আলী লড়ছেন এখনো

হাতে অদৃশ্য গ্লাভস। রিংটাও অদৃশ্য। দৃশ্যমান শুধু তাঁর লড়াই। মোহাম্মদ আলী এখনো লড়ছেন। একসময় লড়াইটা ছিল ফ্রেজিয়ার-ফোরম্যানদের সঙ্গে। পেশাদার ক্যারিয়ারের ৬১টি লড়াইয়ে ৫৬টিই জেতা আলীর লড়াই শেষ হয়নি এখনো। ৩৭টি লড়াই নকআউটে জেতা আলী এখনো প্রস্তুত সেই মারণঘুষিটা মারতে। অনেক দিন ধরেই আলীর প্রতিপক্ষের নাম পারকিনসন্স নামের এক ব্যাধি।


অবসরে গেছেন তিন দশক হয়ে গেল। কিন্তু পৃথিবীর প্রতিটি কোণে আলী নামে এখনো হূৎকম্প জাগে। বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচিত মুখটা তাঁরই। এদিক দিয়ে আলী হয়তো ছাড়িয়ে গেছেন পেলেকেও।
বহু দিন হয়ে গেল ক্যামেরা আর মানুষের কৌতূহলী দৃষ্টি থেকে নিজেকে যথাসম্ভব দূরে রাখেন। কিন্তু গতকাল আর আড়ালে থাকেননি। কাল যে ছিল এই বক্সিং কিংবদন্তির ৭০তম জন্মদিন। লুইসভিলের মোহাম্মদ আলী সেন্টারে পালন করা হয়েছে জন্মোৎসব। লাস ভেগাসে আগামী মাসে হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। সেখানে আরও অনেক তারকার সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন ফোরম্যান, কেন নর্টন, লিওন স্পিঙ্কস, রবার্তো ডুরানের মতো সাবেক মুষ্টিযোদ্ধারা।
উৎসবের বর্ণাঢ্য আলোয় অবশ্য আলী এখন অস্বস্তি বোধ করেন। একসময় সারা পৃথিবীর কৌতূহলের কেন্দ্রে ছিলেন। এখন চান আড়াল। সর্বশেষ তাঁকে দেখা গিয়েছিল সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী ও বন্ধু ফ্রেজিয়ারের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে। এরপর এক দিন খবর আসে, আলীকে নিতে হয়েছে হাসপাতালে। অনেকের বুক কেঁপে ওঠে শঙ্কায়। পরে অবশ্য তাঁর পরিবার থেকে আশ্বস্ত করা হয়, সমস্যা গুরুতর কিছু নয়।
রোজ রোববার তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান। এ ছাড়া বাকি দিনগুলো কাটে একেবারেই পারিবারিক গণ্ডিতে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল-নাশতা সেরে তাঁর প্রিয় আরামকেদারায় বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে নেন। এরপর নিজের লড়াইয়ের পুরোনো ভিডিওগুলো দেখে স্মৃতি হাতড়ান। দেখতে দেখতে কখনো অজান্তে একটা-দুটি ঘুষিও মেরে বসেন কাঁপা হাতে।
তাঁর সঙ্গে প্রায় ৩০ বছরের বন্ধুত্ব রেডিও ও টিভিব্যক্তিত্ব জন রামসের। তিনি বলেছেন, ‘সব সময়ই বলি, মোহাম্মদ আলীর লড়াই আমার চেয়ে বেশি দেখতে পছন্দ করে একজনই—ও নিজেই। ওর স্মৃতিশক্তি এখনো আমার চেয়ে অনেক ভালো, এখনো ও দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত। রসবোধও আগের মতোই।’
পারকিনসন্স রোগটা তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে বক্সিংয়ের কারণেই। মাথায় তো আর কম ঘুষি পড়েনি। আলী নিজেই একবার হিসাব করে বলেছিলেন, পুরো ক্যারিয়ারে ২৯ হাজার ঘুষি সহ্য করেছে তাঁর মাথা।
কিন্তু কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ নেই। ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করেন, আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। তাঁর বড় মেয়ে মরিয়ম আলী বলছিলেন, ‘তিনি আমাদের সব সময়ই বলেন, “এটাই ছিল আমার ভাগ্যলিখন। আমাকে সেটা মেনে নিতেই হবে। এ নিয়ে তোমরা দুঃখ কোরো না।” তিনি কখনোই নিজেকে দুর্ভাগা ভাবেন না। কখনোই দুঃখ করেন না তাঁর জীবনের এই পরিণতি নিয়ে।’
করবেন কেন? তিনি যে জাত লড়াকু। পারকিনসন্স নামের প্রতিপক্ষের কাছে বিনা লড়াইয়ে হার মানার লোকই নন আলী! ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.