ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেছেন সাত বিচারপতি। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে আগামী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যেতে পারে বলে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে যে অভিমত ছিল,
পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেটি বহাল আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে খায়রুল হকের সঙ্গে বিচারপতি এস কে সিনহা একমত পোষণ করেছেন।
গতকাল রোববার দফায় দফায় বৈঠক শেষে রাত ১০টায় সাত বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেন। এর পরপরই রায়টি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রায়ে সই করে বেরিয়ে আসার পর বিচারপতি খায়রুল হক অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্য হচ্ছে, রায় নিয়ে কিছু বলা যায় না।’ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
রাতে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের মূল আদেশে কিছু বলা হয়নি। আইনজ্ঞরা বলছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার অর্থই হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়া। ১৯৯৬ সালে এই সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছিল।
৭৪৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এস কে সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো. ইমান আলী। এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক তাঁর লেখা ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়ে সই করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে বিচারপতি খায়রুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তিন বিচারপতি। তাঁরা হলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি, এস কে সিনহা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিপক্ষে মত দেন দুজন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও নাজমুন আরা সুলতানা। তাঁরা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানসম্মত, গণতান্ত্রিক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া বিচারপতি ইমান আলী আপিল নিষ্পত্তি করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দেন। তিনি মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ নয়, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করেনি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি অযথাযথভাবে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের কারণে এই ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং তার ফলে ২০০৭ সালে সংবিধানের বিচ্যুতি ঘটে।
এর আগে রায় চূড়ান্ত করার জন্য কয়েক দফায় আলোচনায় বসেন বিচারপতিরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ আলোচনা চলে।
গত বছরের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা-সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন, ১৯৯৬ (আইন-১: ১৯৯৬) এখন থেকে বাতিল ও সংবিধান-পরিপন্থী ঘোষণা করা হলো।

No comments

Powered by Blogger.