৮০ হাজার সমবায় সমিতি বন্ধ

দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং অব্যাবস্থাপনার কারণে দেশের প্রায় ৮০ হাজার সমবায় সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। এখনও সক্রিয় বাকি সমিতিগুলোও জাতীয় উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে পারছে না। 'দারিদ্র্য বিমোচনে সমবায় আন্দোলন, সমবায়ের ভূমিকা এবং অবদান' এ বিষয়ে এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে গতকাল বুধবার এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। মাঠপর্যায়ে জরিপের ফল নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ


করে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বিআইডিএস মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সমবায় সমিতির দুর্বলতা এবং ফাঁকফোকর বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে এসব দুর্বলতা দূর করা হবে বলে জানান তিনি।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. জুলফিকার আলী এবং সংস্থার সাবেক সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. জুলফিকার আলী সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বক্তব্য রাখেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী, সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রার মুসফিকা ইকফাত, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় বিভাগের যুগ্ম সচিব এএইচএম আবদুল্লাহ প্রমুখ।
সমীক্ষায় বলা হয়, নিবন্ধন অনুযায়ী কাগজে-কলমে দেশে ২৯ ধরনের মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১৪টি সমবায় সমিতি রয়েছে। তবে জরিপে মাত্র ৫৩ শতাংশ সমিতিকে সক্রিয় পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রায় ৮০ হাজারেরও বেশি সমিতির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সমবায়ের ভূমিকা দিন দিন কমে আসছে। সমীক্ষা অনুযায়ী বর্তমানে এ হার ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সমবায়ীদের মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নে সমবায়ের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই। তবে সমবায়ীদের সম্পদ আহরণ, কর্মসংস্থান, নতুন নতুন পেশা সৃষ্টি এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে সমবায় আন্দোলন। সমীক্ষায় সমবায় অধিদফতর এবং সমিতিগুলোর বেশ কিছু দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। অধিদফতরের দুর্বলতার মধ্যে রয়েছে সমন্বয়, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন, মানবসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, কাঠামো সংকট। পাশাপাশি জনবল পর্যায়ে দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া হিসাব ব্যবস্থাপনা এবং অডিটিং দুর্বলতা, অন্তর্কোন্দল, রাজনৈতিক দলাদলি_ এ রকম বেশকিছু দুর্বলতার কারণে সমবায় আন্দোলন জাতীয় উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে পারছে না।
পরিস্থিতি উন্নয়নে সমীক্ষা প্রতিবেদনে সমবায়কে পুনঃজীবিত করতে মান্ধাতা কাঠামো বিলুপ্ত করে আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রতিষ্ঠা, নতুন উদ্ভাবনী কাজে লাগানে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিপণন সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা বিশেষ করে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠপর্যায়সহ সর্বপর্যায়ে কাজের গুণগত পরিবর্তন করা।
সমবায় আন্দোলনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে নানক বলেন_ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, আয়বর্ধক কাজের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সমবায় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার যেখানে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, সেখানে সমবায় সমিতিভুক্ত পরিবারে এ হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। সমীক্ষার সব সুপারিশকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে এ সব সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সমবায় আন্দোলনে সমবায় অধিদফতরের ভূমিকা, সমবায় পরিচালনায় আইনকানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমবায়ের সক্ষমতা এবং সমবায় অধিদফতরের বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও পরিচালন পদ্ধতির পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন_ এ তিন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সমীক্ষা চালানো হয়। পুরনো ধারণা দিয়ে আধুনিক সমবায় সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সমবায়ের ব্যাপক কাঠামো সংস্কার প্রয়োজন।
সমবায় ব্যাংকের প্রথম শাখা উদ্বোধন : রাজধানীতে আগারগাঁও সমবায় ভবনে সমবায় ব্যাংকের নতুন শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার এ শাখার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন আহমেদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব ড. মিহীর কান্তি মজুমদার, সমবায় নিবন্ধক মুশফেকা ইকফাৎ এবং জিএম ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সরকার ও সমবায়ীদের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ইস্ট পাকিস্তান প্রভিন্সিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক নামে ১৯৪৮ সালে যাত্রা শুরু করে। ৪৭৪ সদস্যবিশিষ্ট এ ব্যাংকের বর্তমান সম্পদের মূল্য ৫০০ কোটি টাকা। চলতি জুন পর্যন্ত মোট আয় ১৬ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.