মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ড-খুনের দায় স্বীকার-গ্রেপ্তার ছয়জনের জবানবন্দি ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ by পারভেজ খান ও সুমন বর্মণ

রসিংদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে ছয়জনই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। কেউ অংশ নিয়েছে সরাসরি কিলিং মিশনে, আবার কেউ ছিল পরিকল্পনায়। পুলিশ সবার জবানবন্দিই ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করছে। লিপিবদ্ধ হচ্ছে কার্যবিধির ১৬১ ধারা মতে জবানবন্দি।


এদের জবানবন্দিতেই বের হয়ে এসেছে কারা জড়িত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে, আর কিইবা ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
জিজ্ঞাসাবাদ ও লিপিবদ্ধ জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বৈঠক করে লোকমানবিরোধীদের এক করার পর একটি বিশেষ পরিকল্পনা আর নকশা বানিয়ে সংঘটিত হয় হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কমপক্ষে ২০ জন সম্পৃক্ত। নেপথ্যে থেকে হত্যাকাণ্ডের পেছনের সব কলকাঠিই চালিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু আর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম।
লোকমান হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি। হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জন। অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে একজনকে। আগে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হাজি সেলিম, আশরাফ আলী সরকার ও কাজী টিপ্পন এখনো পুলিশ রিমান্ডে। গত শুক্রবার রাতে ও শনিবারে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ফারুক, মাহফুজ ও শাহিন নামে তিনজন। পরে শাহিনের দেওয়া তথ্য মতে গ্রেপ্তার করা হয় নাসির নামে আরেকজনকে। গতকাল রবিবার বিকেলে এই চারজনকে নরসিংদীর আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অভিযান চলাকালে পুলিশ আরো তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। গতকাল তাদেরও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া আসামি আবদুল মতিন সরকার ও সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত করেননি। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। অন্য কেউ গ্রেপ্তার করে থাকলে থাকতে পারে।
গতকাল বিকেল ৩টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে নরসিংদী জেলা আদালতে জেলা ও দায়রা জজ নিতাই চন্দ্র সাহার এজলাসে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। আদালতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ফারুক, মাহফুজ ও শাহিনকে। আবার অস্ত্র মামলায় নাসিরের পাশাপাশি শাহিন ও মাহফুজকেও গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ফারুককে শুধু হত্যা মামলায়ই রাখা হয়েছে, অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। নাসিরের বাড়ি থেকেই আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়। নাসির পুলিশকে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর শাহিন তার কাছে অস্ত্রটি রেখে যায়।
পুলিশ জানায়, ফারুক হোসেনের বাবার নাম হাজি মোশারফ হোসেন। তার বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার দুর্গাপুর গ্রামে। মাহফুজ হোসেন ওরফে তওয়াফ ওরফে সবুজের বাবার নাম রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া। বাড়ি নরসিংদীর দক্ষিণ পুরানপাড়ায়। শাহিনের বাড়ি নরসিংদীর ঘোরাদিয়ায়। এলাকায় সে রওশন ডাকাত নামে পরিচিত। তার বাবার নাম রওশন। নাসিরের বাবার নাম আবদুল মান্নান। তার বাড়িও নরসিংদীর ঘোরাদিয়ায়।
৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তারা হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পিএ রোডের ইরফানুল হক রানা (পিতা মাহবুবুল হক), খুলনার দৌলতপুর থানার পাবনা গ্রামের খান মোহাম্মদ আহমদ উল্লাহ (পিতা খান মোহাম্মদ রুহুল আমিন) এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার রাতল গ্রামের কামরুল (বাবার নাম আক্রাম হোসেন)। