বসন যখন চামড়ার

মাঘ মাসের তীব্র ঠাণ্ডা এখন প্রকৃতিজুড়ে। হিম দিনের শীতল বাতাসকে উষ্ণতার আদরে মুড়িয়ে নিতে অনেকেই গায়ে তুলে নিচ্ছেন আরামদায়ক চামড়ার জ্যাকেট। এগুলো দেখতে যেমন ফ্যাশনেবল তেমনি শীত ঠেকানোর পাশাপাশি প্রকাশ করে ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য। লিখেছেন নওরিন আক্তার প্রাচীন যুগের মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে ব্যবহার করত পশুর চামড়া।
নিতান্ত বাধ্য হয়ে ব্যবহার শুরু করলেও কালের বিবর্তনে আজ এক বিরাট শিল্পে পরিণত হয়েছে এটি। আধুনিকতার শৈল্পিক ছোঁয়ায় রাতারাতি বদলে গেছে চামড়া শিল্পের রূপ। স্থায়িত্ব ও গুণাগুণে অতুলনীয় চামড়ার পোশাক তরুণদের কাছে কেবল প্রয়োজনই নয়, চমৎকার ফ্যাশন অনুষঙ্গও।
তীব্র শীতের সময় এখন। রোদেলা দিন হলেও দেখা যায় হাড় কাঁপানো হিম বাতাসটা রয়েই গেছে। সন্ধ্যা নামলে এর তীব্রতা টের পাওয়া যায় আরও বেশি। আবার হঠাৎ আসা শৈত্যপ্রবাহের কুয়াশামোড়া দিনগুলো যেন অসহনীয় হয়ে ওঠে ঠাণ্ডার অত্যাচারে। কথায় আছে_ মাঘের শীতে বাঘ পালায়! শীতের এ তীব্রতা বশ করার হাতিয়ার হতে পারে চামড়ার তৈরি ফ্যাশনেবল জ্যাকেট। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্ঝর খান জানান, 'মোটরসাইকেলে যাতায়াত করার জন্য এমনিতেই একটু বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় শীতকালে। চলন্ত পথের প্রচণ্ড বাতাস কাবু করার জন্য চামড়ার জ্যাকেটের বিকল্প নেই। আবার দেখতেও বেশ স্টাইলিশ এটি।'
পাতলা ও মোটা দুই ধরনের লেদারের জ্যাকেটই রয়েছে বাজারে। লেদার নরম না শক্ত হবে সেটা নির্ভর করে চামড়ার বৈচিত্র্য ও ধরনের ওপর। গরুর চামড়ার তৈরি জ্যাকেটই বেশি জনপ্রিয় বলে জানান বিক্রেতারা। শিপ লেদার বেশ নরম ও আরামদায়ক হলেও এর দাম তুলনামূলক বেশি বলে কিনতে পারে কম মানুষই। চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান কারিগরের ম্যানেজিং পার্টনার তানিয়া জানান, 'বছরের এই সময়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই চামড়ার তৈরি জ্যাকেটের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে সারা বছরই টুকটাক অর্ডার আসে। অনেকে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় কিনে বা বানিয়ে নিয়ে যান চামড়ার জ্যাকেট। আবার ফরমায়েশ অনুযায়ী করপোরেট হাউস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক অনুষ্ঠানেও সবার জন্য একই রকম জ্যাকেট বানিয়ে দেওয়া হয়।'
তবে আসল চামড়ার জ্যাকেটের দাম কিছুটা বেশি। এ জন্য কৃত্রিম চামড়ার জ্যাকেটই সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বেশি জনপ্রিয় বলে জানান বসুন্ধরা সিটির রেডিমেড পোশাকের বিক্রয়কর্মী আফজাল হোসেন। সিনথেটিক বা আর্টিফিশিয়াল লেদার দেখতে অবিকল আসল চামড়ার মতো বলে অনেকেই অরিজিনাল লেদার বলে বিক্রি করেন এটি। তাই কেনার সময় ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে কেনা জরুরি।
