ত্রিখণ্ডিত হলো দিলি্ল by গৌতম লাহিড়ী,

৩ বছর পর ভারতের রাজধানী দিলি্ল ত্রিখণ্ডিত হলো। মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত দিলি্ল বিধানসভায় গত সপ্তাহে দিলি্লর পুরনিগমকে তিনটি নিগমে ভাগ করার বিল পেশ করলেন এবং প্রায় বিনা বাধায় ধ্বনি ভোটে পাস হয়ে গেল বিলটি। প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি সামান্য ত্রুটিগত আপত্তি তুললেও মূল প্রস্তাবিত আইনে কোনো আপত্তি তোলেনি। স্বাধীনতার পর রাজধানী দিলি্লর পুরসেবার দায়িত্বে এতদিন ছিল কেবল একটি পুরনিগম।


এবার হবে তিনটি। দিলি্ল ভারতের রাজধানী বলে মূল প্রশাসনের\ দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমও দিলি্ল সরকারের সিদ্ধান্তে এক কথায় সম্মতি দিয়েছেন।কেবল নগরটি ত্রিখণ্ডিত করাই শেষ কাজ নয়; মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত জানিয়েছেন, এবার তার লক্ষ্য দিলি্লকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা এনে দেওয়া। দিলি্লতে বিধানসভা থাকলেও ভারতের অন্য রাজ্যের মতো পূর্ণ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। প্রয়োজন সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য সম্পূর্ণ প্রদেশের মর্যাদা আদায়।
বর্তমান দিলি্ল নগর নিগম দিলি্লর ৯৫ শতাংশ এলাকার কয়েক কোটি অধিবাসীর দৈনন্দিন নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে। ১৯৮৯ সালে যখন ভারতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জনতা পার্টির বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণাণের নেতৃত্বে দিলি্ল শহরে সুষ্ঠু পরিসেবা দেওয়ার সুপারিশ কমিটি গঠন করা হয়। তাদেরই সুপারিশ ছিল শহরের জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে একটি মাত্র নগর নিগমের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সে সুপারিশকেই হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভাগ করার আইন তৈরি করেন। প্রথমদিকে বিরোধী বিজেপি দলের আপত্তি
ছিল, নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার অর্থ রাজ্য বাজেটে অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান করতে হবে। সে অর্থ কোথা থেকে আসবে, সে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, দিলি্ল সরকার নিজেরাই অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের শরণাপন্ন হবে না।
প্রস্তাবিত বিলটি অনুযায়ী দিলি্লতে তিনটি নগর নিগম হবে। একটি দক্ষিণ, দ্বিতীয়টি উত্তর দিলি্ল এবং তৃতীয়টি হবে পূর্ব দিলি্ল। প্রথম দুটিতে ১০৪টি করে ওয়ার্ড থাকবে এবং পূর্ব দিলি্লতে হবে ৬৪টি ওয়ার্ড। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো ৫০ শতাংশ ওয়ার্ড নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। আগে সংরক্ষণ ছিল ৩৩ শতাংশ। প্রত্যেকটি নিগমে পৃথক কমিশনার এবং মেয়র পদ থাকবে। এবং ভারতের সংসদের মতো থাকবে স্থায়ী সমিতি।
রাজধানী দিলি্লর জনসংখ্যা এখন দশ কোটির ওপর। ভারতের মুম্বাইয়ের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম কসমোপলিটন শহর। এটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরের চিত্র। এর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এখন নগর পরিচালন ব্যবস্থার মূল দর্শন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা
শীতের দিলি্ল উৎসব আর মেলার নগরীতে রূপান্তরিত হয়। এখন হিমেল হাওয়া। সোনারোদের ছোঁয়ায় মেলা প্রাঙ্গণগুলোতে ভিড় উপচে পড়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি সদ্যসমাপ্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার। ভারতের প্রতিটি প্রদেশের সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গ প্যাভিলিয়ন। তেমনটি ভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্পের সঙ্গে কুটির শিল্পের অজস্র পসরা। সামগ্রিকভাবে এখন গোটা দুনিয়াই আর্থিক মন্দায় কাহিল। তার প্রভাব পড়েছে বিকিকিনিতেও। তবে জামদানি আর টাঙ্গাইলের আকর্ষণ ভিড় টেনেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মেলা প্রাঙ্গণের বাড়তি আকর্ষণ থাকে প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক অভিনব অনুষ্ঠান করে চিত্ত জয় করে। এমনকি সব কাজ ফেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য। কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের কারাবন্দিদের দিয়ে অভিনয় করানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্য 'বাল্মিকী প্রতিভা'। তাদের অভিনয় ও গান পেশাদার শিল্পীদের থেকে কোনো অংশে নিম্নমানের নয়, তা দর্শকরা স্বীকার করেছেন। রাজধানী দিলি্লর প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকগুলো অনুষ্ঠানের বর্ণনা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। ডাকাতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত এই 'রত্নাকররা' যখন বাল্মিকী হয়ে উঠল তখন বাস্তবতার সঙ্গে গীতিনাট্য একাকার হয়ে গেল। এমন ঘটনা অভিনব নয় কি? 

No comments

Powered by Blogger.