আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম সর্বনিম্ন-দাম কমলেও আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা by রাজীব আহমেদ

ন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েক মাসের মধ্যে চিনির দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। নভেম্বর মাসে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ৫৩৩ ডলারে নেমেছে; কিন্তু দেশের আমদানিকারকরা চিনি আমদানির জন্য এখন ঋণপত্র খুলছেন না। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের প্রতি মাসে গড়ে দুই লাখ ২০ হাজার টন চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা হলেও নভেম্বর মাসে এক টন চিনির ঋণপত্রও খোলা হয়নি।


রয়টার্সের হিসাবে, গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত চিনির টনপ্রতি গড় দাম ছিল ৮০৫ ডলার। আর অপরিশোধিত চিনির দাম ছিল ৬৪৯ ডলার। পরের মাসগুলোয় তা কমতে থাকে। নভেম্বর মাসে পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে তা দাঁড়ায় ৬৩৫ ডলার ও অপরিশোধিত চিনির দাম দাঁড়ায় ৫৩৩ ডলার।
বর্তমানে বাজারে চিনির সরবরাহ প্রচুর। ফলে আশু কোনো সংকটের সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। বড় মজুদ থাকায় আমদানিতে আগ্রহী হচ্ছেন না আমদানিকারকরা।
গত জুলাই মাসে সরকার যখন চিনির দাম কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় তখন বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে। কাঁচামাল সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণ দেখিয়ে তখন বন্ধ ছিল চারটি চিনিকল। ফলে রমজানে মানুষকে বেশি দামে কিনতে হয় চিনি। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে সাদা চিনি (পরিশোধিত) আমদানি শুরু হলে বাজারে দাম পড়ে যেতে শুরু করে।
কমতে কমতে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনির মিলগেটের দাম দাঁড়িয়েছে ৪৯-৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে তা ৫৬-৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পরিবেশকদের কাছে পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ করছে মিলগুলো। একটি কম্পানি তাদের উৎপাদিত চিনি বিক্রি না করতে পেরে বর্তমানে একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বছরে ১৪-১৫ লাখ টন চিনির প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টন উৎপাদিত হয় সরকারি চিনিকলগুলোয়। বাকি চিনির চাহিদা আমদানি করে মেটাতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আট লাখ ৮৫ হাজার টন চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। এ পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। কিন্তু শেষ দুই মাসে আমদানি জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে আগের তুলনায় কম। অক্টোবর মাসে ৭৬ হাজার টন চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে। নভেম্বর মাসে কোনো ঋণপত্র খোলা হয়নি।
পরিবেশক প্রথার অধীন গঠিত মনিটরিং সেল থেকে পাওয়া কাস্টমসের হিসাবে, অপরিশোধিত ও পরিশোধিত মিলিয়ে গত জুলাই মাস থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৩ টন চিনি এসেছে।
ভারত থেকে সাদা চিনি আমদানি হওয়ায় মিলমালিকরা লোকসান দেওয়ার দাবি করে সরকারের কাছে সাদা চিনি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের দাবি করে আসছিলেন। দেশীয় শিল্প রক্ষার জন্য সরকার গত ২৮ অক্টোবর পরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর টনপ্রতি দুই হাজার টাকা শুল্ক আরোপ করে। এর আগে পরিশোধিত-অপরিশোধিত কোনো প্রকার চিনি আমদানিতে শুল্ক ছিল না।
চিনির ওপর শুল্ক আরোপের কোনো প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। মিলগেটে আগের দামেই চিনি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হাবিব। তিনি বলেন, বাজারে এখন প্রচুর চিনি আছে। তাই এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
মিলমালিকরা লোকসান দিয়ে চিনি বিক্রি করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা গড়পড়তার (লাভসহ মূল্য) চিনি এখন ৪৯-৫০ টাকা বিক্রি করছেন মিলমালিকরা। এতে তাঁদের অনেক লোকসান হচ্ছে। অনেকে চিনি বিক্রি করতে পারছেন না। সিটি গ্রুপ চিনি বিক্রি হচ্ছে না বলে তাদের একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। আবার নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজারদর কম হওয়ায় বাংলাদেশ সুগার করপোরেশনের ৬০ হাজার টন চিনি বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমদানি কমে গেলে এই মুহূর্তে সংকট তৈরির কোনো আশঙ্কা নেই। তবে দীর্ঘমেয়াদে আমদানি কমে গেলে সংকট হবে।

No comments

Powered by Blogger.