তিস্তা চুক্তিতে স্থবিরতা-সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে

দীর্ঘদিন আশা-নিরাশার মধ্যে থাকার পর এবার অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে যে তিস্তা চুক্তি আপাতত হচ্ছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সম্প্রতি দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে আপাতত এ চুক্তি না হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে বলে বিবিসি সূত্র থেকে জানা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় দিল্লিতে সাংবাদিকদের সামনে কড়া ভাষায় বলেছেন,


তিস্তা চুক্তি না হলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ধাক্কা খাবে। আলবত তাই। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত ও পানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা সমাধানের যে গতি সৃষ্টি হয়েছিল তা তিস্তা চুক্তি না হলে বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। এ চুক্তির ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের আগেই একটি সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গী হওয়া থেকেই শুধু বিরত থাকেননি, তিনি তিস্তা চুক্তিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বোঝাতে চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এবার এই তিস্তা চুক্তিতে স্থবিরতা সৃষ্টির পর স্বাভাবিকভাবেই ভারতের জন্য ট্রানজিট সুবিধা বাংলাদেশের জনগণ দিতে চাইবে না; কারণ বিষয়টি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট। এখানে আবেগ নয়, লেনদেনের প্রশ্নটিই মুখ্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা ভারতকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের তিস্তা চুক্তির দাবি কোনো অনুদানের দাবি নয়। এটি তিস্তা নদীর ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অধিকার। সুতরাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চুক্তি না করার অবস্থান আন্তনদী পানিবণ্টনবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসেছেন এক বছর পার হয়েছে মাত্র। এ সময়ের মধ্যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে বিশেষ কোনো সফলতা দেখাতে পারেননি। দিনে দিনে মমতা তথা তৃণমূলবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি আবার সোচ্চার হয়ে উঠছে। ফলে উগ্র জাতীয়তাবাদের নিদর্শন দেখিয়ে তিনি তাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চাইছেন, যা মোটেই যুক্তিসংগত রাজনীতি বলে মনে করা যায় না। অন্যদিকে তিনি খোলা চোখে দেখলেই অনুধাবন করতে পারবেন বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের যে নিদর্শন সৃষ্টি করেছে তাতে ভারত কতটা উপকৃত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিবাচক মনোভাবের কারণেই ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটা সুনিশ্চিত হয়েছে। এমন অবস্থায় এই তিস্তা চুক্তি না হওয়ার কারণে আবারও দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে শীতলতা নেমে আসতে পারে। আর তখন কোনো অপশক্তি তার সুযোগ নেওয়ারও চেষ্টা করতে পারে। সুতরাং এখনো সময় আছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার।

No comments

Powered by Blogger.