প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর-পূর্বমুখী কূটনীতিতে নতুন গতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়া, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, সড়ক ও বিমানপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, শিক্ষা ও পর্যটন বিষয়ে সহযোগিতা প্রভৃতি ইস্যু প্রত্যাশিতভাবেই গুরুত্ব পায়। মিয়ানমার বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব বিবেচনারও আশ্বাস দিয়েছে। দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠক থেকে কেবল আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি


কিংবা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে_ এ ধরনের শব্দ ব্যবহারেই যেন সীমিত না থাকে বরং প্রত্যাশা থাকে আরও বেশি। কিন্তু আট বছর পর দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এ তথ্য হাতের কাছে থাকলে আমরা প্রত্যাশার পারদের মাত্রা কিছুটা নামিয়ে রাখতেই পারি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মিয়ানমার সফর করেছিলেন ২০০৩ সালের মার্চ মাসে। তখন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্য বাড়াতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। তখন পূর্বের দিকে তাকাও বা লুক ইস্টের ধ্বনিতে মিডিয়া সরগরম। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। এখন বছরে বাংলাদেশের রফতানি ৯০ লাখ ডলার এবং আমদানি ৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এ পরিস্থিতি আমূল বদলে যাওয়ার সদিচ্ছা ব্যক্ত হয়েছে এবারে শীর্ষ বৈঠকের আলোচনায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের কাছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করেছেন। আমাদের জ্বালানি ঘাটতি বিবেচনায় এ প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এর সফল পরিণতি মোটেই সহজ হবে না। মিয়ানমারের গ্যাসসম্পদ পর্যাপ্ত এবং তারা এ মূল্যবান সম্পদ রফতানির জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। ভারতও তাদের কাছে চাইছে গ্যাস। এ দুটি দেশের বাজার অনেক বড় এবং তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে মিয়ানমার বিশেষভাবে উদগ্রীব থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তদুপরি সমুদ্রের সীমানা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের রয়েছে বিরোধ এবং তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গড়িয়েছে। বাংলাদেশে যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে সেটাও মিয়ানমার সরকারের জন্য বিব্রতকর। তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। তবে এসব ইস্যুর নিষ্পত্তি না হলে বাণিজ্য বাড়ানো যাবে না, এমন অবস্থান কোনো তরফেই কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়েছিল। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে। আমরা আশা করব, এবারের সফরের যেন ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। প্রতিবেশী এ দেশটি থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কেউ দ্রুতই যেন বাংলাদেশে আসেন এবং চলতি সফরে আলোচনায় অগ্রগতি হওয়া ইস্যুগুলোতে দ্রুত চুক্তি সম্পাদিত হয় সে জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। ২০০৭ সালে দুই দেশের মধ্যে ১০৫ কিলোমিটার বাওয়ালিবাজার-কেয়াকতা সড়ক নির্মাণের বিষয়ে চুক্তি সই হয়েছিল। এবারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। এ বিষয়েও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। এটাও মনে রাখা দরকার যে, মিয়ানমার পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছে এবং তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের নজর বেড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সফর যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ। আমাদের পররাষ্ট্র দফতরের এ অঞ্চলের সম্ভাবনা অবশ্যই উপলব্ধি করা চাই।

No comments

Powered by Blogger.