অভিমত ভিন্নমত

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর: আমাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, আরও আগেই যাওয়া উচিত ছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়নি চীন। কিন্তু কূটনৈতিক ক্ষেত্রে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই।


১৯৭৫ সালের পর থেকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হতে থাকে। ১৯৭৭ সালে চীনের আমন্ত্রণে তত্কালীন সামরিক প্রশাসক জিয়াউর রহমান দেশটি সফর করেন। তখনই দুই দেশ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কারিগরি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৭৮ সালের মার্চ মাসে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি জিয়ানিয়ান বাংলাদেশ সফর করেন। চীনের কোনো নেতার ওটাই ছিল প্রথম বাংলাদেশ সফর। তখন দুই দেশের মধ্যে আরও কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার চীন সফর করেন। পরবর্তীকালে জেনারেল এরশাদও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর বেশ জোর দেন। তিনি তাঁর নয় বছরের শাসনকালে পাঁচবার চীন সফর করেন। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চীন সফর করেন। মোটের ওপর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালোই এগিয়েছে। অবশ্য কিছু কারণে সামান্য মনোমালিন্যও হয়েছে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫ সালে তাইওয়ানকে বাংলাদেশে বাণিজ্য মিশন খোলার অনুমতি দিলে চীন ক্ষুব্ধ হয়। চীনের সঙ্গে ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডেপ-১) সার প্রকল্প বাতিল করা এবং জাপানের সঙ্গে চুক্তি করার কারণেও চীন নাখোশ হয়।
গত বছর জুলাই মাসে বেইজিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ২৮টি প্রকল্পের প্রস্তাব তুলে ধরে। চীন মাত্র পাঁচটিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর চীন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক চীন খুব ভালো চোখে দেখবে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশের সমর্থন চীন খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না। আঞ্চলিক কর্তৃত্ব নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। ভারতের সঙ্গে চীনের অরুণাচল প্রদেশ, আকসাই চীনসহ সীমান্ত-বিরোধ আছে। তিব্বতের দালাই লামাকে ভারতে আশ্রয়দানও চীনের অস্বস্তির একটি কারণ।
শুধু ভূখণ্ডগত নিরাপত্তা নয়, পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবেশগত নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে হবে। ভারতকে কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না, আবার চীনকেও অবহেলা করা যাবে না। বৈশ্বিক রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন একসময় যে ভূমিকা রেখেছিল, চীন এখন অনেকটা সে রকম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এ সময় চীন সফর খুবই প্রয়োজন ছিল।
পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে বন্দরসুবিধা স্থাপন এবং নেপাল ও তিব্বতের লাসার সঙ্গে সড়কপথ তৈরির পরিকল্পনা করছে চীন। মিয়ানমারের নৌঘাঁটিতে চীনের অবাধ প্রবেশ রয়েছে, তার একটি মনিটরিং স্টেশন রয়েছে কোকো দ্বীপে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। অবশ্য দুই দেশের বাণিজ্যঘাটতি ব্যাপক। বাণিজ্যঘাটতি কমানোর জন্য চীন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সাহায্য বাড়িয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক মুক্তবাজার অর্থনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ চীনে ৯৮.৮ বিলিয়ন ডলারের মালামাল রপ্তানি করেছে এবং ৮৪টি মালের ওপর ট্যারিফ বাধা সরিয়ে নিয়েছে। ২০০৭ সালে চীনের সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী ৩৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন, যাঁরা উচ্চপর্যায়ের ক্রেতা। চীনের ৫০০টি বড় কোম্পানির ১০টি থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন এবং তাঁরা ৫০ মিলিয়ন ডলারের মালামাল ক্রয় করেছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের এই সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই ভারত মেনে নিতে পারে না। তার পরও আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। গভীর বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞজনদের পরামর্শ নিতে হবে।
আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের মধ্য দিয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে এবং সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। এ সফর যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে এবং প্রাপ্তির চেয়ে প্রচার যেন বেশি না হয়।
মুহম্মদ মাছুম বিল্লাহ
মহাখালী, ঢাকা।

পিতৃত্ব ছুটির বিধান চাই
