অচিরেই বিশ্বব্যাংকের সবুজ সংকেত

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বদলের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কেটে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় স্থগিত রেখেছিল। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর গতকাল অর্থমন্ত্রী ও নবনিযুক্ত যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনার পর অর্থছাড় দ্রুত হবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থছাড়ের সবুজ সংকেত শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।


বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাচ্ছি। সেখানে বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা তুলে ধরব। একই সঙ্গে তিনি এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গতকাল দুপুরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দ্রুত অর্থছাড় করা হবে বলে যোগাযোগমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর। সচিবালয়ে মন্ত্রীর অফিস কক্ষে প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনায় মূলত পদ্মা সেতু প্রকল্প প্রাধান্য পায়। যোগাযোগমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের উদ্দেশে বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর সফল বাস্তবায়নে আন্তরিক সহযোগিতা চান তিনি। জবাবে অ্যালেন গোল্ডস্টেইন মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। শিগগিরই অর্থছাড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খোন্দকার আনোয়ার উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সব জটিলতার শিগগির অবসান হচ্ছে। দ্রুত বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় করবে বলে কান্ট্রি ডিরেক্টর আশ্বস্ত করেছেন। এ ব্যাপারে শিগগির তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কান্ট্রি ডিরেক্টর এ মর্মে আশ্বস্ত করেছেন, অন্যান্য দাতা সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা করে দ্রুত সমাধান দেওয়া হবে। তবে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করাই হবে তার অগ্রাধিকারমূলক কাজ। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিককে জানানো হলে তিনি ইতিবাচক মন্তব্য করেন। ১৫ ডিসেম্বর
বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। ওই সভায় যোগ দিতে কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন কাল শুক্রবার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। বোর্ডসভায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থছাড়ের বিষয়টি কান্ট্রি ডিরেক্টর তুলে ধরবেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের যোগাযোগ খাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অবহিত করবেন তিনি। অ্যালেন ঢাকায় ফিরে আসার পরই অর্থছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রক্রিয়াগত কারণে অর্থছাড় হতে একটু সময় লাগবে। সূত্রটি বলেছে, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ কার্যকারিতার মেয়াদ রয়েছে। কাজেই সরকারের হাতে এখনও সময় আছে। এর আগেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় তিন বছরের মাথায় সোমবার তার মন্ত্রিসভায় রদবদল করেন। সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে নবগঠিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করায় পদ্মা সেতু নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
সেতুর নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি কানাডীয় কোম্পানি নীতিবহির্ভূত কাজ করেছে বলে বিশ্বব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ চাওয়া হয়েছে বলে সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন সাকো ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এর পরপরই বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম এ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক লিড এজেন্সি হিসেবে কাজ করছে। ২৯০ কোটি ডলার বা ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা বিশ্বব্যাংকের, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ। যৌথ অর্থায়নের কারণে অন্য দাতা সংস্থা এডিবি, জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকও তাদের অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মধ্যে এ সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
জানা গেছে, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক কাজী আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি ঢাকা এসেছেন। এ সময় তিনি অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকে পদ্মা সেতু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। কাজী আমিনুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সৃষ্ট জটিলতা প্রক্রিয়াগত সমস্যা। পদ্মা সেতু হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এ ধরনের বড় প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হলে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। কাজেই অর্থছাড়ে একটু সময় লাগবে।
পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটনে সরকার যে চিঠি পাঠিয়েছিল, তার জবাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সবসময়ই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.