রক মিউজিকের বোহেমিয়ান by কামরুজ্জামান মিলু

ম্প্রতি 'সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল'-এ গান করে এসেছে 'বোহেমিয়ান'। এর কয়েক দিন আগেই 'সিটিসেল চ্যানেল আই অ্যাওয়ার্ড'-এ সেরা ব্যান্ডের (জনপ্রিয়তায়) পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা। ব্যান্ডটিকে নিয়ে লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু ২০০৭ সালের কথা। তখন আমি লন্ডনে পড়াশোনা করি। আমি ও আমার বন্ধু মাহবুব লিমন গান লিখতাম। তাঁর সঙ্গেই প্রথম একটা ব্যান্ড গঠন করার বিষয়ে আলাপ করি।


কিন্তু নাম দেব কী! এ নিয়ে বেশ টেনশনে ছিলাম। মনে হলো সংসারজীবন থেকে সরে গিয়ে যে মানুষগুলো অন্য কিছু চিন্তা করে, তাদের জন্যই আমাদের এই ব্যান্ড। ঠিক করলাম ব্যান্ডের নাম হবে 'বোহেমিয়ান'_বলছিলেন বোহেমিয়ানের ভোকাল ও গিটারিস্ট শামস বিন কাদের। তখনো ব্যান্ডের পুরো সেট-আপ হয়নি। তত দিনে ইউকে থেকে পড়াশোনা শেষ করে আইইউবির লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছেন শামস। ফারহান ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ভালো গিটার বাজান। একসময় ফারহানই হয়ে গেলেন বোহেমিয়ানের গিটারিস্ট। এ প্রসঙ্গে ফারহান বলেন, "শামস ভাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমি ছাত্র। কিন্তু দুজনের চিন্তা ছিল গানকে ঘিরে। সেই থেকে আমিও হয়ে গেলাম বোহেমিয়ানদের একজন। তারপর থেকে আমরা একজন বেজ গিটারিস্ট খুঁজছিলাম। এরপর ফারশিদ আলমকে পেলাম। বেজ বাজানোর পাশাপাশি গানেও কণ্ঠ দেন তিনি। সব শেষে ড্রামার হিসেবে যোগ দেন লাবিব। এরপর আমাদের ব্যান্ড 'বোহেমিয়ান' স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো।"
২০০৮ সালের ২৮ জুলাই, ফাহিম মিউজিকের ব্যানারে আসে প্রথম অ্যালবাম 'ব্যবধান'। অ্যালবামের প্রডিউসার ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে কাজ করেন সংগীত পরিচালক ইবরার টিপু। অ্যালবামটিতে ছিল লিমন ও শামসের লেখা ১০টি গান। এর মধ্যে 'জীবন থেমে থাকে না', 'ব্যবধান' ও 'প্রভু' শিরোনামের গানগুলো শ্রোতার প্রশংসা কুড়ায়।
প্রথম অ্যালবামের অভিজ্ঞতা বিষয়ে ব্যান্ডের সদস্যরা বলেন, 'আমরা সবাই নতুন। কাজটি ছিল এ্রঙ্পেরিমেন্টাল। তবে শ্রোতারা গানের কথা ও মেলোডি সুর বেশ পছন্দ করেন।'
এর প্রায় দুই বছর পর ২০১০ সালে জি-সিরিজের ব্যানারে প্রকাশিত হয় তাঁদের দ্বিতীয় অ্যালবাম 'সূর্য'। এই অ্যালবামটির সাউন্ডসহ পুরো কাজটি হয়েছিল শাকের রাজার স্টুডিওতে। দ্বিতীয় অ্যালবামটিতে মূলত সফট ও হেভি মেটাল রক ধাঁচের গান ছিল। অ্যালবামের 'তোমায় নিয়ে', 'মহাজন', 'অন্ধ' ও 'মেঘলা দিন' শিরোনামের গানগুলো এফএম রেডিওতে জনপ্রিয়তা পায়। এ ব্যাপারে ফারশিদ বলেন, 'প্রথম অ্যালবামটি যেহেতু এঙ্পেরিমেন্টাল ছিল, তাই সাউন্ডের একটু ঝামেলা ছিল। দ্বিতীয় অ্যালবামটিতে আমরা সবাই অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। সবাই বুঝে-শুনে প্রতিটি গান তৈরি করেছিলাম।'
তরুণ সমাজের মনে রক মিউজিকের চিন্তা ও উৎসাহ জাগানোর চেষ্টা করে আসছে 'বোহেমিয়ান'। 'সপ্তম সিটিসেল চ্যানেল আই অ্যাওয়ার্ড'-এ সেরা ব্যান্ডের (জনপ্রিয়) স্বীকৃতি পায় তারা। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল '১১-তে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ব্যান্ড হিসেবে তারাই অংশগ্রহণ করেছিল। এই ফেস্টিভ্যালের অভিজ্ঞতায় ব্যান্ডের সদস্যদের একটাই কথা, 'আমাদের ব্যান্ড এখন আন্তর্জাতিকভাবে গান পরিবেশনা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।'
একক অ্যালবাম ছাড়া বেশ কয়েকটি মিঙ্ড অ্যালবামেও গান করেছে বোহেমিয়ান। এর মধ্যে 'বি-রক', 'চলো বাংলাদেশ' এবং ২০০৯, ২০১০, ২০১১-এর ঈদে প্রকাশিত ইকবাল আসিফ জুয়েলের '২০২-৭০৭' ভলিউমের মিঙ্ড অ্যালবামগুলো উল্লেখযোগ্য।
'বোহেমিয়ান' ব্যান্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে পরিচিত করাতে চায় রক মিউজিক দিয়ে। তাদের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডের শিল্পীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে 'ইউ টু', 'কোল্ড প্লে', 'ব্রেকিং বেনজামিন', 'কিং অফ লিয়ন'দের গান।
বর্তমানে তারা নিয়মিত ঢাকার 'ফ্যান্টাসি কিংডম', 'অল কমিউনিটি ক্লাব', 'কাপ্পা কফি ক্লাব' (গুলশান), 'র‌্যাডিসন', চট্টগ্রাম 'ফয়'স লেক'সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত শোতে অংশগ্রহণ করছে। 'রক মিউজিক আমাদের দেশে শুধু নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবাই উপভোগ করে। তাই আমরা আমাদের ব্যান্ডের নাম ও দেশের নাম সেই জায়গাটিতে পেঁৗছে দিতে চাই'_বোহেমিয়ানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এভাবেই বলেন শামস বিন কাদের। শ্রোতাদের ভালোবাসা, পরিবার ও ব্যান্ডের সবার পরিশ্রমের ফলে তাঁদের আজকের এই অবস্থান। এ জন্য শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য 'বোহেমিয়ান ব্যান্ড' নামে ফেসবুকে ব্যান্ড দলটির একটি ফ্যান পেজও রয়েছে। 'বোহেমিয়ান' ব্যান্ডটির বর্তমান ব্যান্ড লাইনআপ : শামস বিন কাদের (ভোকাল ও গিটার), মাহবুব হাসানাত ফারহান (গিটার), ফারশিদ আলম (ভোকাল ও বেজ), রাফাতুল বারী লাবিব (ড্রামস)।

No comments

Powered by Blogger.