ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী-সাঈদীর আইনজীবীরা গ্রামের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছেন

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষী আবদুল হালিম। তিনি বলেছেন, আইনজীবীরা প্রায় তিন-চার শ লোক নিয়ে পিরোজপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন।


হালিম (৫৫) গতকাল মঙ্গলবার সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এ অভিযোগ করেন। তিনি গতকাল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। পরে জেরায় আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাঁকে প্রশ্ন করেন, ১৯৮২ সালে পিরোজপুরের নলবুনিয়া গ্রামের আকলিমা খাতুনের করা চুরির মামলায় তিনি কি জামিন নিয়েছেন? সাক্ষী কিছু বলার জন্য ট্রাইব্যুনালের অনুমতি চান। অনুমতি দিলে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ও পিঠে এখনো কোপের দাগ আছে। প্রয়োজন হলে তিনি এই দাগ ট্রাইব্যুনালকে দেখাতে পারেন। ওই ঘটনায় তিনি মামলা করলে আকলিমা তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন।
হালিম এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দেখিয়ে বলেন, এই আইনজীবীরা প্রায় ৩০০-৪০০ লোক এবং সাত-আটটি গাড়ি নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছেন। ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে বসতে বলেন। পরে হালিম বলেন, আকলিমার মামলায় তিনি জামিন নিয়েছিলেন, সেটি মিথ্যা মামলা হওয়ায় আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে হালিম জবানবন্দি দেন। সাঈদী এ সময় কাঠগড়ায় বসা ছিলেন। জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, একাত্তরের ২ জুন তিনি বাড়ির সামনের রাস্তায় হইচই শুনে পথচারীদের কাছে প্রশ্ন করে জানতে পারেন, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের বাড়ির দিকে আসছে। এ খবর শুনে তিনি বাড়ির লোকজনকে নিয়ে আত্মগোপন করেন। দূর থেকে দেখতে পান সাঈদী, দানেশ মোল্লা, মোসলেম মাওলানাসহ কয়েকজন রাজাকার পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে তাঁদের বাড়িতে ঢুকছে। রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের বাড়ির মালামাল লুট করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা শঙ্করপাশা ইউনিয়নের খসরু মিয়া ও আমির খানের বাড়িতে আগুন দেয়। তিনি পরে জানতে পারেন, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা এরপর উমেদপুরের হিন্দুপাড়ায় গিয়ে অগ্নিসংযোগ এবং মানুষ হত্যা করে।
জবানবন্দি শেষ হলে হালিমকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ও মনজুর আহমেদ আনসারী। মিজানুল সাক্ষীর পেশা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, তিনি পল্লি চিকিৎসক, বৌডুবিবাজারে রোগী দেখেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের খুঁজে বের করার এবং পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার জন্য ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জেলা পরিষদ থেকে কোনো গণবিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল কি না, এ বিষয়ে তাঁর ধারণা নেই।
মিজানুলের এক প্রশ্নের জবাবে হালিম বলেন, দেলোয়ার শিকদার, পিতা-রসূল শিকদার পরিচয়ে কোনো রাজাকারকে তিনি চেনেন না।
পরে আইনজীবী মনজুরের প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, তাঁর ছোট ভাই আবদুস সালাম বাহাদুর জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) কেন্দ্রীয় নেতা এবং আরেক ভাই আবদুল করিম ব্যবসায়ী। এরপর মনজুর আইনগত মতামতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাক্ষীর ঘর আগুনে পোড়েনি। তার পরও তিনি সাঈদীর বিরুদ্ধে ঘর পোড়ানোর অভিযোগ এনে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় তাঁর মা ও অন্য দুই ভাই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। জবাবে সাক্ষী বলেন, এটি সত্য নয়। মনজুর আরও বলেন, সাক্ষী আওয়ামী লীগ করেন এবং দলের নির্দেশে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেন সাক্ষী।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেরা শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না থাকায় আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.