সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েও by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

কটু তফাত রেখেই পুরস্কার মঞ্চের পাশাপাশি দুই দলের মেয়েরা দাঁড়িয়ে। ক্যারিবিয়ান মেয়েদের চোখে-মুখে তখন পিছলে পড়ছে বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ায় আনন্দ। আর মুখ শুকনো করে তার কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশি মেয়েরা। সারাদিন খাটুনির পর ৮০ রানের হার, সালমাদের দুঃখটা পড়ে নিতে পেরেছিলেন বিসিবির এক কর্মকর্তা। 'একবার তাকিয়ে দেখুন। ওরা (ক্যারিবীয়রা) আমাদের চেয়ে শারীরিক গঠনেই অনেকটা এগিয়ে। শারীরিক শক্তিতে


ওরা পেরে ওঠেনি ক্যারিবীয়দের কাছে।' শুধু বিসিবি কর্মকর্তাই নন, প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও সালমাদের অসহায়ত্ব আন্দাজ করতে পেরেছিল। রুমানা আহমেদের নামটি কিছুতেই ঠোঁটের আগায় আনতে পারছিলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক মার্সিয়া রিয়া আগুয়েলিরিয়া। 'মেয়েটি চশমা পরে বোলিং করেছিল। দুটো উইকেটও পেয়েছে। দারুণ বোলিং করেছে সে। এ টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলিংই সবচেয়ে ভালো লেগেছে আমার কাছে। দলটি উন্নতি করছে। ভবিষ্যতে বেশ ভালো করবে বাংলাদেশ।' ২০১৩ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ক্যারিবীয় অধিনায়ক যখন বিপক্ষ দল সম্পর্কে এমন কথা বললেন তখন সালমাদের হারের ক্ষতটা অনেকটাই কমে যায়।
গতকালই টুর্নামেন্টের দুই গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলে। এখন বাংলাদেশের যদি শ্রীলংকাকে হারাতে পারে, তাহলে সালমারাও বিশ্বকাপের টিকিট পাবে। আর ওই ম্যাচটি হেরে গেলেও ২৪ নভেম্বর আমেরিকার বিপক্ষে খেলতে হবে। ওই ম্যাচটি জিততে পারলে ওয়ান স্ট্যাটাস নিশ্চিত হয়ে যাবে সালমাদের। গতকাল মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচটি সালমাদের কাছে তাই নেহাতই নিয়মরক্ষার ম্যাচ ছিল।
সকালে ক্যারিবিয়ান ওপেনার নিরোকে ২৭ রানের মধ্যে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েও বেশ নড়ে-চড়ে উঠেছিলেন সালমারা; কিন্তু আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটার স্টেফানি টেলর আর ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান ডেলি দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৮৪ রান করে ফেলার পর কিছুটা খেই হারিয়ে বসেন ফিল্ডাররা; এরপর দলের একমাত্র লেগ স্পিনার রুমানা আর ফর্মে থাকা খাদিজা কুবরাকে এনে ফের ক্যারিবিয়ান ইনিংসের লাগাম টেনে ধরেন সালমা। ১৭৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের ইনিংস শেষ করেছিল ৮ উইকেটে ২১৭ রান নিয়ে। দলের স্কোর দুশ' পার করার পরই ক্যারিবিয়ান দ্বীপের মেয়েরা বুঝে যান, ম্যাচটি আর ধরতে পারবে না বাংলাদেশিরা। হয়েও ছিল তাই। প্রথম ওভারেই শুকতারা সোজা ব্যাটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৭ রান তুলে নেন। শুধু ওই ওভারেই মনে হয়েছিল, জয়ের জন্য খেলতে নেমেছেন ঘরের মেয়েরা। ম্যাচের বাকিটা সময় উদ্দেশ্যহীনভাবে ৫০ ওভার ক্রিজে কাটানোর লক্ষ্য নিয়ে খেলতে থাকেন তারা। বোলিং পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৮ রান আর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে ১১ রান নিয়ে ২ উইকেট হারিয়ে বসেন। ওখানেই সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে।
ম্যাচ শেষে এগারোটি শুকনো মুখ এক জায়গায় করে কোচ মাবেন সান্ত্বনা দিয়েছিলেন মেয়েদের_ 'দেখুন, আমাদের মেয়েদের যতটা সামর্থ্য আছে তার সবটুকু দিয়েই এই ম্যাচটি খেলেছে। আমাদের হাতে হাফ সেঞ্চুরি করার মতো চার-পাঁচজন ব্যাটসম্যান নেই। তারপরও যতটুকু আছে, তার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছে মেয়েরা। এতেই আমি খুশি। শ্রীলংকাকে হারাতে পারলেই বিশ্বকাপের টিকিটসহ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে যাব আমরা, এটা মেয়েরা জানে। তাছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শ্রীলংকা আমাদের কাছে অচেনা দল নয়। এ টুর্নামেন্টের আগেও তাদের সঙ্গে আমরা চারটি ম্যাচ খেলেছি। দলটির ভালো-মন্দ আমাদের মেয়েরা জানে। ' ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও টিম স্পিরিট দিয়েই দিনের শুরুতে বোলিংটা ভালো করেছিল ঘরের মেয়েরা। ' একটু খেয়াল করেন, এ আসরে এখনও পর্যন্ত আমরা কেউই একটাও ছক্কা হাঁকাতে পারিনি। অথচ এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছে...' সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসার পর ভেতরকার অসহায়ত্বটা চাপা দিতে পারেননি সালমা।

No comments

Powered by Blogger.