পরিবারে মায়ের ভূমিকা যেমন মুখ্য তেমনি বাবার ভূমিকাও ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। কিন্তু এদেশের কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্ব ছুটি প্রচলন থাকলেও পিতৃত্ব ছুটির চল নেই। আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা নামে পিতৃত্ব ছুটি স্বীকৃত। কোথাও প্যারেন্টাল ছুটি নামে, কোথাও পিতৃত্ব ছুটি হিসেবে। প্যারেন্টাল অর্থাত্ পিতৃত্ব-মাতৃত্ব ছুটি কানাডায় দশ সপ্তাহ থেকে পনের সপ্তাহ, যা পিতামাতা সুবিধাজনকভাবে নবজাতকের পরিচর্যার জন্য অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভোগ করে। ব্রাজিলে পিতৃত্ব ছুটি পাঁচ দিন, কলোম্বিয়ায় চার থেকে আট দিন। গুয়াতেমালা ও প্যারাগুয়েতে দ’ুদিন। সুইডেনে প্রতিটি শিশুর জন্য সরকার ষোল মাস প্যারেন্টাল ছুটি অনুমোদন করেছে যা সন্তানের পিতামাতা সুবিধাজনকভাবে ভাগ করে নিতে পারে। যুক্তরাজ্যে পিতৃত্বছুটি বেতনসহ দুই সপ্তাহ, বেলজিয়ামে দশ দিন। ফ্রান্সে এ ছুটি তিন দিন, তবে প্রয়োজনে অতিরিক্ত এগার দিন পাওয়ার বিধান আছে। হাঙ্গেরিতে পাঁচ দিন, ইতালিতে তের সপ্তাহ। জাতিসংঘের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ছুটি চার সপ্তাহ। এমনকি আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারেও ছয় দিন পিতৃত্ব ছুটির বিধান আছে।
পিতৃত্ব ছুটির লক্ষ্য শুধু নবজাতক শিশুর মাকে হাসপাতাল থেকে প্রত্যাবর্তনের পর সাম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানই এর বড় লক্ষ্য। শিশুর পরিচর্যায় পারস্পরিক অংশিদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিশুর বাবার জন্য এ ছুটির লক্ষ্য হচ্ছে মায়ের বিশ্রাম নিশ্চিত করা। পিতৃত্ব ছুটি পারিবারিক জীবনে জেন্ডার বৈষম্য দূর করে শ্রম বাজারে জেন্ডার সমতার সুফল বয়ে আনতে পারে।
এক সময় অভিভাবকেরা নবজাতকসহ আমাদের দেখা শুনা করেছেন। এখন আগের মতো একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যা করে আসছে। তাছাড়া বেশির ভাগ অভিভাবকই কাজে ব্যস্ত থাকেন। একমাত্র পিতৃত্ব ছুটিই পারে অভিভাবকদের অভাব দূর করে নবজাতকের মাকে নিশ্চিন্ত বিশ্রাম উপভোগের সুযোগ করে দিতে। এখন সময় হয়েছে বাংলাদেশে পিতৃত্ব ছুটি চালু করার সময় হয়েছে। আশা করি সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।
সালমা নাসরীন, ঢাকা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কী করে হবে
সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্ল্যান অব কানেকটিং পিপল’ ধারণাপত্র প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদকে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে। লক্ষ্য প্রশাসনের তৃণমূল পর্যায়ে দ্রুতগতির ইন্টরনেট ও টেলিযোগাযোগ-সুবিধা বিস্তৃত করা। এ ছাড়াও ইতিমধ্যে ই-হেলথ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কম্পিউটার, ইন্টানেট সংযোগ ও ওয়েবক্যাম পাঠানো হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আরও নানান পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে। সরকারের এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। তবে জনগণের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে এসব পরিকল্পনা কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়েও একটু ভাবা প্রয়োজন।
প্রথমত, এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদকে অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় আনা কতটা জরুরি—যখন রাজধানীসহ সব বড় শহরেই স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেটের সুবিধা অপর্যাপ্ত। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট দেখলেই বোঝা যায় ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্র। ইউনিয়ন পরিষদ এ ক্ষেত্রে কতটা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে? দ্বিতীয়ত, যাদের জন্য এসব উদ্যোগ, তারা কতটা প্রস্তুত? এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুর্নীতির কথাও বাদ দেওয়া যায় না। সরকার বিদ্যুত্-সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উত্পাদনের সামর্থ্য বিবেচনা না করেই বহু নতুন এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছিল। এ কারণে তীব্র বিদ্যুত্ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যা আজও বর্তমান। আসলে বিদ্যুত্-সংযোগের পেছনে ছিল ব্যবসা। অনেক লোক হঠাত্ খাম্বা (বিদ্যুতের খুঁটি) বানিয়ে নিজেরাই খাম্বার চেয়ে বড় হয়ে গিয়েছিলেন। সময়ের আবর্তনে তাঁরা এখন কঠিন সত্যের মুখোমুখি। ডিজিটাল প্রকল্পের পেছনেও এ রকম সরকারি অর্থের অপচয় যে হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রসর হোক সঠিক সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রথমত, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে উচ্চগতির ইন্টানেটের সংযোগ দেওয়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের খরচে তা করতে পারে, তাদের সে সামর্থ্য আছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকার বাইরে বিশেষ প্রযুক্তিশহর গড়ে তোলা। এসব প্রযুক্তিশহর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। তৃতীয়ত, প্রযুক্তির ওপর শুল্ক হ্রাস করা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে এগোনো বেশি ভালো।
