হারার আগেই হেরে বসেছিল বাংলাদেশ by কামরুল হাসান

ছোটবেলায় স্কুলের পরীক্ষায় 'আমার জীবনের লক্ষ্য' রচনাটি লেখার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা এই বাক্যটির সঙ্গে নিশ্চয়ই পরিচিত। আমাদের সালমা খাতুন ও শুকতারা রহমানরাও হয়তো লিখেছেন এবং তাঁদের জীবনেও নিশ্চয়ই বড়সড় কোনো লক্ষ্য আছে।কিন্তু মহিলা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোধহয় সে রকম কোনো লক্ষ্য ছিল না।


আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে দারুণভাবে হারানো 'সালমা অ্যান্ড কোং' গতকাল ছিলেন একেবারেই লক্ষ্যহীন-উদ্দেশ্যহীন! হ্যাঁ, কাগজে-কলমে ২১৮ রানের একটা লক্ষ্য ছিল সামনে কিন্তু বাংলাদেশ দল ব্যাট করতে নামার পর একবারের জন্যও মনে হয়নি তারা সেই রানটা তাড়া করছে। বরং ব্যাপারটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগে থেকেই সেরা মেনে হারার আগে হেরে বসে থাকার মতো! জেতার কোনো তাড়না নেই, যেন কোনোরকমে ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারলেই সম্মান রক্ষা হবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৪৭.৪ ওভারে ১৩৭ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ায় ওই সান্ত্বনাও জোটেনি। মেনে নিতে হয়েছে ৮০ রানের হার!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে কিন্তু একেবারে খারাপ করেননি বাংলাদেশি বোলাররা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে যে দলটা ২৭৬ রানের বড় স্কোর করেছিল তাদের ২১৭ রানে আটকে রাখার কৃতিত্ব কিছুটা হলেও দিতেই হবে রোমানা-খাদিজাদের। টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্যটা এনে দিয়েছিলেন জাহানারা আলম। তাঁকে কাট করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে রেখে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ওপেনার জুলিয়ানা নেরো (৬)। শুকতারা রহমানের নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচটার পর দ্বিতীয় উইকেটের জন্য অপেক্ষাটাকে বেশ দীর্ঘায়িত করেছেন স্টেফানি টেইলর ও শ্যানেল ডালে। দুজনের ৮৪ রানের জুটিতে শুধু প্রাথমিক ধাক্কাই সামাল দেয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, মজবুত ভিতও গড়ে তুলেছে। তবে টেইলর (৬২) আর ১৯ বলে ২ ছক্কায় ১৭ রান করা ডিন্দ্রা ডটিনকে পরপর ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ম্যাচে ফেরান লেগস্পিনার রোমানা আহমেদ। ৬১ রান করে ডালে সরাসরি বোল্ড হন সালমার বলে। তারপর আর বড় স্কোর করতে পারেননি কোনো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটার। অবশ্য শেষদিকে উইকেটগুলো পড়েছে রান বাড়াতে গিয়েই, যার দুটো নিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের নায়িকা খাদিজাতুল কুবরা। এ আসরে এখন পর্যন্ত ১২ উইকেট পেয়েছেন এ অফস্পিনার।
২১৭ রান তাড়া করে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতবেন এতটা আশা হয়তো করেননি আগের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ সমর্থকরাও। কিন্তু জয়ের যে চেষ্টা, সেটাই ছিল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। সত্যটা অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা। তারা নাকি শুরু থেকেই চেয়েছিলেন ৫০ ওভার ব্যাট করে ১৬০/১৭০-এর কাছাকাছি স্কোর করতে। সেই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়নি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকায় একসময় ১৩৭ রানেই থেমে যেতে হয় তাদের। বল হাতে ২ উইকেট নেওয়া রোমানা ব্যাটিংয়ে নেমেও করেছেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর, অপরাজিত ২৮। দ্বিতীয় সর্বোচ্চটা অধিনায়ক সালমা খাতুনের (২১)। বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটারই ২ পেরোতে পারেননি। কোচ মমতা মাবেন অবশ্য বলেছেন অতিরিক্ত ভালো বল করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররা, এ কারণেই নাকি হারের ব্যবধানটা এত বড় হয়েছে। নইলে নাকি আরেকটু বেশি হতো বাংলাদেশের রান! হ্যাঁ, ভালো বল করেছেন, কিন্তু সেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররাই তো আবার ২১টি অতিরিক্ত রানও দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
সেটা না হলে যে হারের ব্যবধানটা আরো বড় হতো!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫০ ওভারে ২১৭/৮ (টেইলর ৬২, ডালে ৬১, কুপার ২৬*; রোমানা ২/৩৭, খাদিজা ২/৩৯)
বাংলাদেশ : ৪৭.৪ ওভারে অল আউট ১৩৭ (রোমানা ২৮*, সালমা ২৩; কুইন্টাইন ৩/২০, সেলমান ২/১৬)
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮০ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : শ্যানেল ডালে

No comments

Powered by Blogger.