সময়মতো মহাজোট ছাড়া না ছাড়ার ঘোষণা :এরশাদ by রাজীব আহাম্মদ

লংমার্চের গাড়িবহর থেকেতিস্তা চুক্তি ও পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে জাতীয় পার্টি লংমার্চ করলেও নির্বাচনী প্রচারই মুখ্য হয়ে থাকল। মঙ্গলবার সকালে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে তিস্তা অভিমুখে দু'দিনের লংমার্চর্ শুরু হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তির দাবিতে লংমার্চ করা হলেও প্রথম দিনে ১৮টি পথসভার প্রতিটিই নির্বাচনী সভায় রূপ পায়।


এসব পথসভা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কড়া সমালোচনা করে আরেকবার জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি এ সময় এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণাও দেন। পথসভাগুলো থেকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন এরশাদ। মহাজোট ছাড়ারও ইঙ্গিত ছিল তার বক্তৃতায়।মঙ্গলবার বনানীর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে রংপুরে তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে লংমার্চের গাড়িবহর যাত্রা শুরু করে। দলটির দাবি, বহরে দেড় হাজার গাড়ি অংশ নেয়। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দলীয়ভাবে বহরে ৭৮১টি গাড়ি রয়েছে। পথে আরও অনেক গাড়ি বহরের সঙ্গে যোগ হয়েছে। কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর, জেলা জাতীয় পার্টি ছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বহরে যোগ দেন। রাত সাড়ে ৯টায় রংপুর পেঁৗছায় লংমার্চের গাড়িবহর। রংপুর শহরে নানা রঙের তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়ে লংমার্চকে স্বাগত জানান স্থানীয় নেতারা।ঢাকার আশুলিয়ায়, সাভার, বাইপাইলের বাগাবাড়ী, গাজীপুরের জিরানিবাজার, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর বাজার বাইপাস, নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড, এলেঙ্গা, কালিহাতী বাজার, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, বগুড়ার শেরপুর, মাঝিড়া, সাতমাথা, মহাস্থানগড় মাজার ও মোকামতলায় পথসভা করে জাতীয় পার্টি।ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করেন এরশাদ। আশুলিয়ার পথসভায় তিনি বলেন, তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। সরকারকে আমাদের প্রশ্ন কোন চুক্তি হলো না? জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারলে তিস্তা চুক্তি করবে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের পথসভায় এরশাদ বলেন, ১৯৯০ সালের ৫ আগস্ট তিস্তা ব্যারাজ করেছিলাম। আশা ছিল পরবর্তী সরকারগুলো ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি করবে। গত ২২ বছরে কোনো সরকার এ চুক্তি করতে পারেনি। আগামী দুই বছরেও সরকার তিস্তা চুক্তি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।এরশাদ বিভিন্ন পথসভায় ভারতকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা গরিব দেশ, আমাদের প্রতি অন্যায় অবিচার করবেন না। তিনি বাইপালের পথসভায় বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, আমাদের মারবেন না। উত্তরবঙ্গকে বাঁচাতে আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই।লংমার্চের পথসভাগুলোতে এরশাদের বক্তৃতার বেশিরভাগ জুড়েই ছিল আগামী সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক। প্রতিটি পথসভা থেকে তিনি আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জন্য ভোটপ্রার্থনা করেন। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার পথসভায় বক্তৃতায় মহাজোট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে সভায় উপস্থিতদের উদ্দেশ করে তিনি প্রশ্ন করেন, আপনারা কি চান মহাজোট থেকে বের হয়ে আসি? জবাবে উপস্থিত জনতা, হ্যাঁ হ্যাঁ বলে চিৎকার করলে, এরশাদ তাদের উদ্দেশে বলেন, মহাজোট ছাড়া না ছাড়ার ঘোষণা দেব সময় মতো। আমাদের ক্ষমতায় যেতে হবে। আমাকে সময় দিন।আগামী নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান এরশাদ। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পথসভায় এরশাদ জানান, ২০০ আসনের জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। আরও ১০০ আসনে যোগ্য প্রার্থীর প্রয়োজন। এরপরেই একক নির্বাচনের ঘোষণা আসবে।প্রতিটি পথসভাতেই প্রধান দুই দলের কড়া সমালোচনা করেন এরশাদ। দুই দলকে দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে দাবি করেন তিনি। কালিয়াকৈরের পথসভায় এরশাদ বলেন, একে অন্যের মুখ দেখে না। তারা ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত। শেষবারের মতো জাতীয় পার্টিকে সুযোগ দিন। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারলে দ্রব্যমূল্য কমানোর অঙ্গীকার করেন এরশাদ। আজ বুধবার তিস্তা ব্যারাজ হেলিপ্যাড মাঠে জনসভার মধ্য দিয়ে শেষ হবে দু'দিনের তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ। মঙ্গলবার রংপুরে নিজ বাসভবন 'পল্লী ভবনে' রাতযাপন করেন এরশাদ। বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরবেন তিনি।লংমার্চে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন বাবুল, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এম এ মান্নান, সুনীল শুভ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ফয়সাল আহমেদ চিশতি প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.