নোনা জলে কয়রাবাসী-অসময়ের দশ ফোঁড়-৫০ লাখ টাকার পাতাখালী বাঁধের নির্মাণ দর এখন হাঁকা হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা by নিখিল ভদ্র

ড়াই বছর আগে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধটি ভেঙে গেলে সরকার হিসাব করে দেখছিল, এটি পুনরায় নির্মাণ করতে খরচ পড়বে ৫০ লাখ টাকার মতো। তখন টেন্ডারের মাধ্যমে এরও কম টাকায় বাঁধটি তৈরির কার্যাদেশও দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু সেই ঠিকাদার কাজটি করতে পারেননি। পরে আরো দুইবার কার্যাদেশ দেওয়া হলেও নতুন ঠিকাদাররা কাজটি করেননি বা করতে ব্যর্থ হন।


পানির তোড়ে এত দিনে ফাটল বেড়ে ৫৫ মিটার থেকে ১৬০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। 'অসময়ের দশ ফোঁড়ের' মতো এখন এর নির্মাণ যেমন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে, তেমনি ব্যয়ও লাফিয়ে বেড়েছে কয়েক গুণ। ঠিকাদারদের একটি সিন্ডিকেট বাঁধ নির্মাণের জন্য দর ২০ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা হেঁকে গোঁ ধরে বসে আছে। আর যাদের জন্য এ বাঁধ, সেই খুলনার কয়রা উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ নোনা পানিতে ডুবে বেঁচে থাকার জন্য খাবি খাচ্ছে।
চলতি বছরের মধ্যে 'পাতাখালী ক্লোজার বাঁধ' নির্মাণ না করা গেলে বাঁধের দৈর্ঘ্য আরো বাড়ার পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয়ের দাবি ঠিকাদাররা ৪০ কোটি টাকার ওপর নিয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাউবো আজকালের মধ্যে চতুর্থবারের মতো টেন্ডারের কাজটি চূড়ান্ত করতে পারে। এবার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ছয় কোটি টাকা। কিন্তু যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে, তারা এ প্রাক্কলিত ব্যয়ের ধারেকাছেও নেই।
তারা ২০ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে দরপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি আগাম অর্থ ছাড়ের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় পাউবো কার্যাদেশ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা অভিযোগ করেছেন, ঠিকাদাররা সিন্ডিকেট করে টেন্ডার জমা দিয়েছেন। তাঁরা জনস্বার্থের থেকে ব্যবসায়িক লাভটাকে বড় করে দেখছেন। সিন্ডিকেট করে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নিতে চান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে সরকারের ব্যয় বেড়েছে। এ এলাকার মানুষ আড়াই বছর ধরে সীমাহীন দুর্ভোগে আছে। পাতাখালী ক্লোজার বাঁধ নির্মাণের ব্যয় পাউবো নির্ধারিত ছয় কোটি টাকার জায়গায় ১০ কোটি হতে পারে। কোনোভাবেই এর বেশি হতে পারে না।' তিনি বলেন, ঠিকাদাররা পাউবোর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে দরপত্রে অংশ না নিলে বাঁধ নির্মাণে সরকার বিকল্প উদ্যোগ নেবে।
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ২০০৯ সালের ২৫ মে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আইলায় কয়রার শাকবাড়িয়া নদীর শাখা নদী পাতাখালী খালের বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। নোনা পানির হাত থেকে পাউবোর ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন এলাকাকে রক্ষার জন্য ওই বছরই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এ বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর 'এমডি জাকির হোসেন খান'কে ৪৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করলেও শেষ না করে চলে যায়। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করায় ১০ এপ্রিল ওই কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।
প্রথম দফায় কাজ শেষ না করায় নির্ধারিত স্থানের গভীরতা বেড়ে বাঁধ নির্মাণের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরে পাউবো ওই স্থান থেকে সিকি কিলোমিটার (২৫০ মিটার) পেছনে বাঁধ নির্মাণের জন্য নতুন স্থান নির্ধারণ করে। সেখানে ৩০ মিটার ও ৬০ মিটার (মোট ৯০ মিটার) দৈর্ঘ্যের দুটি বাঁধ নির্মাণের জন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর এ প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় ধরে মেসার্স মিজান এন্টারপ্রাইজকে দুই কোটি ছয় লাখ টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠান ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধটির নির্মাণকাজ শেষ করলেও ৬০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। ৬০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই পানির চাপে সেটি ভেঙে যায়। এরপর পাউবোর পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও মিজান এন্টারপ্রাইজ নতুন করে বাঁধটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পাউবো ওই কার্যাদেশ বাতিল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির জামানত বাজেয়াপ্ত করে এবং পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে উন্মুক্ত থাকার কারণে জোয়ারের পানির তোড়ে বাঁধটি প্রতিনিয়ত ভাঙতে থাকে। মিজান এন্টারপ্রাইজের অসমাপ্ত ৫৫ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু ঠিকাদাররা ওই টাকায় কাজ করতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সমঝোতার মাধ্যমে প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুন_চার কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় 'মেসার্স দ্য স্টোন স্টিল' নামের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তাদের চলতি বছরের ১৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দ্য স্টোন স্টিল কাজই শুরু করেনি। তারা বরাদ্দ আরো বাড়ানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। অবশেষে গত ১ জুন ওই দরপত্র বাতিল করা হয়। তৃতীয় দফা দরপত্রেও কাজ না হওয়ায় পাউবো প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করে পুনরায় কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পাউবো সূত্র জানায়, বর্তমানে পাতাখালী ক্লোজার বাঁধের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ১৬০ মিটার। এ জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ কোটি ৯৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। গত ১৩ অক্টোবর প্রথম টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সে সময় সাতটি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনলেও ১৪ নভেম্বর নির্ধারিত দিনে কোনো ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নেননি। এরপর দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের পর ২৪ নভেম্বর হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স, আল মামুন এন্টারপ্রাইজ, পেক বে ইন্টারন্যাশনাল, মিজান এন্টারপ্রাইজ (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ও ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (জয়েন্ট ভেঞ্চার) নামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। তারা ২০ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে দরপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি আগাম অর্থ ছাড়ের শর্ত দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাতাখালী ক্লোজারের মতো বড় বাঁধ নির্মাণের উপযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। এ কারণে ঠিকাদাররা বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দিয়ে থাকেন। এরপর দেনদরবারের মাধ্যমে বরাদ্দ বাড়িয়ে নেন। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা সবাই লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। আর পাতাখালী ক্লোজার নির্মাণ করতে গিয়ে আগেই তিনটি প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে তাদের বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে। এরপর টেন্ডার যে বা যারাই গ্রহণ করুক না কেন, আগে ব্যয় হওয়া অর্থ তারা এখান থেকে তুলে নিতে চায়। এ কারণে ঠিকাদারদের দরপত্র প্রাক্কলিত মূল্য থেকে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি হয়েছে।
সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানাও বলেছেন, 'ঠিকাদাররা এ কাজের মাধ্যমে আগে ব্যয় করা টাকা তুলে নিতে চান।'
পাউবোর সাতক্ষীরা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মাণ না হওয়ার জন্য ঠিকাদারদের গাফিলতির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগও দায়ী। কারণ সময়ে সময়ে সাগরের পানির চাপ বেড়ে যায়। এ সময় কাজটি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে ঠিকাদাররা আন্তরিক হলে এত দিনে কাজটি শেষ হতো। ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এখানে ঠিকাদারের সংখ্যা কম। এ কাজে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণে এখানে মাত্র পাঁচ থেকে সাতজন ঠিকাদার অংশ নেন। ফলে তাঁদের মধ্যে একটি সমঝোতা হতেই পারে। তবে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে চার-পাঁচ গুণ বেশি ব্যয়ে কার্যাদেশ দেওয়া কঠিন।' পরবর্তী তারিখে দরপত্র পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
দরপত্র প্রদানে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আল মামুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, পাউবো যে ব্যয় নির্ধারণ করেছে, তা দিয়ে কোনোভাবেই পাতাখালী ক্লোজার নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ এখন ব্যয় অনেক বেড়েছে। পাউবো বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে ব্যয় নির্ধারণ করেনি। বাঁধটি একবারে বাঁধা সম্ভব হবে না। অন্তত দুইবার বাঁধটি বাঁধতে হবে। আর সেটা হলে ২০ কোটি টাকার কমে কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করার কিছু নেই। দুই মাস আগে আমি টেন্ডার দিয়েছিলাম ২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকায়। কিন্তু কাজ দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে টেন্ডার দিলে আরো বেশি দিতে হবে। ইতিমধ্যে ব্যয় আরো বেড়েছে। আর সাগরের উপকূলে সুন্দরবনের মধ্যে কেউ কাজে যেতে চায় না। সেখানে বাঘ-কুমিরের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাজ করতে হয়।' শাহাদাৎ জানান, ওই রকম অনেক ক্লোজার নির্মাণের কাজ তিনি করেছেন। পাউবোর কাছে তাঁর ১৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তাঁকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ওই টাকা না দিলে তিনি কাজ করতে পারবেন না। এ শর্তের কথা উল্লেখ করেই তিনি টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী আরেক ঠিকাদার হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মাহমুদ হাসান বলেন, পাউবো যে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক হয়নি। এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে অনেক ঠিকাদার পথের ফকির হয়েছেন। আগে তিনবার কার্যাদেশ দিয়েও তাঁরা কাজটি করতে পারেননি। তিনি বলেন, এ কাজে ঝুঁকি অনেক। আবার সরকারের ফান্ড না থাকায় কাজ করেও টাকা পাওয়া যায় না। আর এ কাজ নির্ধারিত সময়ের পর করা যায় না। কারণ সাগর উত্তাল হয়ে গেলে পানির চাপ বেড়ে যায়। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে টেন্ডার দিতে হয়। তাঁর মতে, এ বছর কাজটি না করতে পারলে আগামী বছরে ব্যয় ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আলী-উজ-জামান বলেন, পাউবো খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছে দ্রুততার সঙ্গে পাতাখালী ক্লোজার নির্মাণের জন্য। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও পানিসম্পদমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। সরকার যেকোনো মূল্যে দ্রুত বাঁধটি নির্মাণ করতে চায়। এ অবস্থায় ঠিকাদাররা কাজ করতে রাজি না হলে অন্য কোনোভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা যায় কি না তা বিবেচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে তিনি জানান।
বাঁধটি নির্মাণ না হওয়ার কারণে আড়াই বছর ধরে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের দুই হাজার হেক্টর জমি জোয়ারের পানিতে নিয়মিত প্লাবিত হচ্ছে। ওই এলাকায় একটি বড় অংশে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে ডুবে থাকার কারণে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নোনা পানির কারণে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার কারণে মাছচাষও সম্ভব হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.