স্যুরিয়ালিস্ট চলচ্চিত্রের সফল জনক by ইভা খান

মূলত এক ধরনের দ্বিধায় থাকলেও এটা যেমনি মানি যে সৃজনশীল লোকেরা সেই মানের শিল্প তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নেন। ঘন ঘন কাজে তাঁদের অনীহা। তাই বলে ১০ বছরে মাত্র দুটি ছবি উপহার পেয়ে দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগে_বাকি সময়টাতে উঁনি তাহলে কী করছেন? ২০০১ সালে মুক্তি পায় 'মুলহল্যান্ড ড্রাইভ'। এরপর পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে ২০০৬-এ 'ইনল্যান্ড এমপায়ার'। আর ২০১১-তে অতিবাহিত হতে যাচ্ছে আরো পাঁচ বছর। এখন পর্যন্ত নতুন কোনো ছবি মুক্তির নাম-গন্ধ নেই।


যাঁর কথা বলছি তিনি আর কেউ নন, ডেভিড কিথ লিঞ্চ। যাঁর ছবি লিনচিয়ান স্টাইল নামে খ্যাত কিংবা কেউ বলেন ডেভিড লিঞ্চ মুুভিজ বা ডেভিড লিনচ ফিল্মস। বলা হয়ে থাকে ডেভিড লিঞ্চই প্রথম জনপ্রিয় স্যুরিয়ালিস্ট চলচ্চিত্রের জনক। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া এ শিল্পী ৩০ বছর বয়সে করেন তাঁর প্রথম ছবি 'ইরেজার হেড', যা মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। আর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দ্বিতীয় ছবিতেই সাড়া ফেলে দেন লিঞ্চ_'এলিফেন্ট ম্যান'; মুক্তি পায় ১৯৮০-তে। ছবিটি বঙ্ অফিস হিট করে যেমনি, তেমনি মনোনীত হয় অস্কারের জন্যও। তবে জয় আর পরাজয় শব্দ দুটির সখ্য যেহেতু অনেক বেশি আর তারই ফাঁদে পড়েন লিঞ্চ। পরের ছবি ১৯৮৪-তে মুক্তি পাওয়া 'ডিউন'-এ মেলে সুপার ফ্লপের হতাশাজনক স্বাদ। কিন্তু ১৯৮৬ সাল তাঁর পুনর্জাগরণের বছর অর্থাৎ আবারও দর্শকহৃদয় জয় করে নেওয়ার বছর। ছবির নাম 'ব্লু ভেলভেট'। যৌনতা ও মানুষের অমানবিক রুচির এক অসাধারণ মিশ্রণ সে ছবি।
জয়, পরাজয় এবং পরিশেষে আবার জয়ের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে নিজের নামটি দৃঢ় করে নেন হলিউড রাজ্যে ব্লু ভেলভেট ছবির মাধ্যমে। এরপর মোড় ঘুরিয়ে অথব একই মোড়ের অন্য ঠিকানায় ঢুঁ মারেন লিঞ্চ কেলভিন ক্লেইনের বিজ্ঞাপন তৈরিতে। ১৯৯০ সালে আরেকটু ঘুরে মন দেন টিভি সিরিয়াল 'টুইন পিঙ্' তৈরিতে। এমনি ঘোরাঘুরি শেষে সাত বছর পর বানালেন চতুর্থ ছবি লস্ট হাইওয়ে। এরপর চার বছর পর মুলহল্যান্ড ড্রাইভ ও পরবর্তী সময়ে ইনল্যান্ড এমপায়ার ২০০৬-তে। তাঁর সব কাজই ছিল অনন্য।
তাঁর অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে অর্জন করেন তাদের দেশের তিনটি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। গার্ডিয়ান পত্রিকা তাঁকে বর্ণনা করেছেন এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক হিসেবে। আর অলম্যুভি পত্রিকা তাঁর পদবি দেয়_'দ্য রেনেসাঁম্যান অব মডার্ন আমেরিকান ফিল্ম মেকিং' হিসেবে। এ ছাড়া ৩৪ বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত অর্জন অস্কারে চারবার মনোনয়ন লাভ, যার মধ্যে তিনবার সেরা পরিচালক হিসেবে। চতুর্থ মনোনয়নটি সেরা চিত্রনাট্যের জন্য। ভেনিস ও কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরস্কার জিতে নেন তিনি।
একজন পরিচালকের কাছে প্রথম প্রত্যাশা কী? তিনি তাঁর ধারার নতুন নতুন ছবি মুক্তি দেবেন। এই তো। নতুন ছবি মুক্তি পেলে পরবর্তী দু-তিন বছর দর্শক তা নিয়ে মাতামাতি করে কাটিয়ে দিতে পারে। এরপর আবার নতুন ছবির প্রত্যাশা। কিন্তু ডেভিড লিঞ্চ যেন দর্শকদের বিমুখ করতেই বেশি আনন্দ পাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল তিনি যথেষ্টই ব্যস্ত জগতের আর তাবৎ গুরুত্বপূর্ণ কর্মে; যেমন পপব্যান্ড ডুরান ডুরানের কনসার্ট নিয়ে ডকুমেন্টারি বানানো, নাইট ক্লাব প্রতিষ্ঠা, দ্য ক্লিভল্যান্ড ছবিতে অভিনেতার ভূমিকায় কণ্ঠদান, বিভিন্ন শোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিতি এবং মহাঋষি মহেশ যোগিকে নিয়ে ডকুফিল্ম বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে কথাবার্তা বলাসহ এরকম হাজারো কিছু; শুধু তাঁর ধারার স্যুরিয়ালিজম কেন্দ্রিক নতুন ছবি বানানোর পরিকল্পনা ছাড়া। তবে সুখের কথা, নতুন ফিল্ম না হোক, তাঁর একক মিউজিক অ্যালবাম আসছে সামনের নভেম্বরে।
কিন্তু তাঁর এসব ছোটখাটো কাজ নিয়ে আমরা উল্লাস করতে চাই না। আমরা চাই নতুন ছবি। তবে দর্শকের চাপে পড়ে তিনি ভিয়েনা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে এ বছর অক্টোবরে তিনি ৭২ সেকেন্ডের নতুন একটি ছবির ট্রেলার অন্তত দেখাবেন এই ভিয়েনা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেই। দর্শক কি তা ভুলে গেছে? না প্রতীক্ষায় আছে ডেভিড লিঞ্চের নতুন ছবির?

No comments

Powered by Blogger.