আবার সরব হচ্ছে ঢাকা by অনিকা ফারজানা

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করে রাজধানীতে ফিরে আসছেন মানুষজন। গতকাল শুক্রবার লঞ্চ, ট্রেন ও বাসে করে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানীতে ফিরে এসেছেন। বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় আজ শনিবার থেকে খোলা। কাল রোববার খুলবে সরকারি সব অফিস।


এ জন্য গতকাল রাজধানীমুখী জনস্রোতটা ছিল তীব্র। আজ তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বাড়ি যাওয়ার সময় তেমন দুর্ভোগ পোহাতে না হলেও ঢাকা ফেরার সময় নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে মানুষজনকে। ট্রেনে বগি ও টিকিটের সংকট ছিলই। ট্রেনের ছাদে উঠে, বৃষ্টিতে ভিজে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন।
এ ছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত চাপ সহ্য করে ঢাকায় টার্মিনালে পা দিয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দাবির মুখে পড়তে হচ্ছে। সুযোগ বুঝে বাড়তি ভাড়া হাঁকছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবচালকেরা। এমনকি লোকাল বাসে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সদরঘাট টার্মিনাল: ভোরে ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন রুট থেকে ফিরে আসা লঞ্চগুলো যাত্রীতে বোঝাই। সন্ধ্যায় যেসব লঞ্চ ঘাটে ভিড়বে, সেগুলোতে ফিরে আসা যাত্রীর সংখ্যা আরও আড়াই গুণ বাড়বে বলে জানালেন লঞ্চঘাট মালিক সমিতির সদস্য মো. রাশেদ।
কালাইয়া থেকে ফিরে আসা পোশাকশ্রমিক রাহাত হোসেন জানালেন, ‘শনিবারে অবশ্যই কাজে যেতে হবে, নইলে বেতন কাটা যাবে।’
তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে ঘাট টার্মিনালের বাইরে অটোরিকশার দামদর করছিলেন মো. ইউসুফ। সদরঘাট থেকে কমলাপুর যেতে চালক ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। ইউসুফ বলেন, এই দূরত্বে মিটারে ভাড়া ওঠে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা, আর যানজট থাকলে দেড় শ টাকার মতো। অতিরিক্ত এই ভাড়া দাবির বিষয়টি টার্মিনালে নিরাপত্তাকর্মীদের জানালে তারা অটোরিকশাচালকের দাবি মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী সাজিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন ভাড়ার গাড়ি দাম বেশি চাইবেই। কারণ লোকের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম। কেউ না কেউ ঠিকই বাসায় ফেরার তাগিদে ওই ভাড়া মিটিয়ে চলে যাবে। তাই এসব ভাড়ার গাড়ির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে লাভ হয় না।’
কমলাপুর স্টেশন: ভোরের দিকে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুর থেকে ট্রেনগুলোতে ফিরে আসা লোকের সংখ্যা ছিল আসনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। লোকাল ট্রেন ও কমিউটার ট্রেনগুলোতে বাদুড়ঝোলা হয়েই ফিরেছে লোকজন। তবে দুপুরের পর কমলাপুর রেলস্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেনগুলো প্রায় ফাঁকা ছিল।
টিকিট চেকার মো. রাশেদ জানান, সকালে মানুষজনের চাপ বেশি ছিল। কারণ দু-একটি ট্রেনে বগির সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। আর দুপুরের দিকে বেশির ভাগ ট্রেন থেকে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী নেমে যাওয়ায় কমলাপুর স্টেশনে এসে নামা যাত্রীদের সংখ্যা কম। কিন্তু ঈদের পর কাজে ফেরার এই চাপের সময় ট্রেনে বগি কমানো হয়েছে কেন, জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে মিরপুরে যাওয়ার জন্য অটোরিকশা খোঁজায় ব্যস্ত আরিফ হোসেন জানান, তিনি সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে রাজশাহী থেকে এসেছেন। মাত্র একটি টিকিট পেয়েছিলেন। টিকিটের আসনে স্ত্রী ও ছয় বছরের মেয়েকে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তবে ঢাকায় পৌঁছেও শান্তি নেই বলে অভিযোগ তাঁর। অটোরিকশাচালকেরা সুযোগ পেয়ে বাড়তি ভাড়া হাঁকছেন।
সায়েদাবাদ টার্মিনাল: দুপুরের দিকে টার্মিনালে গিয়ে জানা গেল, সকালে খুব বেশি ভিড় ছিল না। টার্মিনালের লোকজন জানালেন, আজ শনিবার বিকেলের পর থেকে ভিড় বাড়বে।
শ্যামলী কাউন্টারের মো. মুনীরের ভাষ্য, কয়েকটি স্থানে রাস্তা ভাঙা থাকায় গাড়ি ফিরতে অনেক সময় নিচ্ছে।
সিলেট থেকে ফেরা যাত্রী হুমায়ুন কবির বলেন, চার ঘণ্টার স্থানে প্রায় সাত ঘণ্টা লেগেছে। রাস্তায় একটা ট্রাক উল্টে থাকায় অনেক যানজট ছিল। তবে ছুটির শেষ দিনে ঢাকায় ফিরতে পেরে তিনি খুশি।

No comments

Powered by Blogger.