বিএনপি : গাজীপুর, টঙ্গী-মান্নান ও হাসানের ঐক্যের গান by শরীফ আহেমদ শামীম

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। টঙ্গী ও গাজীপুর সদর এলাকার বহু নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিনি প্রতিষ্ঠাতা। এরশাদের শাসনামলে এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর হাত ধরে গাজীপুরের বহু উন্নয়ন হয়েছে। '৯১ সালে তিনি নির্বাচন না করে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানকে সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করতে প্রচারণা চালান।


নির্বাচনে মান্নান ও বিএনপি বিজয়ী হলে অধ্যাপক মান্নান ধর্মপ্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। মন্ত্রী হওয়ার পর হাসান সরকারের অবদান ভুলে গিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন এম এ মান্নান। শুরু হয় কোন্দল। '৯৬ সালের নির্বাচনে হাসান সরকার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসান উল্লাহ মাস্টারের কাছে হেরে যান অধ্যাপক মান্নান। ২০০১ সালের নির্বাচনে গাজীপুর সদরে অধ্যাপক মান্নানকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে যোগ দেওয়া শ্রমিকনেতা হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিলে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে হাসান সরকারের সঙ্গে স্বতন্ত্র ভোটযুদ্ধে নেমে অধ্যাপক মান্নান হাসান সরকারের চেয়ে বেশি ভোট পেলেও দুজনই নির্বাচনে হেরে যান। নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহসান উল্লাহ মাস্টার। পরে দল ক্ষমতায় এলে বহিষ্কৃত হন অধ্যাপক এম এ মান্নান। এ সময় জেলায় দলের পুরো নিয়ন্ত্রণ হাসান সরকারের লোকজনের হাতে চলে এলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন মান্নানপন্থীরা। সরকারের শেষ সময়ে তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও সৃষ্টি হয় গ্রুপিং-কোন্দল। সেই থেকে অধ্যাপক মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকারের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ লেগে ছিল। বিএনপির গত জাতীয় কাউন্সিলের আগে গাজীপুর সদর উপজেলা, গাজীপুর পৌর ও জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। সম্প্রতি এক যুগের দ্বন্দ্ব-কোন্দলের অবসান ঘটিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন এ দুই নেতা। এ কোন্দল নিরসনের পেছনে রয়েছে নবগঠিত জেলা কমিটির ভূমিকা। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ঢাকায় নির্বাচনের মাধ্যমে কালীগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হককে সভাপতি এবং কালিয়াকৈরের বিএনপি নেতা কাজী সায়েদুল আলম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। প্রায় তিন মাস আগে ঘোষণা করা হয় জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটিতে দুই গ্রুপের সব নেতাই স্থান পেয়েছেন। আর এতেই কমে আসতে শুরু করে বিরোধ। নতুন কমিটিতে স্থান পেয়ে অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম বলেন, গাজীপুর সদর আসনে বিএনপি এখন আগের তুলনায় অনেক সংগঠিত। আগে পৃথক কর্মসূচি পালন করা হলেও বর্তমানে সব আন্দোলন-কর্মসূচি পালন হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে। খালেদা জিয়ার চাঁপাইনবাবগঞ্জের লংমার্চে গজীপুরের নেতা-কর্মীরা যৌথভাবে অংশ নিয়েছেন। লোকজন আওয়ামী লীগের নানা কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে বিএনপির প্রতি ঝুঁকছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসের জবাব দিতে মানুষ ভবিষ্যতে বিএনপিকে ভোট দেবে। হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুরের উন্নয়ন বলতে যা বোঝায়, তার সবই হয়েছে বিএনপি আমলে। '৯১ সালে ক্ষমতায় এসে টঙ্গী ও কোনাবাড়ী বিসিকে ব্যাপক শিল্পকরারখানা গড়ে তোলার কাজ শুরু করে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে পুরো জেলায়ই শুরু হয় শিল্পায়ন। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গাজীপুরে একটি কারখানা স্থাপন বা চালু করতে পারেনি। বরং গ্যাসের অভাবে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এবং গাছা ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তা বিএনপি আমলে তৈরি করা। গত তিন বছরে তারা একটি রাস্তার সংস্কার করতে পারেনি। নতুন রাস্তা তো তৈরি করতেই পারেনি লুটপাটের কারণে। একই কারণে সংস্কার না হওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ বছর ১০ দিন বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এটি সরকারের চরম ব্যর্থতা। তিনি বলেন, গাজীপুরে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও করেছে বিএনপি। টঙ্গীর উড়াল সেতুর ৬০ ভাগ কাজ বিএনপি করে গেছে। আওয়ামী লীগ উদ্বোধন করে সে উড়াল সেতুর নাম আহসান উল্লাহ মাস্টারের নামে রেখেছে। বিএনপি আমলে এরশাদনগর (বাস্তুহারা) ছাড়া, টঙ্গী ছিল শান্তির শহর। এখন মাদকে ভাসছে টঙ্গী। সন্ধ্যার পর রাস্তায় রাস্তায় ছিনতাই হচ্ছে। খুন-ধর্ষণ বেড়েছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নীরব রয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও এমপির নিকটজনরাই সন্ত্রাসীদের লালন ও মাদক ব্যবসা করছে। তাই ভবিষ্যতে মানুষ বিএনপিকেই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে। তিনি স্বীকার করেন, বিএনপির গত সময়ের ক্ষমতায় থাকাকালে গাজীপুরে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ কারণে দলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.