চীনের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য-প্রথমবারের মতো সরাসরি পণ্য নিয়ে জাহাজ এলো by সারোয়ার সুমন

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য যোগাযোগ বাড়ছে। চীনের সাংহাই বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম এসেছে কনটেইনারবাহী একটি জাহাজ। কনটেইনার নিয়ে চীন থেকে আগামীকাল আসবে দ্বিতীয় জাহাজ। চলতি মাসে আরেকটি শিপিং কোম্পানি সরাসরি চীন থেকে বাংলাদেশে পণ্যবাহী জাহাজ আনার ঘোষণা দিয়েছে। এভাবে পণ্য আনা-নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও
জোরদার হবে। কারণ চীন সরকারও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে সম্প্র্রতি শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশের ৮৪টি পণ্যে। বাংলাদেশে বাড়াচ্ছে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণও। উল্লেখ্য, আগে বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারত থাকলেও গত তিন বছর ধরে শীষস্থ্থানে আছে চীনের নাম।
চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শিল্পপ্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া বলেন, 'চীনের সঙ্গে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে। এতে দু'দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।'
জানা গেছে, বাংলাদেশে আসা জাহাজগুলো এতদিন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকার বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করত। এতে একেকটি জাহাজের সময় লাগত ২০ থেকে ২৫ দিন। কিন্তু এখন সরাসরি চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা শুরু হওয়ায় এ সময় কমে আসবে ১০ থেকে ১২ দিনে। চীন থেকে আসা প্রথম জাহাজ 'হানসা সেঞ্চুরিয়ান' সাংহাই বন্দর থেকে ৯ সেপ্টেম্ব্বর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। ১২৫০ একক কনটেইনার বোঝাই এ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছে ২৪ সেপ্টেম্ব্বর। একইভাবে আগামীকাল আসছে আরও বড় জাহাজ 'কোটা উইজাতা'। প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল লাইনস (পিআইএল) নামের শিপিং কোম্পানি চীন থেকে সরাসরি এসব জাহাজ বাংলাদেশে আনছে।
পিআইএলের কান্ট্রি ডিরেক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, 'চীন থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আনার প্রথম অভিজ্ঞতা মন্দ নয়। তবে ১২৫০ একক কনটেইনার এলেও প্রথম জাহাজটি নিয়ে গেছে মাত্র ৬০০ কনটেইনার। সোমবার আসবে আমাদের দ্বিতীয় জাহাজ। আপাতত এ রুটে মাসে দুটি জাহাজ চালাব আমরা। মাসতিনেক পর লাভ-ক্ষতির হিসাব করে জাহাজের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পপ্পনা আছে।' উল্লেখ্য, চলতি মাস থেকে মার্কস লাইন নামে আরেক শিপিং কোম্পানি সরাসরি চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আনার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ ক্রমশ সুদৃঢ় হচ্ছে। অবশ্য গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ হিসেবে আছে চীন। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট আমদানির ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ছিল চীনের পণ্য। আর ভারতের পণ্য ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশই ছিল চীনের। ভারতের পণ্য ছিল ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চীন থেকে বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্যের বেশিরভাগই ইলেকট্রনিক, ফেব্রিক্স, মেশিনারিজ, সুতা ও যন্ত্রাংশ।
মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে এবং সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্র বন্দরে চীন অর্থায়ন করলে বাণিজ্যের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলে সম্প্র্রতি একটি গোলটেবিল বৈঠকে মতামত ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে।
বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহ আছে চীনেরও। তাই বাংলাদেশে চীনের একক মালিকানাধীন ৫৪টি শিল্প ইউনিটে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। আর যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত ৯৩টি ইউনিটে বিনিয়োগ আছে ১৮৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার।

No comments

Powered by Blogger.