ডিসিসির অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন-ঢাকার ফুটপাত-বাণিজ্য

রাজধানীর ফুটপাতগুলো দখল হয়ে যাওয়ার খবরটি নতুন নয়। নতুন নয়, সেই ফুটপাত কেন্দ্র করে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজির ঘটনাও। যে নতুন খবরটি নগরবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, তা হলো ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) এই অবৈধ ও অনৈতিক ফুটপাত-বাণিজ্যে নেমে পড়া।


মেয়রকে না জানিয়েই ডিসিসির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হকারদের কাছে ফুটপাত বরাদ্দ দিয়েছেন বলে শনিবার প্রকাশিত প্রথম আলোর খবরে জানা যায়।
যেখানে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, ডিসিসি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বারবার নোটিশ জারি করছে, সেখানে তাঁরা এ ধরনের বেআইনি কাজ করেন কীভাবে? রঙ্গ ভরা বঙ্গদেশে যে কিছুই অসম্ভব নয়, সেটিই প্রমাণ করলেন ডিসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। তাঁরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, যেহেতু ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে আছেন, সেহেতু তাঁদের বরাদ্দ দেওয়াই ভালো। নগরবাসীর জীবনে স্বস্তি আসে, এ রকম একটি পদক্ষেপ নিতে না পারলেও পদে পদে সমস্যা সৃষ্টিতে নগর কর্মকর্তাদের জুড়ি নেই।
একটি উন্নত মহানগরের আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা প্রয়োজন। অথচ ঢাকায় আছে মাত্র পাঁচ থেকে সাত শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে ফুটপাতের পরিমাণও অনেক কম। অস্থায়ী দোকানপাট ও নানা স্থাপনার কারণে ক্রমে তাও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ডিসিসি যদি হকারদের ফুটপাত বরাদ্দ দিতে থাকে, তাহলে পথচারীদের চলাচলের কোনো জায়গাই থাকবে না। অসাধু কর্মকর্তাদের এ অন্যায় বাণিজ্যে ডিসিসির তহবিলে কী পরিমাণ অর্থ জমা হবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট যে ভারী হবে, তাতে সন্দেহ নেই। ফাও কামাই করে নেবেন কথিত হকার্স সমিতির নেতারাও। মহানগরের ফুটপাত নিয়ে এর আগেও তেলেসমাতি কারবার কম হয়নি। প্রয়োজনীয় ফুটপাত না থাকলেও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বারবার সেই ফুটপাত সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
আরও অবাক করার বিষয় হলো, মেয়রকে না জানিয়েই মতলববাজেরা কাজটি সম্পন্ন করেছেন বা করার প্রক্রিয়ায় আছেন। জনগণের কাছে তাঁদের কোনো দায় নেই। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়র নিশ্চয়ই তাঁদের কাছে দায়বদ্ধ। তিনি ফুটপাত বরাদ্দদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন। এখন দেখার বিষয়, মেয়র সত্যি সত্যি তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন। ডিসিসি একদিকে ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশ দেবে, অন্যদিকে হকারদের কাছে ফুটপাত ভাড়া দেবে, এসব নীতি চলতে পারে না। যাঁরা এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি
ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.