এমপিওভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবশেষে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে-কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার তারিখ ৯ ডিসেম্বর, প্রার্থী পাঁচ লাখ by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

বশেষে এমপিওভুক্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আগামী ৯ ডিসেম্বর দেশব্যাপী একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক বছর আট মাস আগে এই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হলেও নানা জটিলতায় এত দিনেও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এই প্রথমবারের মতো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে।


প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবেন প্রায় পাঁচ লাখ প্রার্থী। এসব প্রার্থী এক বছর আট মাস আগে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (এমপিওভুক্ত) সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও আদালতে রিট আবেদনের কারণে তা পিছিয়ে যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে আদালতে রিট আবেদনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জয়লাভ করে। এর পরই পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। আগামী ৯ ডিসেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এসব (বেসরকারি) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগে শিক্ষক নিয়োগ করা হতো পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে। এতে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আসতে থাকে মন্ত্রণালয়ে। এসব অভিযোগ বন্ধ করতে ২০১০ সালের শুরুর দিকে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা করে। সে অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে আগের মতো কোনো স্কুল নিজেদের ইচ্ছামতো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) ফারুক জলিল কালের কণ্ঠকে জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আদালতে রিট আবেদন করেন। আদালত 'নতুন নীতিমালায় নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না' মর্মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকে কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন। মূলত এসব কারণে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। তিনি আরো জানান, এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পাঁচ লাখের কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। আর সারা দেশে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য-সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট ৬৪টি নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়। জেলা কমিটি আবেদন বাছাইয়ের পর উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। কমিটি পরীক্ষার ফল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাবে। অধিদপ্তর নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে, যা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকবে। পদ শূন্য হওয়া সাপেক্ষে ওই তালিকা থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। এর বাইরে থেকে নিয়োগ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হবেন না।
নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৮০ এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা ২০, গণিত ২০, ইংরেজি ২০ ও সাধারণ জ্ঞানের জন্য ২০ নম্বর থাকবে। ৮০ নম্বরের পরীক্ষায় মোট প্রশ্ন থাকবে ৮০টি। ৮০ মিনিটে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার পাস নম্বর থাকবে ৪০। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যাবে।

No comments

Powered by Blogger.