যেখানে মূল আকর্ষণ মেসি-নেইমার

শেষ পর্যন্ত খেলবে ফাইনালে_এটাই যেন বিশ্ব ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টের নিয়তি। এবার তো সেটা আরো আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে, কারণ তাহলে ফাইনালে জমে উঠবে মেসি-নেইমারের লড়াই! ফিফার বর্ষসেরার লড়াইয়ে এবারের মতো পিছিয়ে পড়লেও সান্তোসের ব্রাজিলিয়ান তারকার মধ্যে ভবিষ্যতের বিশ্বসেরা ফুটবলারকে দেখছেন অনেকেই। সে অভিধার তিনি কতটা যোগ্য সেটা প্রমাণ করার জন্য বিশ্বসেরা মেসির সঙ্গে দ্বৈরথের এমন একটা মঞ্চই তো প্রয়োজন


নেইমারের। শক্তি, সামর্থ্য আর ঐতিহ্যের বিচারে কোনো তুলনাই হয় না বার্সেলোনা আর অকল্যান্ড সিটির। বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পেশাদার লিগ স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগার চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা, অন্যদিকে পেশাদার ফুটবলের কঠিন জগতের সঙ্গে পরিচয়ই নেই অকল্যান্ড সিটির। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, দোকান-কর্মীদের নিয়ে গড়া অপেশাদার দলটি কিন্তু একটা জায়গায় কাতালানদের পাশেই! কাতালানদের মতোই বিশ্ব ক্লাব কাপের অষ্টম আসরে এই নিয়ে চতুর্থবার খেলতে নামছে তারা, আর গতবার তো দুটি ম্যাচ জিতে উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালেই।
এবারও সে রকমই একটা কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে জাপানে এসেছে নিউজিল্যান্ডের দলটি। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আজ তারা মুখোমুখি হচ্ছে জাপানের চ্যাম্পিয়ন কাশিওয়া রেইসলের। এ ম্যাচ জিতলে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হবে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়ন, মেক্সিকোর মন্টেরির সঙ্গে। আর সেমিফাইনাল স্বপ্ন যদি সত্যিই পূরণ করতে পারে তারা, তাহলে সেখানে দেখা হবে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের সান্তোসের সঙ্গে। টুর্নামেন্টের ফরম্যাট অনুসারে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার মতোই সরাসরি সেমিফাইনালে খেলতে নামবে নেইমারের দল। আর আশা করা হচ্ছে, ফাইনালেও মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা আর সান্তোসই। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে প্রায় নিয়মিতভাবে এমনটাই তো হয়ে আসছে! নিজেদের ঘরোয়া লিগে অবস্থা যেমনই হোক, ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার সেরা দলই শেষ পর্যন্ত খেলবে ফাইনালে_এটাই যেন এ টুর্নামেন্টের নিয়তি। এবার তো সেটা আরো আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে, কারণ তাহলে ফাইনালে জমে উঠবে মেসি-নেইমারের লড়াই! ফিফার বর্ষসেরার লড়াইয়ে এবারের মতো পিছিয়ে পড়লেও সান্তোসের ব্রাজিলিয়ান তারকার মধ্যে ভবিষ্যতের বিশ্বসেরা ফুটবলারকে দেখছেন অনেকেই। সে অভিধার তিনি কতটা যোগ্য সেটা প্রমাণ করার জন্য বিশ্বসেরা মেসির সঙ্গে দ্বৈরথের এমন একটা মঞ্চই তো প্রয়োজন তাঁর।
বিশ্বের সেরা ক্লাব নির্ধারণের জন্য একটি ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের ধারণাটি প্রথম রূপ লাভ করে ২০০০ সালে। তখন পর্যন্ত বিশ্বের সেরা ক্লাব নির্ধারণের প্রচলিত মাপকাঠি ছিল ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ, যেখানে প্রতিবছর মুখোমুখি হতো বিশ্বের সেরা দুটি মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ আর কোপা লিবার্তাদোরেস চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু এ আয়োজনের সঙ্গে ফিফার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, ছিল না কোনো কর্তৃত্বও। সে ভাবনা থেকেই ফিফা ২০০০ সালে প্রথম আয়োজন করে ক্লাব বিশ্বকাপের। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সে টুর্নামেন্টে ফিফার অন্তর্ভুক্ত ছয়টি মহাদেশীয় কনফেডারেশনের ছয় চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল ১৯৯৮ সালের ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপজয়ী দল আর স্বাগতিক ব্রাজিলের চ্যাম্পিয়নরা। টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত লড়াই হয়েছিল ব্রাজিলেরই দুটি ক্লাবের আর তাতে ভাস্কো দা গামাকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল করিন্থিয়ানস।