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও হত্যাকাণ্ডে এদের সম্পৃক্ততা আছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, এ মামলার প্রাথমিক তদন্তের কাজ প্রায় সিংহ ভাগ শেষ হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত এবং কেন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে সে ব্যাপারেও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া গেছে। বলা চলে, এই স্বল্প সময়ে পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এখন চলছে গ্রেপ্তার আর জিজ্ঞাসাবাদের পালা। জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক নতুন তথ্য বের হয়ে এসেছে এবং আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেককে পুলিশ হেফাজতে এনেও জ্ঞিাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য প্রচারমাধ্যমে আসেনি। ওপর মহল থেকে নির্দেশ রয়েছে কাউকে যেন অহেতুক গ্রেপ্তার না দেখানো হয়। তারা এখনো কয়েকজনকে তাদের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি আবদুল মতিন সরকার এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু আছে কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'নাম বলা যাবে না। শুধু এজাহারে নাম থাকলেই হবে না, আমরা নিজেদের তদন্তে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই কাউকে গ্রেপ্তার দেখাব। অহেতুক গ্রেপ্তার দেখালে নিরীহ লোকদের কেবল হয়রানি করাই নয়, মামলার বিচারেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।'
কর্মকর্তা আরো জানান, গতকাল হত্যা মামলায় যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের একজন সরাসরি গুলি করে বলে জানা গেছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টা আরো নিশ্চিতভাবে জানা যাবে। এজাহারে চারজন গুলি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহার হচ্ছে প্রাথমিক অভিযোগ এবং তা প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এসব খুঁটিনাটি বিষয় ধরে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে। এ কারণে তাঁরা অনেক সতর্কভাবে এগোচ্ছেন। তদন্তে যেটা আসবে সেটাই আসল। ওই দিন কয়টা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আজ (গতকাল) ঢাকার সিআইডি থেকে ব্যালেস্টিক রিপোর্ট আসার কথা ছিল। ব্যস্ততার কারণে সেটা এখনো আনা সম্ভব হয়নি।
বাদী সন্তুষ্ট হলেও এখনো সন্দিহান
মামলার বাদী এবং নিহত মেয়রের ছোট ভাই কামরুজ্জামান গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছে হত্যা মামলার ৯০ শতাংশ অগ্রগতি শেষ। এখন শুধু অপেক্ষা আর যাচাই-বাছাইসহ গ্রেপ্তারের পালা। তিনি মনে করেন, এই মামলায় যাদের এজাহারে আসামি করা হয়েছে তাদের সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পুলিশ যদি এর ভেতর থেকে কাউকে বাদ দিতে চায় তবে তার পেছনে যথাযথ যুক্তি থাকতে হবে। পুলিশ চাইলেই কাউকে বাদ দিতে পারবে না। তিনি চান এই মামলায় প্রকৃত খুনিরা ধরা পড়ুক।
কামরুজ্জামান আরো বলেন, পুলিশের তদন্তের অগ্রগতিতে তিনি সন্তুষ্ট। তবে তিনি এখনো মনে করেন, মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজু যতক্ষণ তাঁর পদে বহাল থাকবেন, ততক্ষণ তিনি সুবিচার পাবেন না। মন্ত্রী তাঁর প্রভাব খাটাবেনই। এ কারণেই আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাঁর একটাই প্রত্যাশা, মন্ত্রীকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
নিহত লোকমানের স্ত্রী নুশরাত বুবলী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশ ভাড়াটে খুনি আর চুনোপুঁটি সন্ত্রাসীদের ধরছে। অথচ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নায়করা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। তিনি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার দাবি করে বলেন, মন্ত্রীর প্রভাবের কারণেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
নিহত মেয়রের পরিবারের আরেক সদস্য বলেন, 'হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, তারা লোকমানের বন্ধুমহল আর তার রাজনৈতিক প্রতিবেশী। নিজ দলের লোকও সম্পৃক্ত। মন্ত্রীর ভাই আর মন্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য তাঁর দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী এখনো জোরালো ভূমিকা রাখছেন।'
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, এ হত্যাকাণ্ড কোনো রাজনৈতিক ঘটনা নয়। লোকমানের শত্রুরাই তাঁকে খুন করেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। এই মামলাও হয়েছে পারিবারিকভাবে। মামলা করার আগে তাঁদের কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। মন্ত্রী ও বাচ্চু দুজনই ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত। তাঁরা কোনোভাবেই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। জেলা আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েও বাচ্চুর সঙ্গে লোকমানের কোনো বিরোধ ছিল না। মন্ত্রী ও বাচ্চুকে অহেতুক এ ঘটনায় জড়ানো হচ্ছে।
