নির্বাচন কমিশন গঠন-সব পক্ষ আরও দায়িত্বশীল হোক

র্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয় বলে বিবেচিত হয়েছে। সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু তা না করে তিনি দেশের প্রতিনিধিত্বশীল ২৩টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে আহ্বান করেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের অভিমত জানতে চান।


আশার কথা, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সকলেই রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশ নিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে মতামত জানিয়েছে। তবে বিএনপিসহ কিছু দল মনে করেছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কথা হওয়া উচিত। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলকে একটি সমঝোতামূলক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে, পরস্পরের মধ্যে সংলাপ ও কথাবার্তা বলতে হবে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির নতুন উদ্যোগও অনেকে প্রত্যাশা করেছেন। সেসব নিশ্চয় সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন গঠন রাষ্ট্রপতির মুখ্য এজেন্ডা। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অতিদ্রুত নতুন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে হবে। ফলে আগে তত্ত্বাবধায়ক পরে নির্বাচন কমিশন_ বিরোধী দলের এমন দাবিকে সুচিন্তিত বলা যাবে না। বরং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন তা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটির প্রস্তাব দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবটি অনেকের মনঃপূত হয়েছে। কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতির তরফে কিছু নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নামের তালিকায় বিরোধী দলের পছন্দও যুক্ত হওয়া দরকার। বিরোধী দলেরও খোলামনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, সার্চ কমিটি কীভাবে কাজ করছে, কাদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দানের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে তা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা দরকার। এতে সকল পক্ষ যেমন তাদের মতামত জানানোর সুযোগ যেমন পাবে, তেমনি কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াও স্বচ্ছতার সঙ্গে এগোতে পারবে। দেশে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। কমিশন যাতে কোনো রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাবের তোয়াক্কা না করে তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা দরকার সর্বাগ্রে। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধান অনুসারে পূর্ণাঙ্গ আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে অনেক রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবেও আইন প্রণয়নের কথা আছে। তবে আশু প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেও সার্চ কমিটি গঠন করতে পারে। আমরা মনে করি, একটি পূর্ণাঙ্গ আইন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অতীতে নির্বাচন কমিশন নিয়ে যেসব তিক্ত বিতর্ক হয়েছে তা শুধু নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োজিত হননি বলে নয়, আইন সঙ্গতভাবে কমিশনারদের নিয়োগ করা হয়েছে কি-না তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছে। স্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ আইন থাকলে ভবিষ্যতের জন্য তা সহায়ক হতে পারে। সরকার যদি আইন প্রণয়ন করার পর সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে, তবে তা প্রশংসিত হবে। শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করেও সার্চ কমিটির কাজ শুরু করা যেতে পারে। তবে সার্চ কমিটির কাজ পরিচালনা, নাম নির্বাচনের প্রক্রিয়াগুলো যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে হওয়া উচিত। সরকারের বিভিন্ন দফতর এ প্রক্রিয়াগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকবে। ফলে তাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত। রাষ্ট্রপতি যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন তার সফলতা নির্ভর করছে সুচারুরূপে এ প্রক্রিয়াগুলো কার্যকর হওয়ার ওপর। বিরোধী দলকেও দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকলেই আশা করে, সরকার ও বিরোধী দলের সংযমী ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াটি সাফল্য লাভ করবে।

No comments

Powered by Blogger.