কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ জরুরি- ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে, বিশেষত সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয় ঋণ দেওয়ার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে ধরা পড়ছে সুবিধাভোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক অর্থ আত্মসাতের একাধিক ঘটনা। প্রথম আলোসহ কয়েকটি সংবাদপত্রে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়েছে।


বিশেষ করে, সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি কার্যত আত্মসাৎ করার ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। উদ্বেগজনক হলো, খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেই চিহ্নিত হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে জড়িত। এর পেছনে যেমন রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে, অন্যদিকে কাজ করেছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিলাষ। মাঝখান থেকে ব্যাংকের লোকসানের বোঝা বাড়ানোর পথটি সুগম হয়েছে।
বস্তুত, বর্তমান সরকার দায়িত্বভার নেওয়ার পর বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে দলীয় অনুগত ও সমর্থক লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাঁদের বেশির ভাগেরই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সম্পর্কে ন্যূনতম অভিজ্ঞতা নেই। পরিচালনা পর্ষদের এসব সদস্য ক্রমেই ব্যাংকের ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদে থাকা সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা দম্ভ করে বলে বেড়ান, এসব ব্যাংকে তাঁদের বসানোই হয়েছে সরকার-সমর্থকদের ঋণসুবিধা নিশ্চিত করতে। তাই নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে এসব ব্যাংককে যেমন ভরাডুবির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তেমনি গোটা আর্থিক খাত বিরাট ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের সরাসরি নিয়ন্ত্রক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েছে। এটা ঠিক যে রাজনৈতিক চাপের মুখে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অদক্ষতা ও ঔদাসীন্যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। অন্তত কিছু ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি বাড়ালে এবং শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতির এত অবনতি হতো না, বরং গোটা আর্থিক খাতের কাছেই সতর্কবার্তা যেত যে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ তৎপর রয়েছে।
তবে আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানেই বিভিন্ন ব্যাংকে বড় বড় অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। এর মানে হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারিতে সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু অনিয়ম উদ্ঘাটিত হওয়ার পর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তা শেষ পর্যন্ত নতুন অনিয়ম-দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিক থেকে কিছু কঠোর দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আর এই পদক্ষেপ গ্রহণে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট তৎপর না হলে আর্থিক খাতের বিপর্যয় রোধ করা খুব কঠিন হবে।

No comments

Powered by Blogger.