মিথ্যা বলা অন্যায় by শিরিন বেলায়েত

পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই, যেখানে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বরং সব ধর্মেই মিথ্যা যে সবচেয়ে বড় পাপ তা বোঝানো হয়েছে। মিথ্যা হচ্ছে অকৃতজ্ঞতা, বিশ্বাসঘাতকতা, ছলনা, প্রতারণার মূলমন্ত্র। পৃথিবীতে যত অন্যায়-অবিচার হয়েছে সবকিছুর পেছনে কাজ করেছে মিথ্যা। শয়তান মানব হৃদয়ে মিথ্যার বিষ ঢালে, তাকে প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে। অর্থাৎ মিথ্যা মানুষকে পাপাচারের দিকে টেনে নেয়।


আর কোনো ব্যক্তি ক্রমাগত মিথ্যা বলা ও মিথ্যার পথ অন্বেষণ করতে থাকলে এক সময় আল্লাহর দরবারে তাকে মিথ্যুক লেখা হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, 'মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিসম্পাত।' তিনি আরও বলেন, 'আল্লাহতায়ালা মিথ্যাবাদীদের সুপথ দেখান না।' রাসূল (সা.) বলেছেন, 'সত্যবাদিতা মানুষকে সততার দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর সততা টেনে নিয়ে যায় জান্নাতের দিকে।' কোনো ব্যক্তি ক্রমাগত সত্য বলতে থাকলে এবং সত্যের পথ অন্বেষণ করতে থাকলে একসময় তাকে সিদ্দিক তথা পরম সত্যনিষ্ঠ বলে আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ করা হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'মুমিনের স্বভাবে সব রকম দোষ থাকা সম্ভব, কিন্তু মিথ্যা ও খেয়ানত থাকা সম্ভব নয়।' তিনি আরও বলেন, 'তোমরা কারও সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা খারাপ ধারণা জঘন্যতম মিথ্যাচার।' মুসনাদে আহমদের হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, 'মানুষকে হাসানোর জন্য যে মিথ্যা বলে তার সর্বনাশ হোক, তার সর্বনাশ হোক, তার সর্বনাশ হোক। মিথ্যার মধ্যে অধিকতর মারাত্মক হচ্ছে মিথ্যা শপথ। সূরা আল মুনাফিকুনাতে আল্লাহতায়ালা মিথ্যাকে মুনাফিকদের স্বভাব বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, 'মুনাফিকরা জেনেশুনে ও মিথ্যা শপথ করে।' রাসূল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তোমাকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করে তার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলা নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতা।' হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, 'কোনো বান্দা ক্রমাগত মিথ্যা বলতে থাকলে তার হৃদয়ে প্রথমে একটা কালো দাগ পড়ে, অতঃপর সেই দাগ বড় হতে হতে পুরো হৃদয়টা কালো হয়ে যায়। তখন আল্লাহর কাছে তাকে মিথ্যাবাদী লেখা হয়। প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা কখনও সুফল বয়ে আনে না। সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কল্যাণ নিহিত আছে এমন অবস্থা ছাড়া কোনো মুসলমানের কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলা উচিত নয়। প্রত্যেকের উচিত_ সত্য বলা, না হয় চুপ করে থাকা। উল্লেখ্য, কারও প্রাণ রক্ষা করা, দু'পক্ষের কলহ প্রশমিত করা এবং দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙন রোধ করার প্রয়োজনে মিথ্যা বলার অনুমতি আছে।

No comments

Powered by Blogger.