ইলিশ-সামান্য মুনাফায় অসামান্য ক্ষতি

থেকে ১৬ অক্টোবর মোট দশদিন ইলিশ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। শিকার নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনে আছে ইলিশ রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থ। বছরের এ সময়টিতে ইলিশ ডিম ছাড়ে। জেলেদের হাত থেকে বেঁচে ইলিশ যাতে নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে সে জন্যই ইলিশ শিকারে এই নিষেধাজ্ঞা। ইলিশ বাঙালির প্রিয় মাছ, এতই প্রিয় যে, যখন ইলিশের মৌসুম নয় তখন বাঙালি খাবারের পাতে, উৎসবে-আনন্দে ইলিশ চায়।


প্রিয় মাছ বলেই এ মাছের দিকে বাঙালির বিশেষ নজর থাকার কথা। ইলিশ যাতে নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে, পোনা মাছ যাতে বেড়ে ওঠার অবকাশ পায় তার জন্য মানুষের স্বাভাবিক প্রচেষ্টাও থাকার কথা। কিন্তু আদতে তেমন দেখা যায় না। ইলিশ শিকার যখন নিষিদ্ধ তখন রীতিমতো সর্বশক্তি নিয়োগ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হয়। স্থানে স্থানে ইলিশ ধরার জাল জব্দ করে, জেলেদের গ্রেফতার করে তবেই ইলিশ শিকার কিছুটা বন্ধ হয়। পোনা ইলিশ শিকার ঠেকাতেও বছরভর নানা উদ্যোগ নিতে হয়। কেননা বাজারে জাটকা নামে ছোট ইলিশ বিক্রিরও ব্যবস্থা আছে। সুস্বাদু ইলিশ খাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে যারা স্রেফ জাটকা খেতে চান তারা দুর্ভাগা তো বটেই। কিন্তু ডিমভরা ইলিশ যারা ধরেন তাদের ঠিক দুর্ভাগা আখ্যায়িত করা যায় না। কেননা খাদ্যরসিকরা বলেন, ডিমভরা ইলিশ ভীষণ সুস্বাদু। এমনকি ডিম আসার আগের ইলিশও স্বাদে অতুলনীয়। কিন্তু ইলিশ যখন ডিম ছেড়ে দেয় তখন এর স্বাদ কমতে থাকে। বাজারে তাই ডিমভরা বা ডিম হওয়ার আগের ইলিশের চাহিদা বেশি। ডিম দেওয়ার পর ইলিশের তেমন কদর থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। এ সময় ক্রেতা কমে, দামও কমে। কিন্তু এমন স্বাভাবিক নিয়মে দাম বা চাহিদা কমার ঘটনা নয়, লক্ষ্মীপুরে ঘটেছে অন্য ধরনের ঘটনা। যখন ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ তখনও সেখানকার স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ইলিশ শিকার করে মজুদ করেছে। নিষিদ্ধ অবস্থায় বাজারজাত করতে না পারলেও এখন সে ইলিশ বাজারে এনেছে তারা। লবণ ও বরফের সংকটে সে ইলিশ ঠিকমতো সংরক্ষিত হয়নি। ফলে ক্রেতারা সহজেই ইলিশ চিনতে পারছেন এবং কিনতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ অবস্থা ক্রেতাহীন হাটে ইলিশের পসরা নিয়ে বিপদে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। এতে অবশ্য খুশি হওয়ার কারণ নেই। কারণ যে ইলিশ মরার তা তো মরেই গেছে। তার ডিমের আর কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে অসৎ জেলে ও ইলিশ ব্যবসায়ীদের সচেতন করার উদ্যোগগুলোই এখন জরুরি। তাদের সামান্য মুনাফার লোভ অসামান্য সুযোগকে নষ্ট করে দিতে পারে যা
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.