আন্দোলনে গতিহীনতায় হতাশ খালেদা জিয়া-ফখরুল বললেন, সবই অপপ্রচার by মোশাররফ বাবলু

রকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোডমার্চ, সভা-সমাবেশ এমনকি হরতালের মতো জোরালো কর্মসূচি দিলেও বিএনপির আন্দোলন যেন দানা বাঁধছে না। সাময়িকভাবে গতি পেলেও পরক্ষণেই ঝিমিয়ে পড়ছে। সর্বশেষ ঢাকা বিভক্তির প্রতিবাদে গত রবিবার রাজধানীতে আহূত হরতালে নেতা-কর্মীদের ঢিলেঢালা তৎপরতায় আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আন্দোলনের দৈন্যদশা। এ দিন বিএনপির পাশাপাশি জোটের শরিক ও সমমনা দলের নেতারাও


মাঠে ছিলেন না। আন্দোলনের এমন গতি-প্রকৃতিতে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিএনপির সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
হরতালের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে যান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা। চেয়ারপারসন এ সময় ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এভাবে কর্মসূচি পালন হলে আন্দোলন জোরদার হবে কিভাবে। তিনি আগামী দিনগুলোতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদারের নির্দেশ দেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ঢাকায় গত রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে চারদলীয় জোটের অন্য শরিক ও সমমনা দল এবং বিএনপি ঘরানার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও হরতালের প্রতি সমর্থন দেয়। কিন্তু হরতালের মাঠে সমর্থনের প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাসহ হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি, জোটের শরিক ও সমমনা দলের নেতারাও মাঠে ছিলেন না।
হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীশূন্যতা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হরতালে দলের দায়িত্বশীল নেতা, শরিক ও সমমনা দলের নেতারা ইচ্ছে করে মাঠে ছিলেন না_এমন নয়। মোটামুটি সবাই ছিলেন। কিন্তু কাউকেই মাঠে নামতে দেয়নি সরকার। আর রবিবারের হরতাল শরিক ও সমমনা দলের ছিল না। তারা সমর্থন জানিয়েছিল মাত্র। তাদের মাঠে থাকার কথাও ছিল না।' হরতাল সফল না হওয়া ও সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার না হওয়ায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মনোক্ষুণ্ন ও হতাশ হয়েছেন_এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'সবই অপপ্রচার।'
নেপথ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব?
বিএনপির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে অনেক দিন ধরেই। বিশেষ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। সাদেক হোসেন খোকাকে ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্যসচিব করার পরও এই দুই নেতার বিরোধের অবসান হয়নি। এর পাশাপাশি ঢাকা জেলা কমিটি নিয়ে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে ঢাকা জেলা সভাপতি আবদুল মান্নানের এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের দ্বন্দ্ব চলছে। সম্প্রতি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমানের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কারণে এ নিয়ে বিএনপির কোনো আন্দোলন কর্মসূচি নেই।
আন্দোলনে সবাই মাঠে নামছে না কেন_এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত মত হলো, হয়তো কোথাও একটা গলদ আছে। এ নিয়ে চেয়ারপারসন হতাশ কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'উনি হতাশ নন, হয়তো কিছুটা মনোক্ষুণ্ন। তবে পর্যায়ক্রমে আন্দোলন জোরদার হবে।'
স্থায়ী কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিসিসি বিভক্তির প্রতিবাদে বিএনপির সবাই ঐক্যবদ্ধ নয়। সাদেক হোসেন খোকা মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালে বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কমিশনাররা তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু খোকা বর্তমানে মেয়র নেই। প্রথম দিকে ডিসিসি ভাগের বিরোধিতায় বিক্ষোভ মিছিল করলেও উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের পর তাঁদের অনেকেই কেটে পড়েছেন। যার কারণে হরতালের দিনে ওয়ার্ড কমিশনাররা অনেকেই মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন। সম্ভবত এ জন্যই আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না।
শরিক ও সমমনারা কথায় আছে, কাজে নেই জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের গত হরতালে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী মুখে বড় বড় কথা বললেও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামেননি। বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ও মহাসচিব শামীম আল মামুন হরতালের পক্ষে বিবৃতি দিলেও হরতালের দিন মাঠে ছিলেন না। একইভাবে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির শেখ শওকত হোসেন নীলু, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গণি বক্তৃতা-বিবৃতিতে থাকলেও সক্রিয় আন্দোলনে রাজপথে পা ফেলছেন না। অন্যান্য সমমনা দল লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ও ইসলামিক পার্টির নেতাদের পক্ষে মাঠে সচেষ্ট থাকার বিবৃতিই সার। তাঁরা বরং হরতালের দিন ঘরে বসে টিভিতে 'ব্যর্থ' হরতালের চিত্র উপভোগ করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.