অন্ধকারেই সব শেষ by ইমাম হোসাইন সোহেল

কাকডাকা ভোর থেকে তাদের অপেক্ষা। একটি টিকিট যদি অন্তত পাওয়া যায়! কিন্তু সোনার সে হরিণের দেখা পাননি দর্শকদের অনেকেই। শেষ পর্যন্ত মারামারি, আহত হওয়া_ কোনো কিছুই বাদ যায়নি। তবু যারা টিকিট পেয়ে গ্যালারিতে ঢুকতে পেরেছিলেন, হতাশ হয়েই ফিরতে হলো তাদের। মাত্র ১৭৭ রানে পাকিস্তানকে বেঁধে ফেলার পর এক ঝটকায় তামিম ইকবালের উইকেট হাওয়া হয়ে যাওয়ার পর শাহরিয়ার নাফীস আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রুখে
দাঁড়িয়েছিলেন পাকিস্তানিদের বিপক্ষে। তাতে স্বপ্ন দেখাও শুরু হয়েছিল; কিন্তু সে স্বপ্ন হঠাৎ ঢেকে গেল গভীর অন্ধকারে। যেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত হার ৫৮ রানে। সে সঙ্গে ৩-০-তে সিরিজ হেরে হোয়াইটওয়াশের লজ্জাতেই পড়তে হলো বাংলাদেশকে।
১৭৭ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই বোল্ড তামিম ইকবাল। এরপর নাফীস-রিয়াদ মিলে বাংলাদেশ শিবিরে জ্বালিয়ে তুলেছিলেন আশার আলো। কিন্তু হঠাৎ নিভে গেল ফ্লাডলাইটের আলো। সে সঙ্গে নিভে গেল বাংলাদেশের সব সম্ভাবনার আলোও। স্কোর বোর্ডে বাংলাদেশের রান তখন ১৫ ওভারে ১ উইকেটে ৬১। অন্ধকার গ্যালারিতে জ্বলে উঠেছিল ২৪ হাজার দর্শকের মোবাইল ফোনের আলো। তাতে কতটুকুই বা অন্ধকার দূর হয়!
১০ মিনিট পর আলো ফিরে এলো, ১৫ মিনিট পর শুরু হলো খেলা। কিন্তু এরপর বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা পুরো ইনিংসজুড়েই মিটিমিটি জ্বললেন দর্শকদের মোবাইল ফোনের আলোর মতো। জয়ের জন্য যা কোনোভাবেই যথেষ্ট ছিল না। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহও বললেন, 'হঠাৎ অন্ধকারই পাল্টে দিয়েছে সব। আমরা এ সুযোগে নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে পেরেছি। খেলা শুরু হওয়ার পর উইকেট টু উইকেট বল দিয়েছি, প্রচুর ডট বল খেলিয়েছি। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা সফল।' মুশফিকুর রহিম বললেন, 'এটা একটা কারণ অবশ্যই। আমরা জয়ের দিকেই যাচ্ছিলাম। তবে খেলায় এরকম বিরতি পড়তেই পারে। তাতে মানিয়ে খেলতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা সেটা পারিনি।' বিদ্যুৎ বিভ্রাট ব্যর্থতার একটা কারণ হতেই পারে। তবে পুরো সিরিজে যেভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতা চলছিল, শেষ ওয়ানডেতেও সেটা থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে মুশফিকের কণ্ঠে সেটারই স্বীকৃতি। 'আমার দলই নয় শুধু, আমি নিজেও যেন ব্যাটিং ভুলে গেছি। রানের মধ্যে না থাকায় আমরা ব্যাটসম্যানরা মানসিক দুর্বলতায় ভুগছি। শট সিলেকশন ভুল হচ্ছে।' পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহও একই কথা বললেন, 'বাংলাদেশ খুব ভালো বোলিং করেছে। তবে তাদের ব্যাটিং খুবই দুর্বল। আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তাদের এ ব্যাপারে আরও উন্নতি করতে হবে।'
চট্টগ্রাম বলেই স্বপ্ন দেখা। সৌভাগ্যের এই ভেন্যুতে যদি শেষ ম্যাচটি অন্তত জেতা যায়! টস জিতে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামার পর ৩৯ রানে তিন উইকেট ফেলে দিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন বোলাররা। মাঝপথে মিসবাহ (৪৭) আর উমর আকমল (৫৭) ৯৪ রানের জুটি গড়লেও শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রানে বেঁধে ফেলার পর বিজয়ের মাসে পাকিস্তানিদের বিপক্ষে আরও একটি বিজয় আসবে ভেবেছিলেন চট্টগ্রামের দর্শকরা। কিন্তু জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামার পর মোহাম্মদ হাফিজের প্রথম বলেই তামিম ইকবালের বোল্ড হয়ে যাওয়া দেখে দীর্ঘশ্বাস বাড়তে শুরু করে দর্শকদের মধ্যে। এরপর শাহরিয়ার নাফীস আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬৯ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন। ৬৯ থেকে ৮৩, এই ১৪ রানের মধ্যে বিদায় নেন ৫ জন ব্যাটসম্যান। সর্বশেষ ৩ রানে আউট হন চারজন। ব্যাটসম্যানদের এ ব্যর্থতার মিছিল শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শুরু থেকে। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং ব্যর্থতায় পূর্ণ হলো হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। চট্টগ্রামের স্পিন ট্র্যাককে কাজে লাগাতে পাঁচজন স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান। সাঈদ আজমল, আবদুর রেহমান, আফ্রিদি, হাফিজ এবং শোয়েব মালিক। তাদের মধ্যে আফ্রিদি ছাড়া বাকি চারজনই ভাগ করে নেন বাংলাদেশের ১০ উইকেট।

No comments

Powered by Blogger.