এবার রাজনীতির মাঠে

মাসুদ পারভেজ, ফারুক, কনকচাঁপা ও আসিফ_অভিনয়ে এবং গানে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল মানুষ প্রত্যেকেই। শিল্পচর্চার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও বেশ সক্রিয় হয়ে উঠছেন প্রত্যেকেই। সবারই লক্ষ্য জনপ্রতিনিধি হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সুদীপ কুমার দীপ ও কামরুজ্জামান মিলু মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান সোহেল রানা


ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সোহেল রানা। ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন এ অভিনেতা। তা ছাড়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি চাষী নজরুলের 'ওরা ১১ জন'-এর প্রযোজকও ছিলেন তিনি। এরপর পার হয়ে গেল ৪০ বছর। অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক_সব ক্ষেত্রেই দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছেন অবিরাম। সোহেল রানা জানিয়েছেন, মানুষের ভালোবাসা আর দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী তিনি। আর এর প্রচার হিসেবে গত বছর থেকেই শুরু করেছেন গণসংযোগ। সোহেল রানার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্জাক, আলমগীর থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অনেক ব্যক্তিত্ব। গত বছর তাঁর নির্বাচনকে ঘিরে এফডিসিতে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত অতিথিরা সোহেল রানাকে সমর্থন জানিয়েছেন। মনোবলের দিক থেকে তিনি তাই বেশ এগিয়ে। এবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন মিললেই আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সোহেল রানা।

যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকেই হারানোর ক্ষমতা আছে বলে ফারুকের বিশ্বাস
সোহেল রানার মতো অভিনেতা ফারুকও ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনিও ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ নানা আন্দোলনে সরব ছিলেন, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল ঘনিষ্ঠ। ফারুকের অভিনয় পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়াটাও রাজনৈতিক কারণেই। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে যখন তিনি নানা ধরনের মামলায় জড়িয়ে পড়লেন, তখন কয়েকজন রাজনীতি বিশেষজ্ঞের উপদেশে মামলাগুলো থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্যই সাংস্কৃৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন। ফলও পেয়েছেন। একদিকে মামলা থেকে অব্যাহতি, অন্যদিকে অভিনেতা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা_দুই-ই মিলে গেল দ্রুত। সেই থেকে রাজনীতির চেয়ে অভিনয়েই মনোযোগী হয়ে পড়েন বেশি। তাই বলে রাজনীতি থেকে সরে থাকতে পারেননি এ অভিনেতা। আবারও সম্পৃক্ত হয়েছেন। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনিও। এর মধ্যে তিনি একটি নির্বাচনী লিফলেটও তৈরি করেছেন। ঢাকা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে, বিভিন্ন যানবাহনে শোভা পাচ্ছে তাঁর ছবিসহ লিফলেটটি। আওয়ামী লীগের নানা কর্মকাণ্ড কিংবা সমাবেশেও নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ফারুকের এখন একটাই চাওয়া_তা হলো দলীয় মনোনয়ন। আর যদি মনোনয়ন পান, তাহলে যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকেই হারানোর ক্ষমতা আছে বলে তাঁর বিশ্বাস।

মানুষের পাশে থাকতে চান কনকচাঁপা
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে প্রায় ১০ বছর ধরে বিভিন্ন মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তাঁর আর্থিক সহযোগিতায় পড়াশোনা করছে বেশ কয়েকজন ছাত্র। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতকালে সামর্থ্য অনুযায়ী গরিবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। কনকের ইচ্ছা আরো সামর্থ্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সংগীতশিল্পী হিসেবে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এবার মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। আসলে এর জন্য একটি পৃষ্ঠপোষকতা বা প্লাটফর্ম প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে আমার জীবনসঙ্গী (মইনুল ইসলাম খান) আমাকে সব সময় সাহায্য করে এসেছেন। একদিন পত্রিকায় চোখে পড়ে_পাঁচটি সংরক্ষিত নারী আসন খালি আছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার মনের ইচ্ছা প্রকাশ করি। এরপর মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বলা হলে আমি মনোনয়নপত্র জমা দিই।' কনকচাঁপা সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য নির্বাচিত হননি। তাই বলে এ নিয়ে তাঁর কোনো আফসোস নেই। তিনি আরো বলেন, '২৮ বছরের সংগীতজীবনে যেভাবে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, মানুষের সঙ্গে মিশেছি, ঠিক তেমনটাই থাকতে চাই। সব সময় দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে চাই। যাদের বাসস্থান নেই, যেসব মুক্তিযোদ্ধার এখন দুর্দিন, তাঁদের সবার জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে চাই। নিজের সামর্থ্যটাকে বাড়ানোর জন্যই আমার এ প্রচেষ্টা।'

শিল্পী হয়ে মানুষের সেবায় আজীবন পাশে থাকতে চান আসিফ
২০০৯ সালে চলচ্চিত্র থেকে এবং ২০১০ সালের ১৬ মার্চ অডিও থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। সম্প্রতি তিনি আবারও গানে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন, পাশাপাশি কুমিল্লার মেয়র নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'কুমিল্লা শহরের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী মহল চায় আমি নির্বাচনে অংশ নিই, কুমিল্লার মেয়র হয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি শুধু কুমিল্লার নয়, সব শ্রোতার জন্য, সব মানুষের জন্য, এ দেশের জন্য কাজ করতে চাই।'
আসিফ বিএনপিদলীয় প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দলীয় প্রধানের অনুরোধে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে না পারলেও একজন শিল্পী হিসেবে অডিও পাইরেসি প্রতিরোধে কাজ করতে চান তিনি। শিল্পী হয়ে মানুষের সেবায় পাশে থাকতে চান আজীবন।

No comments

Powered by Blogger.