অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে-নারী নির্যাতনের ঘটনা

যখন মহাসমারোহে দেশে বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে, তখন উপর্যুপরি নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। গত শনিবার রাতে বহিরাগত বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। রোববার বগুড়ার শেরপুরে দরিদ্র রিকশাচালক আবদুল জলিলের কলেজপড়ুয়া মেয়ে রেশমা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বখাটেদের উত্পাত সহ্য করতে না পেরে।
সোমবার কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে শান্তা আক্তার নামে ১১ বছরের এক নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়।
তিনটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন হলেও সমাজে নারীর অবস্থান যে কত নাজুক, তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ময়মনসিংহের বখাটেরা এতই ক্ষমতাশালী যে তারা প্রতিবাদী ছয় ছাত্রকেও মারধর করে। লাঞ্ছনাকারী তিনজনকে শনাক্ত করে থানায় অভিযোগ করা সত্ত্বেও কেউ গ্রেপ্তার না হওয়া রহস্যজনক। ছাত্রী-লাঞ্ছনার পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে প্রতিকার চাইলেও তাঁর মৌখিক আশ্বাস ছাড়া তাঁরা কিছু পাননি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ হওয়া ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানোর কারণ বখাটেদের একজনের বাবা সেখানে কর্মরত। স্বীকার করি, ছেলের অপরাধের জন্য বাবা দায়ী হতে পারেন না, কিন্তু বাবার খুঁটির জোরে যদি ছেলে এসব অপকর্ম করে, তাহলে এর দায়ও তিনি এড়াতে পারেন না। দুজন নিরাপত্তারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করেই দায়িত্ব শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় অপরাধীকে বাঁচানোর কৌশল হিসেবেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
শেরপুরের ঘটনাটির সঙ্গেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জড়িত। যে দুই উচ্ছৃঙ্খল তরুণ দীর্ঘদিন ধরে রেশমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল, তারা প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। বারবার তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে নালিশ করেও প্রতিকার পায়নি মেয়েটি। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ হত্যার দায় কীভাবে এড়াবে ওই প্রভাবশালী পরিবারের দুই বখাটে তরুণ। তাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকায় মিছিল হলেও থানা-পুলিশ নির্বিকার। মামলাটি যাতে প্রভাবশালীদের চাপে ধামাচাপা পড়ে না যায়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। আর কত মেয়ে এভাবে জীবন দেবে? আর কত বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদবে? রেশমাকে আত্মহত্যায় যারা প্ররোচনা দিয়েছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ইভ টিজিং, বাল্যবিবাহ ও ফতোয়াবাজির মতো সামাজিক অনাচারও।
নারী-লাঞ্ছনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে সমাজে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। সরকার নারীর জীবনমান উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে। সেসবের প্রয়োজনীয়তাও আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

No comments

Powered by Blogger.