বিলেতফেরত লাল জমিন

লতি বছরের ১৯ মে প্রথম মঞ্চস্থ হয় শূন্যন থিয়েটারের প্রথম প্রযোজনা 'লাল জমিন'। সম্প্রতি লন্ডনে নাটকটির তিনটি মঞ্চায়ন হয়েছে। এ নাটক নিয়ে লন্ডন যাত্রার গল্প বলেছেন নাটকটির নির্দেশক সুদীপ চক্রবর্তী। আমরা 'লাল জমিন' নিয়ে তিন সদস্যের একটি দল লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হই ১ অক্টোবর।


আমি ছাড়াও এ দলে ছিলেন অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী ও জুলফিকার চঞ্চল। 'লাল জমিন' আমার ১৯তম নির্দেশনা। আমার প্রথম নির্দেশনা ছিল উৎপল দত্ত রচিত 'মৃত্যুর অতীত'। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এক সংগ্রামী নারীকে নিয়ে নাটক 'লাল জমিন'। প্রায় মাস তিনেক আগে লন্ডনে বাংলাদেশের একটি নাটক প্রদর্শনের আমন্ত্রণ পাই। লন্ডনের আলোচিত চিকেনশেড থিয়েটার কম্পানি সেখানে 'দ্বন্দ্ববিষয়ক নাট্য মৌসুম' উপলক্ষে আমাদের নাটকটিকে আমন্ত্রণ জানায়। মূলত চিকেনশেড আমাকে বাংলাদেশ থেকে একটি নাটক নিয়ে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
২০০৪ সাল থেকে আমি ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রজেক্ট 'কানেক্টিং ফিউচার'-এর সঙ্গে কাজ করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে আমি ২০০৪ সালে প্রথম নির্দেশনা দিই 'আমার বাহান্ন'। এ নাটকটি মঞ্চে আসে তারুণ্য থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের যৌথ সহায়তায়। সে সময় কানেক্টিং ফিউচারের আওতায় এ নাটক নিয়ে আমরা লন্ডন যাই। সেখানে চিকেনশেড থিয়েটার কম্পানির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। পরে আমি ২০০৬ ও ২০০৮ সালে চিকেনশেড থিয়েটার কম্পানিতে বাংলাদেশের নাটক বিষয়ে দুটি কর্মশালা করাই। এবারের যাত্রায় আমাদের সহযোগিতা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও ব্রিটিশ কাউন্সিল।
চিকেনশেড স্টুডিও থিয়েটারে নাটকটির শো হয় ৩ অক্টোবর। সেই শোতে উপস্থিত বাংলাদেশিরা নাটক দেখে মুগ্ধ হয়ে সেখানে আরো কয়েকটি শো করার আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সময়ের সীমাবদ্ধতার জন্য আমরা সব আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারিনি। তবু আমরা সেখানে আরো দুটি প্রদর্শনী করেছি। ১৫ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ব্র্যাডি আর্ট সেন্টারে নাটকটির একটি প্রদর্শনী করি। লন্ডনের এই শোতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার দেলোয়ার হোসেন, কবি উদয়শংকর দাস, আবৃত্তিশিল্পী রুপা চক্রবর্তী, গীতিকার জাহাঙ্গীর রানা, কণ্ঠশিল্পী মাহের আফরোজসহ সেখানকার নাট্যতর্মী ও নাট্যপ্রিয় মানুষ।
১৬ অক্টোবর নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়ন হয় পশ্চিম লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক কার্যালয় বাংলাদেশ সেন্টারে। এই স্থানটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বও আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাঙালিরা এখানে নিয়মিত জমায়েত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করতেন। ঠিক একই স্থানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক 'লাল জমিন' মঞ্চায়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই শোটির জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানান 'মুক্তির গান' ও 'মুক্তির কথা' চলচ্চিত্রের প্রধান অভিনেতা মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু। এ ছাড়া এ উৎসবে যোগ দিয়ে বিস্তর ইংরেজি মঞ্চনাটক দেখার সুযোগ পেয়েছি। সেখানে অনেক নাট্যকর্মীর সঙ্গে মিশে নাট্য ভাবনার বিনিময় ও পারস্পরিক নাট্য বিনিময়ের লক্ষ্যে আমাদের যোগাযোগ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। নাটকটি নিয়ে আমাদের লন্ডন যাত্রা ছিল উপভোগ্য ও নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। উল্লেখ্য, 'লাল জমিন' একটি একক অভিনীত নাটক। নাটকটি লিখেছেন মান্নান হীরা। অভিনয় করেছেন মোমেনা চৌধুরী। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ওয়াহিদা মলি্লক জলি। সংগীত পরিচালনা করেছেন জুলফিকার চঞ্চল ও রামিজ রাজু।
অনুলিখন : মামুন মিজানুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.