সরকারি দল তার নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নেও ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে। যেমন, শত শত তোরণ, সোনা-রুপার উপহার নয়—নিজ এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কে কতটা ভূমিকা রাখবে—পদ-পদবি ও মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটাই বিবেচনা করে দেখা হবে। তাহলে হয়তোবা অলিতে-গলিতে তোরণ আর ডিজিটাল ব্যানারে শুভেচ্ছাবার্তার বদলে তথ্যপ্রযুক্তির প্রকৃত সুবিধা ভোগ করা যাবে। আমরা ডিজিটাল মোহের মধ্যে থাকতে চাই না, চাই না শুধু ডিজিটাল ব্যানারের বাংলাদেশ—চাই তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ স্বাবলম্বী বাংলাদেশ।
মো. আজহারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যানবাহনের সংখ্যা কমান
ঢাকার যানজট কমাতে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে:
১. একনাগাড়ে পাঁচ বছর নিয়মিত আয়কর পরিশোধ না করলে কেউ গাড়ি কিনতে পারবে না।
২. সিএনজির মূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে। সিএনজির দাম খুব কম হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে। তা ছাড়া একদিকে গ্যাসের অভাবে কলকারখানায় উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্য দিকে প্রায় পানির দামে সিএনজি বিক্রি হচ্ছে। এটা কি অর্থনৈতিক বিবেচনায় যুক্তিসংগত?
৫. তিন বছর নতুন সিএনজি স্টেশন স্থাপন বন্ধ রাখা উচিত। ঢাকার বাইরে একই এলাকায় প্রচুরসংখ্যক সিএনজি স্টেশন না রেখে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিলে যানজট কমবে। ৬. ব্যাংকগুলো আয়কর বিভাগের অনুমতি ছাড়া গাড়ির কেনার জন্য লোন দিতে পারবে না।
এই কাজগুলো করলে আমার ধারণা ঢাকার রাস্তায় যানজট কমবে এবং শ্রম-নিবিড় কলকারখানাগুলো বন্ধের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আসলাম পারভেজ
মিরপুর, ঢাকা।

রাজনীতিতে সমঝোতা কি সম্ভব
প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘রাজনীতিতে সমঝোতা কি আদৌ সম্ভব?’ লেখায় আনিসুল হক মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার মূল সমস্যাগুলো আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। দেশের বড় দুটি দলই তাদের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাই সর্বপ্রথম তাদের নিজেদের সংশোধান করে নিতে হবে।
এক. বিএনপিকে জামায়াতের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না এবং ‘দেশে জঙ্গি নেই’—এ কথা বলে তাদের বিস্তারের সুযোগ দেওয়া চলবে না; উভয় দল মিলে এদের দমন করতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডসহ সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে উভয় দলকে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে। নিজের দলের কেউ অভিযুক্ত হলেও তার পক্ষ নেওয়া যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শুধু ভোটের রাজনীতির জন্য স্বৈরাচারী এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়েছে। তাদের এ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
দুই. যাঁর যতটুকু সম্মান ও মর্যাদা, তাঁকে তা দিতে হবে। ইতিহাস কখনোই মুছে ফেলা যাবে না। ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান দুজনেরই স্থান রয়েছে। যাঁর জায়গায় তাঁকে রাখতে হবে। হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে। রাজনীতিবিদেরা নিজেরা শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে বেশি আগ্রহী। এক দল ক্ষমতায় গেলে অন্য দলের প্রয়াত নেতার নাম মুছে ফেলা জনগণ মোটেও ভালোভাবে গ্রহণ করে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের দ্বারা উভয় দলের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়।
তিন. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তখন সেই দলের অনুগতরা সব রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে, আর অন্য দলের হলে বঞ্চিত হবে—এই সংস্কৃতি বন্ধ করে সব ক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দলীয় লোকদের দখলবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি বরদাশত করা চলবে না।
চার. শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করার মানসিকতা ছাড়তে হবে। উভয় দলকে পরমত সহিষ্ণু হতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ মানুষ শুনতে চায় না; বিরক্ত হয়। জনগণের বাস্তব সমস্যা সমাধানে বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। ব্যক্তি ও দলীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থকে আন্তরিকভাবে প্রাধান্য দিতে পারলে সবাই মিলে অবশ্যই দেশটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
কাজী জোবায়েদ শিপলু
কোমারপুর, আদমদীঘি, বগুড়া।

স্বাধীন দেশে কী পেয়েছি?
