স্বামীর দেওয়া আগুনে ঝলসে গেলেন মরিয়ম by শফিক আদনান,

মাত্র ২০ দিন আগে বিয়ে হয়েছিল মরিয়মের। এখনো মেহেদির রং ওঠেনি হাত থেকে। এর আগেই স্বামীর দেওয়া আগুনে ঝলসে গেছে তাঁর শরীর। গতকাল বুধবার ভোরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেতরাহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।বেতরাহাটি গ্রামে গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম আক্তার (২০)। তাঁর মা আম্বিয়া খাতুন জানান, তাঁর ভাই আবদুল কুদ্দুছের ছেলে বাক্কারের সঙ্গে তাঁর মেয়ের অনেক দিনের সম্পর্ক ছিল।


একপর্যায়ে মরিয়ম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে এলাকাবাসীর চাপে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে মরিয়ম ও তাঁর পরিবারের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। অবশেষে গায়ে কেরোসিন ঢেলে মরিয়মকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়।
পুলিশ ও মরিয়মের পরিবার জানায়, গতকাল ভোর ৫টার দিকে মরিয়ম প্রাকৃতিক ক্রিয়া সারতে বাইরে গেলে বাক্কার, তার ভাই কাশেম, শহীদ, বাক্কারের বন্ধু মামুন, লালন, কাঞ্চন, কালামসহ কয়েকজন তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মরিয়মের চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। মরিয়মের হাঁটুর নিচের অংশ ছাড়া সারা শরীর আগুনে ঝলসে গেছে। কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল হোসেন মাসুম জানান, মরিয়মের শরীরের প্রায় পুরোটাই পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মরিয়ম অভিযোগ করেন, বিয়ের পর স্বামীর চাপে তিনি গর্ভপাতে রাজি হন। কিন্তু এর পরও বাক্কার ও তার পরিবার এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। এতে তাঁর ও পরিবারের ওপর নির্যাতন চালায় বাক্কার। গত রবিবার বাক্কার, তার বাবা ও ভাইয়েরা মিলে তাঁর মা-বাবা, বোন সানু ও ছোট ভাই সালামকে বেদম মারধর করে। এ জন্য তাঁর বাবা গিয়াস উদ্দিনকে তিন দিন জেলা হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে বাক্কার ও তার আত্মীয়স্বজন বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে গেছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, মেয়ের বড় বোন বেদেনা আক্তার বাদী হয়ে গতকাল বিকেলে স্বামী বাক্কারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ বাক্কারকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.