ইরানে নিষেধাজ্ঞা তেল সরবরাহে প্রভাব ফেলবে না

মকাল ডেস্ক ইরানের ওপর তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে দেশটির সহকারী জ্বালানিমন্ত্রী ডেনিয়েল পুনেমান বলেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে চাহিদা পূরণের মতো তেল সরবরাহকারী রয়েছে। তিনি বলেন, এটা বিশ্ববাজার এবং এখানে একজনের শূন্যস্থান অন্যজন পূরণ করবে।


উল্লেখ্য, ইরানের ওপর তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং তেলে চাহিদা পূরণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এ মন্তব্য করল। পুনেমান বলেন, আফ্রিকা এবং আমেরিকার তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তেল সরবরাহে বড় ধরনের ভূমিকা পালনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এদিকে, বিশ্ববাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবকে সতর্ক করেছে ইরান। গতকাল মঙ্গলবার তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটতি মেটাতে যদি সৌদি আরব তেল উৎপাদন বাড়ায় তবে একে তারা বন্ধুসুলভ আচরণ মনে করবে না। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি আকবর সালেহি আরবি ভাষার আল আহরাম টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইরানের তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের তেল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রস্তাব পুনরায় বিবেচনা করতে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি সৌদি তেলমন্ত্রী আলি আল নাইমির সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এটি কোনো বন্ধুসুলভ সংকেত নয়। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা একটি সমষ্টিগত বিষয়। ইরান এর অন্যতম অংশীদার। খবর : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএনের।সোমবার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি তেলমন্ত্রী আলি আল নাইমি জানান, বিশ্বে তেলের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করা হবে। ইরানকে বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির অপরিশোধিত তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে একমত হয়েছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ না বাড়াতে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে সতর্ক করে ইরান। পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তেল সরবরাহের একমাত্র পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে দেশটি।ইরানের ওই হুমকি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিল সৌদি আরব। ইরানের হুমকিতে সন্দেহ প্রকাশ করে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব।নিষেধাজ্ঞার কারণে বা যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে ইরানের তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ইতিমধ্যে ব্রেন্ট নির্ধারিত ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের মূল্য ১১১ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশ।ইরানের অনুপস্থিতিতে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উৎপাদন বাড়াবে সৌদি আরব। তারা বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য ১০০ ডলারে ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন নাইমি। তিনি বলেছেন, হুমকি অনুযায়ী ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলেও বিশ্বসম্প্রদায় ইরানের এ পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না। কারণ তাতে বিশ্ববাজারে তেলের প্রধান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে সারা বিশ্বেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, হরমুজ প্রণালি বেশি বন্ধ করে রাখা যাবে না। বিশ্ব সম্প্রদায় এটি সমর্থন করবে না। ইরানের হুমকিগুলো আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না বা তেলের মূল্যও কমাবে না বলেও উল্লেখ করেন নাইমি।তিনি জানিয়েছেন, সৌদি আরব 'খুব দ্রুতই' দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করবে। নাইমির বক্তব্যে পরিষ্কার, হরমুজ প্রণালি বন্ধে ইরানের হুমকি কানে তুলছে না সৌদি আরব।'আমাদের ইচ্ছা ও আশা, আমরা তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারব আর তা ১০০ ডলারের মধ্যেই ধরে রাখতে পারব বলেন সৌদি তেলমন্ত্রী।'

No comments

Powered by Blogger.