রুদ্র কমিশনের আশা, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে by সুব্রত আচার্য্য,

বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই তিস্তা চুক্তি করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত সরকার। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ নির্ণয় করতে এক সদস্যবিশিষ্ট রুদ্র কমিটিও দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করতে চলেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসের মধ্যেই কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর অর্থাৎ


সেচ-পানিসম্পদ দপ্তরে প্রতিবেদনের অনুলিপি পেঁৗছাবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র সেচ ও পানিসম্পদমন্ত্রী ড. সৌমেন মহাপাত্র টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে এ কথাই জানান।
অন্যদিকে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ যে কমিশনের হাতে, সেই রুদ্র কমিশনের প্রধান কল্যাণ রুদ্রের অকপট স্বীকারোক্তি, 'তিস্তা চুক্তি নিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক যেমন বিবেচনায় থাকছে, তেমনি মানা হবে আন্তর্জাতিক নদী আইনও। তবে আমার বিশ্বাস এ চুক্তি সম্পাদন হচ্ছেই।'
পানিসম্পদমন্ত্রী বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে খুবই পজেটিভ। আশা করছি, শিগগিরই এটি সম্পাদন করা সম্ভব হবে। এখানে সবার যেন অধিকার ঠিক থাকে, তা অবশ্যই দেখা হবে।' তিনি এও বলেন, 'তিস্তা চুক্তি নিয়ে আরো ভালো বলতে পারবেন রাজ্যের বৃহত্তম সেচমন্ত্রী ড. মনস ভুঁইয়া। তিনি এখন দিলি্লতে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে রাতেই ওই মন্ত্রীর বিএসএনলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
বুধবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র তিস্তার পানি নিয়ে খুঁটিনাটি সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও তিস্তায় গত ১০ বছরের পানিপ্রবাহের 'ডেটা' অর্থাৎ 'তথ্য ভাণ্ডার'-এর ওপর একটি দীর্ঘ বিশ্লেষণও শেষ করেছেন তিনি। সেচ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের নিয়ে তিনি গত সপ্তাহে সরেজমিনে তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে শেষ মুহূর্তের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মমতার ঘনিষ্ঠ প্রবীণ ভারতীয় এই নদী বিশারদ। আগামী সপ্তাহে আরো একবার তিনি তিস্তা পরিদর্শন করবেন।
বুধবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে ওই নদী বিশারদ ও কমিশনপ্রধান কল্যাণ রুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত সপ্তাহে তিস্তা ঘুরে এসেছি। আগামী সপ্তাহে আবার যাব। তিস্তার গতি-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা চলছে। এটি একটি খুবই দায়িত্বপূর্ণ কাজ। দুটি দেশের সম্পর্কের বিষয়। তাই এখানে একজন ভারতীয় নাগরিক হয়ে নয়, বরং একজন বৈজ্ঞানিকের ভূমিকায় থাকছি। মুখ্যমন্ত্রী চুক্তি নিয়ে খুবই ইতিবাচক। সেটাও বিবেচনায় থাকছে। আমার মনে হয় এই চুক্তি সম্পাদন হবেই।'
গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে যাওয়ার আগে আকস্মিক তিস্তা চুক্তি নিয়ে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতের নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে দেখা করে তিস্তা চুক্তির খসড়া অনুমোদন করিয়ে নেন। কিন্তু হঠাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই চুক্তির সঙ্গে বাস্তবের মিল না থাকার অভিযোগ তোলেন। এতে তিনি ঢাকা সফরও বাতিল করেন।
এ নিয়ে দুই দেশের মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। মমতার আপত্তিতে তিস্তা চুক্তি ভেস্তে গেছে_এ ধরনের একটি কথা ওঠে সব মহলে, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতার নীরবতার সুযোগে এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হয় কোনো কোনো মহলে। তবে অক্টোবরের শেষ দিকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে দিলি্লর সাংবাদিকদের কাছেই প্রথম মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিলি্লর সাংবাদিকদের মমতা বলেন, তিস্তা চুক্তি হবে, তবে তা হবে পানির প্রবাহ বুঝে এবং সেটা পর্যবেক্ষণ করার পর। শুধু কাগজে করে লাভ নেই। বাস্তবে যেন দুটি দেশ এই চুক্তির ফলে উপকৃত হয়, সেটাও দেখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.