কাগতিয়া দরবারে যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক মনীষী by মোহাম্মদ আশেকুর রহমান

এ উপমহাদেশে যেসব আওলাদে রাসূল (সা.) ইসলাম প্রচারে তশরিফ এনেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হজরত শায়খ ছৈয়্যদ বখতেয়ার মাহী ছওয়ার (রহ.)। তিনি বাংলাদেশে ইসলামের প্রসারকে স্থায়ী ও বেগবান করতে বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করেন।


ইসলামের এ মহান প্রচারক আওলাদে পাকের একজন বংশধর হলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রাউজান উপজেলার কাগতিয়া গ্রামের মাইজপাড়া ছৈয়্যদ বাড়ি নিবাসী হজরত শায়খ ছৈয়্যদ লাল মোহাম্মদ কাতেব আল-আরাবী (রহ.)। তিনি রাউজানে ইসলাম আবাদ করেন এবং নিজের হাতে কোরআন শরীফ লিখে গ্রামে গ্রামে বিতরণ ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে হেরার জ্যোতি প্রজ্ব্বলিত করেন। তাঁরই বংশে কাগতিয়ার ঐতিহ্যবাহী ছৈয়্যদ বাড়ির ছৈয়্যদ পরিবারে ১৯২৩ সালে জন্মলাভ করেন কালজয়ী মনীষী কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ হজরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। বুজুর্গ পিতা তাঁর নাম রাখেন ছৈয়্যদ তফজ্জল আহমদ। এ মহান কালজয়ী মনীষী বাল্যকালে মা-বাবা হারিয়ে এতিম বেশে বড় হন এবং কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসায় ইল্মে জাহের তালাশ শুরু করেন এবং চট্টগ্রাম দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা হতে মোমতাজুল মোহাদ্দিসিনের সনদ লাভ করার মাধ্যমে একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে যোগদান করে পর্যায়ক্রমে অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে এ মনীষী ইল্মে জাহেরের পাশাপাশি তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ অলিয়ে কামেল, কুত্বুল এরশাদ, খাজায়ে বাঙ্গাল, হজরত শায়খ ছৈয়্যদ হাফেজ মুনির উদ্দীন নূরুল্লাহর (রহ.) কাছে তরিকস্ফতের দীক্ষা লাভ করে যোগ্য শায়খের যোগ্য মুরিদ হিসেবে তরিকস্ফতের খেলাফত লাভ করেন। শরিয়তের পাশাপাশি তরিকস্ফতের এশায়াত, তাবলিগ শুরু করেন। তখন সকলেই তাঁকে 'কাগতিয়ার বড় হুজুর' বলে আখ্যায়িত করেন।
তাসাউফের ময়দানে ধীরে ধীরে তিনি ফানাফিল্লাহ ও ফানা-ফির-রাসূল (সা.)-এর মকাম অর্জন করে মুসলিম জাতিকে সিরাতুল মোস্তাকিমের পথে অবিচল রাখার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন 'কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ' এবং যুবসমাজকে শান্তি, শৃঙ্খলা ও রাসূল (সা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত করার জন্য গঠন করেন 'মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ'। শুধু তাই নয়, এ মহান মনীষী পৃষ্ঠপোষণ করেছেন কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠা করেন আল-ফজল মুনিরী গাউছুল আজম জামেয়া সুনি্নয়া মাদ্রাসা, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম ও আল-ফজল মুনিরী গাউছুল আজম হিফজুল কোরআনের একাধিক বিভাগসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। এ মহান মনীষী ইসলামের হুকুম-আহকাম ও কোরআন-সুন্নাহর বাণী মুসলিমদের ঘরে ঘরে, হৃদয়ে হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদ, এলাকা, গ্রাম, প্রতিষ্ঠান, জেলা ও মহানগরভিত্তিক এশায়াত মাহফিল, সেমিনার, সম্মেলন ও গাউছুল আজম কনফারেন্স এবং দরবারভিত্তিক বার্ষিক ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), মে'রাজুন্নবী (সা.), ফাতেহায়ে এয়াজদাহম, পবিত্র রমজানে খতমে কোরআন মাহফিল, শবেবরাত ও সাপ্তাহিক তরিকস্ফত মাহফিল এবং আন্তর্জাতিকভাবে পবিত্র জশ্নে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ সবকিছুর পেছনে ছিল না নিজেকে পীর, শায়খ, দরবেশ বা সূফি হিসেবে প্রকাশ করার সামান্যতম আশা-আকাঙ্ক্ষা। শুধুই ছিল আল্লাহতায়ালা ও প্রিয় রাসূল (সা.)-এর সন্তুষ্টি, যার মূলধন হলো এখলাছ এবং চোখের পানি। আর সবকিছুর একমাত্র পাথেয় ছিল প্রিয় রাসূল (সা.)-এর পূর্ণ ভালোবাসা ও আদর্শের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ-অনুকরণ।
আগামী ৬ জুন ২০১১ ইং, সোমবার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ ময়দানে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের গাউছুল আজম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। ওই কনফারেন্সে সকল মুসলমান ভাইকে শরিক হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হলো।
 

No comments

Powered by Blogger.