একদিন এক শুভলগ্নে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা উপশহর কাপ্তাইয়ে প্রবেশ করেছিলাম। গভীর উপলব্ধি নিয়ে সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্যে স্বামী ও তিন সন্তানসহ ১৬টি বছর বেশ আনন্দেই কাটিয়েছিলাম। কিন্তু সেই নিরিবিলি সুখের জীবন ১৯৭১ সালে এলোমেলো করে দিল। তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণে কত মানুষ যে আত্মাহুতি দিল তার শেষ নেই।
আমার জীবনসঙ্গী বিদ্যুত্ প্রকৌশলী, কাপ্তাই বিদ্যুত্ প্রকল্পের ম্যানেজার আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শাহাদাত্বরণ করেন। তারপর স্বাধীন বাংলাদেশে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। প্রতিবছর মার্চ এলেই টেলিভিশনে দেখি নানা অনুষ্ঠান। পত্র-পত্রিকায় লেখা হয় অনেক কিছু। স্বাধীনতা দিবসে পালিত হয় নানা কর্মসূচি। সেদিন আমাদের বড় খুশির দিন। মার্চের প্রথম দিন থেকেই একটা রিনিঝিনি সুরে মনটা ছেয়ে যায়। তবে একই সঙ্গে মনটা কী এক বেদনায় কেঁদে ওঠে। যাঁরা স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন বুকে নিয়ে মাটির কোলে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা আজ কোথায়? স্বাধীন বাংলাদেশে কত গৌরবে ও শান্তিতে আমরা বাস করছি—এ স্বপ্ন নিয়ে মাটির বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন হয়তো।
তাই কি? সরকার কি আমাদের কথা চিন্তা করে? এই ৩৯ বছরের মধ্যে সরকার আমাদের কবে খোঁজ করেছে? খুবই সামান্য পেনশন ও কল্যাণ তহবিলের টাকা পেয়েছি ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। তারপর ১৯৯৪ সাল থেকে নতুন নিয়মে সামান্য কিছু টাকা মাসোহারা পেয়েছি। আজ তা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকায়। মাত্র ৪২ বছর বয়সে শত্রুর গুলিতে নিরীহ মানুষটা মারা গেলেন—তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা কী অবস্থায় দিন কাটাল, দেশের কোনো সরকার তাঁর খোঁজ রেখেছে? কী প্রতিদান দিয়েছে, কীভাবে পুরস্কৃত করেছে তাঁকে?
আমি এখন বৃদ্ধ। মাঝে ১৭ বছর চাকরি করেছি। ভাড়া করা বাড়িতে ছেলের সংসারে থাকি। এ দুর্মূল্যের দিনে এখন জীবন চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কাপ্তাই বিদ্যুত্ প্রকল্পের শহীদ ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী হয়ে ৩৯ বছর ধরে প্রত্যেক মাসের পুরো বিদ্যুত্ বিল আমি পাই পাই করে শোধ করেছি। এক মাসের জন্যও মাফ পাইনি।
সাধারণ মানুষের কাছে আমি অনেক সম্মান পেয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি। তাই তাদের যেন অমঙ্গল ও অকল্যাণ না হয়, আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা করি। তারা যেন দেশের সব দুর্যোগ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে, অশুভ চেতনাগুলোকে পদদলিত করে সম্মুখের পদযাত্রায় নির্দ্বিধায় অগ্রসর হতে পারে—এ কামনা করি।
মাহবুবা শামসুদ্দিন
ধানমন্ডি, ঢাকা।

সঠিক অবস্থানেই প্রথম আলো
‘শিবিরের পক্ষে লেখকের সাফাই’ শিরোনামে ৩ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত রুবেল দাসের প্রতিক্রিয়াটি পড়লাম। সেটি ছিল সোহরাব হাসানের লেখা। তিনি তাঁর লেখায় লেখক সোহরাব হাসানকে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু এটা তো সত্য যে ছাত্রলীগ দেশব্যাপী যে হত্যা ও নিপীড়নের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে, এর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে। টেন্ডারবাজিতে তারা অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর নৃশংসতা চালাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও সংঘাতের কারণ আধিপত্য বিস্তার। ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির প্রতিবাদে খোদ প্রধানমন্ত্রীও সংগঠনের সাংগঠনিক নেতৃত্বে ইস্তফা দিয়েছেন। তাতেও তাদের বোধোদয় হয়নি। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসী তত্পরতা চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলো না হয় ক্ষমতার দাপটে প্রতিহিংসার বশে প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কেন অন্ধ হবে? তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁর দলের লোকদের নিরাপত্তা দিতে না পারেন, তাহলে অন্যদের নিরাপত্তা দেবেন কীভাবে? রুবেল দাসের অবগতির জন্য বলছি, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব শুধু দলের লোকদের নিরাপত্তা দেওয়া নয়, বরং দেশের প্রত্যেকটি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াই তাঁর দায়িত্ব।
