শ্রমবাজারে অশনি সংকেত-শনির দশা কাটাতে হবে

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি সংগতই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারের এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতির জন্য নানা রকম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে। তবে সব কথার শেষ কথা হলো, বিদ্যমান পরিস্থিতি রেমিট্যান্স লাভের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর ফলে নানা রকম অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষতির দিকটিও ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে।


গত ২৮ এপ্রিল একটি সহযোগী দৈনিকে যে তথ্যচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে, তা আমাদের জন্য বড় ধরনের অশুভ বার্তা। বর্তমান বছরের প্রথম তিন মাসে সৌদি আরবে মাসে গড়ে এক হাজার বাংলাদেশি সে দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছেন। অথচ তিন বছর আগে মাসে ছয় থেকে সাত হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হতো দেশটিতে। এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, গত সোয়া তিন বছরে সৌদি আরবে গেছেন প্রায় ৩৪ হাজার শ্রমিক আর ফিরে এসেছেন প্রায় ৫০ হাজার।
গত দুই বছরে কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকের প্রবেশাধিকার নেই। মালয়েশিয়ার দরজাও বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিগত তিন বছরেও নতুন শ্রমবাজার সন্ধানের ক্ষেত্রে মেলেনি সুবার্তা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও এ যেন সিন্ধুর মাঝে বিন্দুর মতো। বিপুল কর্মহীনের এ দেশে সামাজিক সমস্যা-সংকট নিরসনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমবাজার শক্তিশালী করতে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করা হয়েছে, সরকারের দায়িত্বশীলদের এমন মন্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল অনেক। বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সৌদি আরবের দৃষ্টি বাংলাদেশের প্রতি ছিল অনেক বিস্তৃত। এখন তারা তা সংকুচিত করে নেপাল ও ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। শুধু জনশক্তি আমদানি কমানো নয়, সৌদি আরব বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজের অনুমতিপত্রও (আকামা) বদল করতে দিচ্ছে না। এর ফলে ছয়-সাত লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক সেখানে খুব বিপাকে পড়েছেন। লিবিয়ায় যে আসার আলো ফুটে উঠেছিল, তাও নিভে গেছে। লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এখনো সংকটের বৃত্তবন্দি। তা ছাড়া প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ১৬টি দেশের তালিকা করে উদ্যোগ নিলেও এরও কোনো সুফল মেলেনি।
অভিযোগ আছে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের সম্পর্কে বিভিন্ন দেশে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা রকম অপকর্ম করার এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ার অভিযোগ বারবার উত্থাপিত হলেও সরকার এ ব্যাপারে কী কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিয়েও আছে ধূম্রজাল। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদও বারবারই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনমতো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা কতটা কী নেওয়া হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। জরুরি কথা হলো, বর্তমান দুরবস্থাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে তোলার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিবিড় হস্তক্ষেপের পাশাপাশি দূরদর্শী পরিকল্পনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নতুন নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়াটিকে চলমান প্রচেষ্টা হিসেবে অব্যাহত রাখতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.