হিমাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের বিকল্প নেই-রংপুরের আলুচাষিদের হাহাকার

বাম্পার আলু উত্পাদনের পর আলু নিয়ে চাষিদের বিড়ম্বনা একটি নিয়মিত ঘটনা। এমনকি কয়েক বছর আগে উত্পাদিত আলু বিক্রি বা হিমাগারে রাখতে না পেরে চাষি নিজের উত্পাদিত আলু স্তূপ করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন, এমন সংবাদও আমরা দেখেছি।


এবার রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার পর হিমাগারের অভাবে অন্য বছরের মতো চাষিরা তাঁদের আলু সংরক্ষণের জায়গা পাচ্ছেন না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, আলু উত্পাদিত হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন। অথচ রংপুরের ৩০টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র আড়াই লাখ মেট্রিক টন। কৃষকেরা পড়েছেন মহা বিপাকে—বাড়তি আলু কোথায় রাখবেন তাঁরা?
হিমাগারের মালিকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের হিমাগার আলুতে পূর্ণ হয়ে গেছে, আর আলু নেওয়ার সুযোগ তাঁদের নেই। দিন পনেরো আগেও সেখানে ৮৪ কেজি ওজনের এক বস্তা আলুর দাম ছিল ৭০০ টাকা। এক সপ্তাহ পর তা দাঁড়ায় ৬০০ টাকা, আর এখন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। এখনই সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করতে পারলে পচন ধরবে। আর কম মূল্যে বিক্রি করলে চাষিদের উত্পাদন-খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি চাষ করার জন্য তাঁরা যে ঋণ নেন, তাও শোধ করা সম্ভব হবে না। আগামী বছর এ কৃষকেরা আলুর চাষ করবেন কি না, তা নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হবে। অনেক চাষি আলু থেকে বিমুখ হয়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়বেন।
এ পরিস্থিতিতে আলুচাষিরা কোথায় যাবেন? আলু নিয়ে তাঁরা নেমে এসেছেন সড়কে—যদি এর মাধ্যমে সরকারের কাছে তাঁদের অবস্থার কথা তুলে ধরা যায়। চাষিদের পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করে আহত করা কোনো সমাধান নয়। সড়ক অবরোধের মধ্যে আলুচাষিদের যে হাহাকার লুকানো আছে, এর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে সরকারের উচিত আশু সমাধানের পথ বাতলে দেওয়া। আলু পচে যাওয়ার আগেই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলু আমাদের অন্যতম প্রধান খাদ্য। দাম কম ও সুস্বাদু বলে বেশির ভাগ মানুষ খাদ্য হিসেবে আলু পছন্দ করে। তা ছাড়া আলুর পুষ্টিমানও ভালো। তাই আলুচাষি ও হিমাগারের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং প্রয়োজনীয় জরিপ চালিয়ে হিমাগার বাড়ানোর জন্য অবিলম্বে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। আলুর বহুমুখী ব্যবহার বাড়লে সংরক্ষণ সমস্যা খানিকটা লাঘব হতে পারে। এ জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.