প্রথম আলোকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই তাদের নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার স্লোগানকে সামনে রেখে পত্রিকাটি জনগণের সঙ্গে সব সময়ই থেকেছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও থাকবে।
এম এ ইসলাম রাজু
দোহার, ঢাকা।

তামাক চাষের মোচ্ছব বন্ধ করুন
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে তামাক চাষ চলছে। বিশেষ করে, কক্সবাজারের চকরিয়া, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বান্দরবানের লামা প্রভৃতি উপজেলায় তামাক চাষের মহোৎসব চলছে। উত্তরবঙ্গে তামাক চাষের ব্যাপকতা কমতে থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলে তা বাড়ছে খুব দ্রুত। এর পেছনে কাজ করছে মুনাফালোভী তামাক উত্পাদনকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা। বিভিন্ন তামাক উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান কৃষকদের বেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে, বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করে তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। এটা শুধু পরিবেশই বিনষ্ট করছে না, জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে।
বেশির ভাগ তামাক চাষ করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনে। আর তামাকের চুল্লিতে ব্যবহূত হচ্ছে বনের কাঠ। এ কারণে বনের গাছ উজাড় হচ্ছে দ্রুত। শুধু বনেই নয়, তামাক চাষ হচ্ছে খরস্রোতা নদী মাতামুহুরীর তীর ও চরে। নদীটির মিঠাপানি হয়ে উঠছে বিষাক্ত। নদীর মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা দ্রুত কমছে। ফলে স্বাভাবিক ফসলের উত্পাদনও কমে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এ অঞ্চলের কৃষকেরা অনেকটা বিনা খরচেই তামাক চাষ করতে পারছেন। তাঁরা ধান কিংবা রবিশস্য ফলিয়ে যে লাভ করতেন, কম পরিশ্রমে এর চেয়ে বেশি লাভ করতে পারছেন তামাক চাষ করে। বন বিভাগ ও প্রশাসনের নমনীয় মনোভাব, কৃষি বিভাগের কার্যকর ভূমিকার অভাব স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে বেশি উদ্বুদ্ধ করছে।
দেশের সামগ্রিক কৃষি যেখানে নানা সমস্যায় জর্জরিত, সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই কৃষকদের এমন সহজ শর্তে টাকা-পয়সা, সার, বীজ সরবরাহ করতে দেখা যায় না। অথচ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত।
যেসব মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থের বিষয়টি অগ্রাহ্য করে কৃষকদের তামাক চাষের ‘নেশা’য় ফেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে যদি কোনো আইন থাকে, তবে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে—আইন না থাকলে আইন করতে হবে। আইন করে তামাকের চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তামাক চাষের অপকারিতা বোঝাতে জোর প্রচারণা চালাতে হবে।
রানা আব্বাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন
সম্প্রতি সংসদে ঘটে যাওয়া ফাইল ছোড়াছুড়ি, খিস্তিখেউড় দেখে মন খারাপ হলো। সাংসদদের আরও ভদ্র হওয়া উচিত। তাঁরা সংসদের গিয়ে বন্ধুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কথা বলেন। দুই দলই প্রতিপক্ষ নেতাকে অসম্মান করে কথা বলেন। এটা ঠিক নয়। আমরা চাই, সংসদ সদস্যরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করে কথা বলুন। আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তাঁদের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলন হওয়ার কথা সংসদে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হচ্ছে এর উল্টোটা।
আপনাদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে সংসদে গিয়ে মার্জিতভাবে কথা বলবেন। বিরোধিতা করতে হবে যুক্তিসংগতভাবে, মারমুখী হয়ে নয়। জাতীয় সংসদের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতেই হবে। সাংসদদের মনে রাখতে হবে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
সুমন কোড়াইয়া
লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা।

লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইল: obhimot@prothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.