প্রাণনাশের আশঙ্কা বাদীর : প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন নিহত মেয়র লোকমানের ছোট ভাই এবং মামলার বাদী কামরুজ্জামান। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই লোকমানের বাসভবনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গতকাল এ আশঙ্কা প্রকাশের পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে শহরের বাসাইল এলাকায় মেয়র লোকমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফটকে বসে আছেন ছয় পুলিশ সদস্য। তাঁদের কাছে পরিচয় দিয়েই বাড়ির আঙিনায় ঢুকতে হয়। বাসার সামনে খোলা মাঠে বসে আছেন লোকমানের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী। জানা গেল, কামরুজ্জামান পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেছেন। তিন তলা বাড়িটির নিচতলার প্রবেশ গেটে বাইরে থেকে তালা দেওয়া। চাবি নিয়ে গেছেন কামরুজ্জামান। নুশরাত বুবলী দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিছুক্ষণ পর কামরুজ্জামান ফিরলেন। তাঁর সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত হাওলাদার। তিনি সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের আরো সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে বললেন, 'কাউকে সন্দহভাজন মনে হলেই তাকে আটক করে দ্রুত ওপর মহলে খবর দেবেন। কেউ জোর করে ঢোকার চেষ্টা করলে বা কারো অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পারলে তাকে গ্রেপ্তার করে হাতকড়া লাগাবেন। খাবারের জন্যও কেউ বাইরে যাবেন না। এখানেই খাবার সরবরাহ করা হবে। সাবধান থাকবেন, কোনোভাবে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে।' কিভাবে সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে হবে, এর আরো অনেক কৌশল তিনি তাঁদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
আশঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, 'আশঙ্কা হবে কেন? আমি নিশ্চিত হয়েই কথাটা বলছি। ওরা আমাকেও খুন করার পরিকল্পনা করেছে। আমি আগামভাবে এ খবর পেয়ে গেছি। লোকমানের অবর্তমানে যাঁরা আগামীতে মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদেরই কেউ কেউ এ পরিকল্পনা করছেন। তাঁদের ধারণা, আমি নির্বাচন করব।' তিনি বলেন, 'লোকমানের ঘাতকরাই আমাকে খুন করতে চায়। লোকমান ছিলেন সহজ-সরল। তিনি সবাইকে বেশি বিশ্বাস করতেন। আপন ভাবতেন। পুলিশ আর আপনজনদের পরামর্শে তিনি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরলেও কখনো ভাবতেও পারেননি যে তাঁকে নরসিংদীর কেউ খুন করতে পারে। তাই তিনি সাবধান হননি। কিন্তু আমাকে খুন করাটা এতটা সহজ নয়। কারণ আমি আগেই জেনে ফেলেছি কারা আমাকে খুন করতে চাইছে।'
দুই আসামির পরিবারের সংবাদ সম্মেলন : এদিকে গতকাল এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আবদুল মতিন সরকার ও তাঁর ছোট ভাই আশরাফ হোসেন সরকারের (গ্রেপ্তারকৃত) পরিবারের পক্ষ থেকে শহরের দত্তপাড়ায় তাঁদের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পরিবারের পক্ষে এ দুই আসামির আরেক ভাই মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার বলেন, সংবাদমাধ্যমে তাঁর দুই ভাইকে জড়িয়ে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। মামলায়ও তাঁদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। নিহত লোকমানের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের কোনো ধরনের বিরোধ ছিল না, বরং মেয়র ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ এবং পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। লোকমানের অনেক উন্নয়নমূলক কাজে আবদুল মতিন সরকার সহযোগিতা করেছেন। মতিন সরকার এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং পর পর দুইবার তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
প্রশ্নের জবাবে মাওলানা শওকত জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আবদুল মতিন সরকারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ। পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ নেই। তিনি কোথায় আছেন, সেটা তাঁরাও জানেন না। প্রচারমাধ্যমে জেনেছেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সে ব্যাপারেও তাঁরা নিশ্চিত নন। আর এই নিখোঁজ থাকার ব্যাপারে থানায়ও তাঁরা কোনো সাধারণ ডায়েরি করেননি বলে তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.