সড়ক দুর্ঘটনা-আর কত দীর্ঘ হবে মৃত্যুর মিছিল

কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে। এবার রংপুরে প্রাণ গেল ছয় বাসযাত্রীর। আহত হয়ে হাসপাতালে ২০ জন। দেশের সড়কপথ যে আর নিরাপদ নেই, সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কতজনকে পঙ্গু জীবন বরণ করতে হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না।


দেখা যাবে সরকারি জরিপের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার জরিপের মিল নেই। ঘাতক চালকরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঘটনাক্রমে কাউকে কখনো আটক করা হলেও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে না। আর জামিন না হলে ধর্মঘট তো আছেই।
গত ঈদের ছুুটিতে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে রংপুরেই বাস উল্টে গেলে মৃত্যু হয় ছয়জনের। একেকটি দুর্ঘটনা একেকটি সম্ভাবনার অকালমৃত্যু ডেকে আনে। সড়ক দুর্ঘটনা কত পরিবারকে যে পথে বসিয়ে দিয়েছে, তারও কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না। অথচ প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে কত হ্যাপি, সম্রাট, হামিমকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। প্রাণ দিতে হচ্ছে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের মতো প্রতিভাবান মানুষকে। একেকটি সড়ক দুর্ঘটনা থেকে অনেক পরিবার অসহায় অবস্থায় পড়লেও অবৈধ চালকের সংখ্যা কমেনি। দেশে বৈধ গাড়ির সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি। কিন্তু এই গাড়ির জন্য বৈধ চালকের সংখ্যা মাত্র আট লাখ। বাকি গাড়ি যাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বৈধ নয়। অনেকের একাধিক লাইসেন্সও আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবৈধ লাইসেন্সধারী গাড়িচালকরা গাড়ি চালাতে গিয়ে আইনের ধার ধারেন না। সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত নন_এমন চালকের সংখ্যাও কম নয়। আবার এই চালকদের পেছনে আছে শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতা। এই পৃষ্ঠপোষকরা অবৈধ ও প্রশিক্ষণ না পাওয়া চালকদের পক্ষে তদবিরে ব্যস্ত। চালকরাও তাই বেপরোয়া। সড়ক দুর্ঘটনার পর অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে করা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, চালকের শাস্তি হয়েছে_এমন নজির বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের প্রচলিত আইনে চালকদের বেশি দিন আটকে রাখা যায় না।
আমাদের সড়ক আজ পর্যন্ত নিরাপদ হলো না। সড়কপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেল না। সড়কপথে কোথাও যাওয়া মানেই যেন প্রাণ হাতে নিয়ে বের হওয়া। সরকারি হিসেবেই দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা হয়, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে বাংলাদেশে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় পথচারীদের কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবার আগে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ। ট্রাফিক আইন আরো কঠোর করতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। লাইসেন্সবিহীন চালকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আমাদের সড়কগুলো নিরাপদ করা না গেলে ভবিষ্যতে দুর্গতি আরো বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.