকে অবস্থান নিচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। উদ্দেশ্য রাজধানীতে বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। জেএমবির মূল আস্তানা এখন গুলিস্তান কেন্দ্রিক। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে এক জেএমবি সদস্য।


গ্রেফতারকৃত জঙ্গী নেতা জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী। পাশাপাশি বহুল আলোচিত জেএমবির কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য সালমান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এ জন্য রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা অবস্থান নিচ্ছে। জঙ্গীদের প্রধান টার্গেট গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকা। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতরের সহযোগিতায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত শনিবার রাতে অভিযানে নামে। অভিযানের ধারাবাহিকতায় রাত ১০টার দিকে গুলিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবির এহসার সদস্য বজলুল রহমান ওরফে মাওলানা বজলুল রহমান ওরফে মুজিবুর রহমান ওরফে মাওলানা শহিদ ওরফে মাওলানা বোরহান উদ্দিন (৩৪)। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার হয়।
সে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথী। ২০০২ সালে সে জেএমবিতে যোগ দেয়। জেএমবিতে যোগ দেয়ার পর থেকে সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেএমবির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিল। গত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জেএমবি। গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য সিরিজ বোমা হামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা এলাকায় সরাসরি অংশ নিয়ে ছিল। পরে সে পুলিশের হাতে সিরিজ বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতার হয়।
এ ছাড়া সে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থানায় জেএমবির কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও আইটি প্রধান স্বঘোষিত আমির রুহুল আমিন ওরফে সালমান হত্যা মামলার আসামি। সালমান হত্যায় নাচোল থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত ওই জেএমবি সদস্য অন্যতম আসামি এবং হত্যাকা-ের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী।
সম্প্রতি সে স্পর্শকাতর এবং চাঞ্চল্যকর ২টি মামলায়ই জামিনে বেরিয়ে যায়। জামিনে মুক্ত হয়েই আবার জেএমবির হয়ে সক্রিয় কার্যক্রম শুরু করে।
এর আগে চলতি বছরের ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রাজধানীর উত্তরা মডেল থানাধীন ১০ ও ১১ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোডের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে জেএমবির এহসার সদস্য শামসুল হুদা (২৫), গায়েরে এহসার সদস্য ফটিক ওরফে বাদশা ওরফে আব্দুল্লাহ (৪০), গায়েরে এহসার সদস্য বদরুল ওরফে বাদরুল ওরফে বাদল (২৮) ও সদস্য আবু বক্করকে (২৬)।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এহসার সদস্য শামসুল হুদা চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন আলিয়া মাদ্রাসার ১ম বর্ষের কামিল শ্রেণীর ছাত্র। সে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক বায়তুল মাল সম্পাদক। সে ২০০৬ সালে জেএমবিতে যোগদান করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেএমবির গুরুত্ব¡পূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিল সে। শামসুল হুদা জানায়, ৬ জন জেএমবি সদস্য রুহুল আমিন ওরফে সালমানকে নৃশংসভাবে জবাই করে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে অন্যত্র পুঁতে রাখে। স্থানীয় জেএমবি নেতাদের সঙ্গে কোন্দলের জের ধরেই রুহুল আমিনকে জবাই করে হত্যার সিদ্ধান্ত হয় বলে শামসুল হুদা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আরও ৩ আসামি গ্রেফতার হয়েছে।
এ ছাড়া চলতি বছরের ৫ মার্চ সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হামলার পলাতক আসামিসহ জেএমবির ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জেএমবি সদস্য আনোয়ার সিরিজ বোমা হামলা এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি।
শনিবার গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যও অকপটে জেএমবির কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য সালমান হত্যা এবং দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালানোর কথা স্বীকার করে। পাশাপাশি রাজধানীতে বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যেই সারাদেশ থেকে জেএমবি সদস্যদের ঢাকায় আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য বোরহান উদ্দিন।
ইতোপূর্বে ঠিক একই ধরনের তথ্য দিয়ে গেছেন, জেএমবির আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান। ২০১০ সালের ২৩ মে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ধনিয়া এলাকা থেকে জেএমবির আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরকে গ্রেফতার করে পুলিশের একটি বিশেষ টিম। উদ্ধার হয় আত্মঘাতী হামলা চালানোর তাজা গ্রেনেড, বিস্ফোরক, কোমরে গ্রেনেড রাখার বিশেষ বেল্ট, একটি বিদেশী পিস্তল, দুটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, জেএমবির সামরিক সদস্যদের তৈরি কিছু গুলি, গুলি তৈরির সরঞ্জাম, লেদ মেশিন, গ্রেনেড রাখার বিশেষ বেল্ট তৈরির উপকরণসহ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম। তিনি ১৯৭৭ সালে ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার আমির ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ছিলেন। ২০০৬ সালে সাইদুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে জেএমবির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই প্রথম গোয়েন্দাদের জানান, জেএমবির প্রায় সবাই জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সদস্য। ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যেই দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক তারা রাজধানীর আশপাশের অবস্থান নিচ্ছিলেন। গড়ে তুলছিলেন গোপন আস্তানা।

No comments

Powered by Blogger.