উয়েফার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা ফিফার প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপের মতোই ক্লাব বিশ্বকাপও হবে প্রতিবছর। কিন্তু ফুটবলের বিশ্ব সংস্থার বিপণন সহযোগী আইএসএলের বিপর্যয়ের সূত্র ধরে পরের চার বছর আর টুর্নামেন্টটি আয়োজনই করা যায়নি। ২০০৪ সালে উয়েফার সঙ্গে সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬০ সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের বিলুপ্তি ঘটানো হয়, আর দুটি টুর্নামেন্ট একীভূত করে পুনর্জন্ম হয় ক্লাব বিশ্বকাপের। ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে টুর্নামেন্টটি। সাবেক ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের প্রতি সম্মান দেখাতে ঠিক হয়েছে ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নরা টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলবে সেমিফাইনাল থেকে। এ দুই মহাদেশের ক্লাবগুলোও সে নিয়মটির যৌক্তিকতা প্রমাণ করে এসেছে বরাবর। এখন পর্যন্ত অন্য কোনো মহাদেশের কোনো ক্লাব তো জিততেই পারেনি এ শিরোপা! গতবারের আসরেই শুধু ফাইনালে ছিল না এ দুই মহাদেশের দল। সেবার আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন টিপি মাজেম্বেকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলান। কিন্তু টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সরাসরি খেলার সুযোগ নেই বলে এবারের আসরে খেলছেই না তারা, যেমন গতবার খেলতে পারেনি ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা।
লিওনেল মেসিদের এবারের মিশন ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের। কিন্তু সে মিশন শুরুর আগে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের কাঁধে পাহাড়-সমান চাপ। স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগায় এ মুহূর্তে শীর্ষে নেই তারা, আর জাপান যাত্রার আগে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচটি আবার 'এল-ক্লাসিকো' যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারলেই প্রায় শেষ হয়ে যাবে শিরোপা-স্বপ্ন। চাপটা তখন আরো বাড়বে গতবারের স্প্যানিশ লিগ চ্যাম্পিয়নদের ওপর।
এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের আল সাদ ক্লাবের অধিনায়ক আব্দুল্লাহ কোনির কাছে অবশ্য বার্সেলোনার বর্তমান ফর্ম মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, টুর্নামেন্টের সেরা দলের মুখোমুখি হওয়ার স্বপ্নেই বিভোর তিনি। সে জন্য আগে কোয়ার্টার ফাইনালে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন তিউনিসিয়ার এসপেরান্সের বাধা টপকাতে হবে তাদের। কোনির আশা, সেটা তাঁরা পারবেন 'একতা'র জোরে, 'ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমাদের দলে মেসির মতো কোনো তারকা নেই। নেই বলেই আমরা সবাই সমান। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা সবাই পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি। পরস্পরের জন্যই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করি সব সময়।'
এসপেরান্সের স্বপ্ন কিন্তু আরো বড়। আল সাদকে হারিয়ে শুধু সেমিফাইনালেই নয়, বার্সেলোনাকেও চমকে দিয়ে তারা খেলতে চায় ফাইনালে এবং জিততে চায় শিরোপাই! এ ক্ষেত্রে তাদের অনুপ্রেরণার নাম মাজেম্বে। গতবার কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রের ক্লাবটি উঠেছিল টুর্নামেন্টের ফাইনালে। এবার তাদের একধাপ পেছনে ফেলে ইতিহাস গড়তে চায় এসপেরান্স। দলের ঘানাইয়ান ফুলব্যাক হ্যারিসন অ্যাফুলের সে রকমই স্বপ্ন, 'জানি, কাজটা সহজ হবে না আমাদের জন্য। কিন্তু আমাদের যা সামর্থ্য, তাতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমি বলে রাখছি, টুর্নামেন্টে আমরা অনেক দূর যাব।'
কিন্তু লিওনেল মেসির স্বপ্নটাও যে একই রকম! ঘরোয়া লিগে বার্সেলোনা রিয়ালের চেয়ে অনেকটা পেছনে থাকলেও মেসি নিজে কিন্তু আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। আর তিনি মনে করেন, ক্লাব বিশ্বকাপ তো বটেই, এমনকি লা লিগা আর স্প্যানিশ কিংস কাপও জেতা সম্ভব তাদের পক্ষে, 'আসলে শিরোপা জেতার একরকম বাধ্যবাধকতা সব সময়ই থাকে আমাদের। আমার চোখে এটা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। আমরা বরাবরের মতোই এখানেও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটাই পরতে চাইব।'
এসপেরান্স যতই স্বপ্ন দেখুক, সেমিফাইনালে উঠলেও সেই লড়াইয়ে তারা নামবে আন্ডারডগ হয়েই। বার্সেলোনার সঙ্গে লড়াইটা জমতে পারে ফাইনালে, যদি সেমিফাইনালের বাধা ডিঙিয়ে সেখানে আসতে পারে সান্তোস। মেসি-নেইমারের সম্ভাব্য লড়াইয়ের কথা ভেবেই তো যত জল্পনা-কল্পনা এ টুর্নামেন্টকে ঘিরে! ওয়েবসাইট

ক্লাব বিশ্বকাপের ফিকশ্চার
ম্যাচ-১ : ৮-১২-২০১১, প্লে অফ : কাশিওয়া রেইসল-অকল্যান্ড সিটি এফসি
কোয়ার্টার ফাইনাল
ম্যাচ-২ : ১১-১২-১১, এসপারেন্স স্পোর্টিং-আল সাদ
ম্যাচ-৩ : ১১-১২-১১, ১ম ম্যাচের জয়ী দল-মন্টেরি
পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচ
ম্যাচ-৪ : ১৪-১২-১১, দ্বিতীয় ম্যাচের বিজিত দল-তৃতীয় ম্যাচের বিজিত দল
সেমিফাইনাল
ম্যাচ-৫ : ১৪-১২-২০১১, দ্বিতীয় ম্যাচের জয়ী দল-সান্তোস
ম্যাচ-৬ : ১৫-১২-২০১১, তৃতীয় ম্যাচের জয়ী দল-বার্সেলোনা
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী : ১৮-১২-২০১১
ফাইনাল : ১৮-১২-২০১১

No comments

Powered by Blogger.