বিপর্যস্ত ফেসবুক by রাশেদ মেহেদী

প্রায় ৮০ কোটি মানুষের মিলনমেলা ফেসবুক এখন চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি মাস নভেম্বরেই ফেসবুকের প্রায় ১ কোটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২ নভেম্বর রাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৬০ লাখ অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়। ফলে হ্যাকারদের হামলায় অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেসবুক। বিষয়টি স্বীকার করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে।
এ জন্য ব্যবহারকারীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ফেসবুকে ব্যক্তি তথ্য সংযোজন, আদান-প্রদান, এমনকি চ্যাট বক্সের মাধ্যমে আলাপচারিতাও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে ব্যবহারকারীদের জন্য। মুহূর্তেই ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুক থেকে চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের কাছে। এ জন্য ফেসবুকে একান্ত ব্যক্তিগত কোনো কিছু শেয়ার না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ কোটি। বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে।
যেভাবে হ্যাক হচ্ছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট : ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার চলতি বছরেই ফেসবুক সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। আর এর প্রধান কারণ একদল সুচতুর হ্যাকারের ধারাবাহিক হামলা। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়া নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে চলতি মাসে। দু'সপ্তাহ আগে ভারতের ব্যাঙ্গালোরের ব্যবহারকারীরা টের পান, তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অন্য কেউ পরিচালনা করছেন, প্রোফাইল ছবি পরিবর্তনসহ নানা অসংগতিপূর্ণ ছবি ও তথ্য ওয়ালে পেস্ট করছেন। পরে দেখা যায়, ব্যাঙ্গালোরের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন। এর কয়েক দিন পর ১২ নভেম্বর রাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৬০ লাখ অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়। এটিই ছিল ফেসবুক ইতিহাসে একই সময়ে সবচেয়ে বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনা। আর এ কারণেই গত সপ্তাহজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ফেসবুক নিরাপত্তার বিষয়টি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ফেসবুক হ্যাকিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে কিলগার নামে একটি সফটওয়্যার। সম্প্রতি কিলগার ছাড়াও ফেসবুক হ্যাকিং নামে একটি বিশেষ ধরনের 'জিপ ফোল্ডার' ব্যবহার করছেন হ্যাকাররা। ফেসবুক হ্যাকিংয়ের দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অনেক সহজ এবং বিপজ্জনক। এ ফোল্ডারে দুটি ফাইল থাকে। এ দুটি ফাইল হ্যাকারদের ওয়েব হোস্টিং সাইটে আপলোড করে এর একটি লিংক যার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হবে, তার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাধারণত মেসেজ অপশন ব্যবহার করে। হ্যাকার তার কাঙ্ক্ষিত অ্যাকাউন্টধারীর ফেসবুক বন্ধু হলে তার ওয়ালেও পেস্ট করে দেয়। আর ওই লিংকটিতে ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্লিক করা মাত্র তার ই-মেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড চলে যাবে হ্যাকারের ওয়েব হোস্টিং পাতায় 'ঢ়ধংংবং.ঃীঃ' ফাইলে। হ্যাকার ফাইলটি খুলে তার কাঙ্ক্ষিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টধারীর পাসওয়ার্ড পেয়ে যাচ্ছেন আর দখলে নিচ্ছেন অ্যাকাউন্টটি। একই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাকাউন্টও হ্যাকারদের দখলে চলে যাচ্ছে। অনেক হ্যাকার বিভিন্ন ব্লগে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ট্রিকস হিসেবে বিশেষ জিপ ফোল্ডারটি আপলোড করে রাখছেন এবং এটি ডাউনলোড করলে আপনিও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবেন_ এমন কিছু বাক্য লিখে রাখছেন। তবে সাবধান, ওই জিপ ফোল্ডারে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে স্প্যাম। এর ফলে জিপ ফোল্ডারটি কারও কম্পিউটারে ডাউনলোড করে খোলার জন্য ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে স্প্যামটি উইন্ডোজের মূল অপারেটিং ফাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ফাইল, ফোল্ডার এবং অনলাইনে যত সাইটে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, তার সবকিছু হ্যাকারের দৃষ্টিসীমার ভেতর পাঠিয়ে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.