সিপিডির আলোচনা সভায় বক্তারা-বাজার সুবিধা পেতে অশুল্ক বাধা অপসারণে জোর দিতে হবে

বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ কমে এসেছে। শুল্কের বাইরেও অনেক অশুল্ক বাধা বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বাধা দিচ্ছে। তাই যেসব অশুল্ক বাধা পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বাধা দেয়, সেসব বিষয় আসন্ন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাবি্লউটিও) অষ্টম মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বাজার সুবিধা পেতে শুল্কের ওপর জোর না দিয়ে অন্যান্য অশুল্ক বাধার ওপর জোর দিতে


হবে। কাজেই সম্মেলনে বাংলাদেশের উচিত অশুল্ক বাধা অপসারণে শক্ত অবস্থান নেওয়া। আগামী ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে ডাবি্লউটিওর অষ্টম মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক (এমসি-৮)। সদ্য বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ বৈঠকে অংশ নেবে। এ সফরকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে এক গোলটেবিল আলোচনায় আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আলোচনায় বক্তারা চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাথ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, এবারের বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া দরকার, তা আদায়ের চেষ্টা করব। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দোহা ঘোষণা কর্মসূচি (ডিডিএ) অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করবেন বলে জানান ফারুক খান। তা ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সেবা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে বলে জানান তিনি।
সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'বিশ্ব অর্থনীতির এখন যে ধরনের টালমাটাল অবস্থার ভেতরে আছে, সেখানে আমাদের বিনিয়োগের দরকার, বাণিজ্য সম্প্রসারণের দরকার, কর্মসংস্থান দরকার। সাধারণভাবে লোকজনের কাছে দোহা আলোচনা হলো উন্নয়নের আলোচনা। এ ক্ষেত্রে আমরা কেউ মৃত দোহার দায়িত্ব নিচ্ছি না। আবার কেউ বিকল্পও খুঁজছে না। সে ক্ষেত্রে আমাদেরই বিকল্প খোঁজার দায়িত্ব নিতে হবে। '
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ডাব্লুউটিওর আগামী সপ্তাহের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের প্রেক্ষাপট অত্যন্ত জটিল। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের মন্দাবস্থা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ঋণসংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। চীনের অর্থনীতিতে আবারও মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
দেবপ্রিয় আরো বলেন, বাণিজ্য পরিবেশের মধ্যেও একধরনের নেতিবাচক প্রবণতা চলছে। সংরক্ষণবাদের পক্ষে আগের মতো বড় দেশগুলোর বক্তব্য কমে গেছে। বিভিন্ন দেশ বাণিজ্য সংকুচিত করছে। বিশেষ করে রপ্তানি আটকে দেওয়ার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের মতো দেশের জন্য খাদ্য নিরপত্তা ও কাঁচামাল পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করছে। আফ্রিকার সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর সার্থের বৈপরীত্য আমরা লক্ষ করছি। সব মিলিয়ে পুরো পরিস্থিতি জটিল বলে মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, গত ১০ বছর আগে ডাবি্লউটিওর যে দোহা আলোচনা শুরু হয়েছিল, তা সম্পন্ন করা যায়নি। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের অর্থনীতির বেশ পরিবর্তন হয়েছে। ডাবি্লউটিওর ভেতরে সদস্য পদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেসব বিষয়ে মনে করা হতো সমঝোতা সম্ভব, সেগুলোও এখন দুর্বল হয়ে গেছে। সেহেতু এখন দোহা আলোচনা কার্যত নিস্তেজই নয়, মৃত প্রায়। এই রকম একটি পরিস্থিতিতে স্বল্পোন্নত দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ কী ধরনের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারে_সেটাই এবারের ডাবি্লউটিও সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ড. দেবপ্রিয় আরো বলেন, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব উন্নত দেশে এমনকি উন্নয়নশীল দেশে পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সুবিধা বাংলাদেশ পেয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য নিত্যন্তই একটি রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, শুল্কের বাইরে যেসব বিষয় বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, বাংলাদেশকে সেদিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশের পণ্যের গুণগত মান নিয়ে যে সমস্যা হয়, মেধাস্বত্ব আইনের সঙ্গে যেসব বাধা, পণ্যমান নিয়ে অশুল্ক বাধা হয়_এগুলোর প্রতি নজর দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'বাণিজ্য সম্প্রসারণে আরো আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। ডাবি্লউটিও সব সময়ই বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে উৎসাহ দিয়ে আসছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক ডাবি্লউটিও অ্যাম্বাসেডর ড. তৌফিক আলী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.