'ভ্যাট' নিয়ে মোবাইল কোম্পানি বিটিআরসি টানাপড়েন-গ্রামীণফোনের কাছেই ৯০ কোটি টাকা পাওনা by সজল জাহিদ

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর আয় ভাগাভাগি নিয়ে নতুন টানাপড়েন শুরু হয়েছে। আয়ের ভাগাভাগিতে ভ্যাটের অংশ কার হিসাব থেকে যাবে তা নিয়ে দু'পক্ষের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যায় এক বছরে ১৭৪ কোটি টাকার সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। টাকা বুঝে পেতে বিটিআরসি অপারেটরগুলোকে পাঁচ দফা চিঠি লিখেছে। বিষয়টির সমাধানে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে মধ্যস্থতা করতে হচ্ছে।


নিয়ম অনুসারে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর আয়ের সাড়ে পাঁচ শতাংশ বিটিআরসি পায়। এ লেনদেনের ওপরেও ভ্যাট দিতে হয়। জানা গেছে, মোবাইল ফোন অপারেটররা এত দিন বিটিআরসির প্রাপ্য অর্থ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রেখে বাকি টাকা জমা করেছে। প্রদেয় অর্থের ৮৫ শতাংশ বিটিআরসিকে দিয়ে বাকি ১৫ শতাংশ তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা করেন। বিটিআরসি এটি মানতে রাজি নয়। তারা বলছে, তাদের প্রাপ্য অর্থ থেকে একটি পয়সাও কেটে রাখা যাবে না। ভ্যাট দিতে হলে মোবাইল অপারেটররা দেবে।
বিটিআরসির দাবি, শুধু ২০১০-১১ অর্থবছরে ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটর তাদের অন্তত ১৭৪ কোটি টাকা কম দিয়েছে। এর মধ্যে কেবল গ্রামীণফোনের কাছেই বিটিআরসির ৯০ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। বাংলালিংকের কাছে ৩৮ কোটি টাকা। রবির কাছে ৩০ কোটি টাকা। অপর তিন অপারেটর এয়ারটেল, সিটিসেল এবং টেলিটকের কাছে পাওনা যথাক্রমে ১০ কোটি, ৫ কোটি ও ১ কোটি টাকা।
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১৭৪ কোটি টাকার এই সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়। আগামী নভেম্বরে পুরনো চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের লাইসেন্স নবায়নের আগেই এ পাওনা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে পুরনো সব পাওনা পরিশোধ করা অন্যতম শর্ত বলে জানান বিটিআরসির এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ সমকালকে বলেন, তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে তারপর অন্য কারও পাওনা থাকলে তা দেবে অপারেটররা। বিটিআরসির টাকা নিয়ে অন্যের মুখ বন্ধ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বলছে, প্রচলিত নিয়ম এবং আইন মেনেই এ বিষয়ে কাজ করেছে তারা। রবির ডেপুটি সিইও এবং চিফ ফাইন্যানসিয়াল অফিসার মাহতাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রচলিত আইন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দিকনির্দেশনা অনুসারে তারা বিটিআরসির সঙ্গে সব লেনদেন করছেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। গত এক বছর ধরে প্রশ্ন ওঠার ক্ষেত্রে কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
এছাড়া একটি অপারেটরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ খাতে নিয়ম-শৃঙ্খলা স্থাপনের চেয়ে আয়ের দিকে অনেক বেশি মনোযোগী। নতুন নতুন ফাঁকফোকর বের করে টাকা আয় করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, নভেম্বরে লাইসেন্স নবায়নে স্পেকট্রাম মূল্যের ওপর ভ্যাট দিতে হলে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং সিটিসেলকে বাড়তি অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা
গুণতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.