কোচ যা শিখিয়েছেন তার চেয়ে বেশি ভুলিয়েছেন!

ড়ি-মরি করে ঢাকা থেকে ত্রাতা হয়ে এসেও বাদল রায় ঠেকাতে পারেননি দলের পতন। খেলোয়াড়দের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভুলিয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাঠে নামিয়েও পারেননি দলকে সেমিফাইনালে তুলতে।\ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে অন্য রকম ভাব ধরেছিলেন নিকোলা ইলিয়েভস্কি। কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মালদ্বীপের কোচের সামনে থেকে ট্রফিটা নিয়ে রেখেছিলেন নিজের সামনে।


আকারে-ইঙ্গিতে বোঝানো যে, তাঁর দল ফেভারিট। সেই মালদ্বীপের কাছে ৩-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পরও বাংলাদেশের এই কোচ এতটুকু লজ্জিত নন। তিনি দায় চাপাচ্ছেন ফুটবলারদের ঘাড়ে আর তাঁরা অনাস্থা আনছেন এই মেসিডোনিয়ান কোচে। দ্বিপক্ষীয় এই চাপান-উতোরের মধ্যে এসে হাজির হয়ে বাদল রায় দেখেছেন শেষ ম্যাচটি। আর সেই ম্যাচ দেখে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যানের মনে প্রশ্ন জাগল, 'ডিফেন্স ঠিকঠাক না করে কোচ এটা কী দল তৈরি করেছেন, কী তাঁর স্ট্র্যাটেজি বুঝি না। দুই গোল খাওয়ার পর ভালো বল পজেশন দিয়ে আর কী হবে! এক আশফাকেই ম্যাচ শেষ হয়ে গেল, তাঁকে আটকানোরও কোনো স্ট্র্যাটেজি দেখলাম না।' মালদ্বীপের এই ফরোয়ার্ড এক গোল বানিয়ে দিয়ে, একটি নিজে করে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
গ্রুপের শেষ ম্যাচটি দেখে এবং দলের সঙ্গী হওয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে বাদল বুঝতে পেরেছেন এই দলের আসল সংকট হলো দল হয়ে খেলতে না পারা, 'গত ছয় মাসে কোচ একটা সেরা একাদশ দাঁড় করাতে পারেননি। টুর্নামেন্টেও দেখলাম প্রতি ম্যাচেই তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।' গত জুনে এই মেসিডোনিয়ান কোচ দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের। পাকিস্তান ও লেবাননের বিপক্ষে কাজ করারও সময়-সুযোগ পাননি সেভাবে। তখন স্থানীয় কোচ জিলানীই ছিলেন তাঁর মূল পরামর্শক এবং বাংলাদেশ জিতেছিল পাকিস্তান ও লেবাননের বিপক্ষে। যখনই জিলানী নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ইলিয়েভস্কি দলটিকে নিজের মতো করে তৈরি করলেন, তখন দেখা গেল এই দল ছন্নছাড়া। দলের এমন অধঃপতনে কোচের পরোক্ষ জবাব হলো, 'ম্যারাডোনাও ২৫ বছর আগে মাঠ কাঁপাত।' যার অর্থ হলো, চার মাসের ব্যবধানে লেবানন-জয়ী দলের এমন অবস্থা হতেই পারে। দলের ডিফেন্ডার আরিফুল ইসলাম এ জন্য কোচকেই দায়ী করেছেন, 'এই কোচের কাছে শেখার কিছু নেই। উনি যা শেখায় তার চেয়ে ভোলায় বেশি। তাঁর সামনে ভয়ে থাকে সব খেলোয়াড়।' এই কোচের হাতে সর্বশেষ লেবাননের বিপক্ষে জয়ী ম্যাচের 'উইনিং কম্বিনেশন' ভেঙে চুরমার, প্রত্যেক ম্যাচের একাদশ হয়েছে কোচের নতুন পরীক্ষার একাদশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন তরুণের সিনিয়র দলে অভিষেকের পর নেপাল ও মালদ্বীপের ম্যাচেও তিনি চারটি করে পরিবর্তন এনেছিলেন একাদশে। দিল্লি আসার পর যে ছয়টি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে সেখানেও অব্যাহত ছিল তাঁর পরীক্ষা। প্রতি ম্যাচেই নিত্যনতুন একাদশ, স্বাভাবিকভাবে দলটি হবে পারস্পরিক বোঝাপোড়াহীন।
সেই দলের নিয়তি যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। নিকোলা ইলিয়েভস্কি সংবাদ সম্মেলনে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন কয়েকজনের ইনজুরিকে, 'মোনায়েম খান রাজু, ওয়ালী ফয়সাল, মারুফ ও শাকিল ইনজুরির কারণে দলে নেই। তা ছাড়া লিগ হচ্ছে না গত পাঁচ মাস ধরে। এসব কারণে খেলোয়াড়রা আনফিট এবং আমি এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আশাবাদী হইনি।' এটা শুনে বাদল রায় হাসলেন। কারণ লিগ চালু না করে সাফের প্রস্তুতির জন্য এই কোচের হাতে দল তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এই দলের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল, মাঝে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য ব্যস্ততা থাকলেও প্র্যাকটিসে ছিল সিনিয়র দল। অথচ ইলিয়েভস্কি কিনা বিদেশে মিথ্যাচার করে গেছেন। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে কত কিছুকে ঢাল হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন !
বাংলাদেশের গ্রুপের সব কোচই বিদেশি। মালদ্বীপের হাঙ্গেরিয়ান কোচ স্তেফান উর্বানী চার সপ্তাহ আগে দায়িত্ব নিয়ে দলকে তুলে নিয়েছেন সেমিফাইনালে। পাকিস্তান বিদায় নিলেও মাত্র তিন সপ্তাহে সার্বিয়ান জেভিসার অধীনে থেকে অপরাজেয়। আর ইলিয়েভস্কি ছয় মাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি বিজয়ী দলকে হারতে শিখিয়েছেন। এই মেসিডোনিয়ানের অসীম ক্ষমতা!

No comments

Powered by Blogger.