শীত কাটানোর পাশাপাশি প্রজন্মের ফ্যাশন চাহিদা মেটাতেও লেদারের জ্যাকেটের জুড়ি নেই। দৈনন্দিন ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে পার্টিতেও পরতে পারেন ফ্যাশনেবল এ জ্যাকেটগুলো। অফিসিয়াল পরিবেশে ফরমাল শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে চামড়ার জ্যাকেট চমৎকার মানিয়ে যায়। আবার ক্যাজুয়াল পরিবেশে জিন্স ও হালকা একটি টি-শার্টের ওপর চাপিয়ে নিতে পারেন লেদারের জ্যাকেট। আভিজাত্যমোড়া মানানসই একটি জ্যাকেট আপনার ব্যক্তিত্বের সঠিক প্রকাশ ঘটাতে পারে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও রয়েছে বাহারি নকশার চামড়ার জ্যাকেট। যারা একটু পশ্চিমা পোশাক পরতে পছন্দ করেন, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে বেছে নিতে পারেন এ জ্যাকেটগুলো। জিন্স, টপসের পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজের সঙ্গেও পরা যায় লেদারের জ্যাকেট। কিনতে পারেন লেদারের হুডি জ্যাকেট। শীতের তীব্রতা অনুযায়ী চট করে হুড তুলে বা নামিয়ে নেওয়া যাবে যখন তখন। অনেকে টি-শার্টের ওপর হাতাকাটা চামড়ার জ্যাকেট পরতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্য জ্যাকেটে দৃষ্টিনন্দন বোতামের ব্যবহার থাকলে ভালো হয়। কালো, মেরুন, সবুজ, ধূসর, চকোলেট রঙের জ্যাকেট রয়েছে বাজারে। দুই ও চার বোতাম, মিলিটারি, রকস্টার ইত্যাদি বাহারি নামের এ জ্যাকেটগুলো ব্যবহারেও বেশ আরামদায়ক। একরঙা জ্যাকেটের চাহিদা বেশি লক্ষ্য করা গেলেও কোনো কোনো জ্যাকেটে আবার এমব্রয়ডারি, অ্যাপিল্গক ও মেটালের কাজ করা হয়েছে। বোতাম ও পকেটের নান্দনিকতায় বাহারি কাটিংয়ের চামড়ার জ্যাকেটগুলোকে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার লাইনিং।
দামদর
বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন পল্গাজা, সীমান্ত স্কয়ার থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব মার্কেটেই পাবেন চামড়ার জ্যাকেট। ব্র্যান্ডের জ্যাকেট চাইলে ওয়েস্টেকস, এক্সট্যাসি, ফ্রিল্যান্ডে চলে যেতে পারেন। ২,৮০০-৮,৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন পছন্দের জ্যাকেটটি। কারিগরে আসল চামড়ার জ্যাকেট পাবেন ৪,৫০০-১০,০০০ টাকার মধ্যে। নন ব্র্যান্ডের জ্যাকেট চাইলে ১,৫০০ টাকা থেকে ৬,৫০০ টাকা বাজেট ধরতে হবে। আরেকটু কম দামের মধ্যে কেনার ইচ্ছা থাকলে বঙ্গবাজার, বদরুদ্দোজা মার্কেট, হকারস মার্কেট, গুলিস্তান কিংবা নিউ মার্কেটে ঢুঁ মারতে পারেন। ১,০০০ টাকার মধ্যে চামড়ার তৈরি জ্যাকেট পেয়ে যাবেন। চাইলে ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন জ্যাকেট। খাঁটি চামড়ার তৈরি জ্যাকেট চাইলে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। ৭,৫০০ টাকার মধ্যে পছন্দ অনুযায়ী চামড়ার জ্যাকেট বানিয়ে দেবে তারা। এ ছাড়া যে কোনো টেইলার্স থেকেও বানিয়ে নিতে পারেন লেদারের জ্যাকেট।
যত্ন-আত্তি
লেদারের জ্যাকেটের সঠিক যত্ন না নিলে নষ্ট হয়ে যায় দ্রুত। চামড়ার জ্যাকেট কখনোই বাসায় পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না। পানি লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে রোদে দিন। তবে খুব কড়া রোদে দেবেন না। সম্ভব হলে ভেতরের লাইনিং কয়েক বছর পরপর বদলে নিন। সংরক্ষণের সময় প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন স্থানে নরম কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখুন।
জেনে নিন
জ্যাকেট কেনার সময় এর কাটিং ও ফিটিংয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
আসল নাকি সিনথেটিক চামড়ার জ্যাকেট কিনছেন তা সচেতনভাবে বুঝে নিন।
আসল চামড়ার জ্যাকেটের ওয়ারেন্টি থাকে।

No comments

Powered by Blogger.