জেলা প্রশাসন একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না-বান্দরবানে বাতিল ইজারা পুনর্বহাল

বান্দরবানে বাতিল হওয়া রাবার ও হর্টিকালচারের ভূমি আবার গোপনে ইজারা দেওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক। এতে যে সেখানে বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমি ইজারা দেওয়া হয়েছিল।


কিন্তু অনেক ইজারাদার সেই ভূমিতে বাগান বা শিল্প কিছুই করেননি। দীর্ঘদিন ফেলে রেখেছেন। অর্থাত্ তাঁরা ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছেন, যে কারণে গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৫৯৩টি প্লটের ১৪ হাজার ৮২৫ একর ভূমির ইজারা বাতিল করা হয়।
বাতিলের তালিকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, রাজনীতিক, সাবেক সামরিক ও সিভিল কর্মকর্তাসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। সে সময় সরকারের এ সিদ্ধান্তটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, সরকার বাতিল ইজারা পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেয়নি বা এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে কোনো নির্দেশও দেয়নি। তাহলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কীভাবে ইজারা পুনর্বহাল করলেন? এই এখতিয়ারই বা তাকে কে দিয়েছে? পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫টি প্লটের ৩৭৫ একর জমির ইজারা পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৩০টি প্লটের ৭৫০ একর ভূমির ইজারার নথিপত্র পাওয়া গেছে। ১৫টি প্লটের ইজারা পুনর্বহাল করা হলে অফিসে ৩০টির নথিপত্র এল কীভাবে? ইজারা বাতিলের আদেশের অনুলিপি ভূমি মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার অফিসে পাঠানো হলেও পুনর্বহালের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে শুধু হেডম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
ইজারা পুনর্বহাল নিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিস যে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা খেলছে, তা স্পষ্ট। ইজারা পুনর্বহালের বিষয়ে তারা হেডম্যানদের সঙ্গে আলোচনারও প্রয়োজন বোধ করেননি। জেলা প্রশাসন অফিস জানিয়েছে, ১২৪টি প্লটের মালিক ইজারা পুনর্বহালের আবেদন করেছেন। ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশে। অতএব সে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাও করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বেআইনি হলে তা অবশ্যই বাতিল করতে হবে। ভূমির ইজারা নিয়ে তাদের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সংঘাত-সংঘর্ষের মূলেও ছিল ভূমিবিরোধ। স্থানীয় প্রশাসনের কাজ সেই বিরোধকে উসকে দেওয়া নয়, বরং সেখানে বসবাসকারী সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাতে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকে, সে চেষ্টাই তাদের চালাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.